মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বামী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় জয়ের এক দিন পর, মেলানিয়া ট্রাম্প জাতির উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া তার ওই বার্তায় তিনি বলেন, “অধিকাংশ আমেরিকান আমাদের ওপর এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। মেলানিয়া বলেন, তিনি এবং তাঁর স্বামী যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন এবং দেশের স্বার্থে মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার জন্য আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানান।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পর মেলানিয়া ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তা থেকে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় যে, সাবেক ফার্স্ট লেডি তাঁর নতুন ভূমিকা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে পালন করবেন। ২০১৬ সালে যখন ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন মেলানিয়া হোয়াইট হাউসে অবস্থান করতেন না এবং নিউইয়র্কে তাঁর ছেলের সাথে থাকতেন। তবে প্রথম মেয়াদে তিনি অনেকটা বাক্সংযম দেখিয়েছিলেন এবং তাঁর পূর্বসূরিদের মতো কাজ করেছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দফায় মেলানিয়া ট্রাম্প সম্ভবত আরো পরিকল্পিতভাবে মার্কিন ফার্স্ট লেডির দায়িত্ব পালন করবেন। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ অধ্যয়নের সহযোগী অধ্যাপক ট্যামি ভিজিল, যিনি মিশেল ওবামা ও মেলানিয়া ট্রাম্পের ওপর একটি বই লিখেছেন, বলেন, “মেলানিয়া আধুনিক ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে অনন্য। তিনি যা করতে চান, সেটি নিজের মতো করেই করেন, তবে মূল প্রত্যাশাগুলো ঠিকই পূর্ণ করেন।
মেলানিয়ার রাজনীতিতে অংশ নেয়ার ধরণ কিছুটা রহস্যময়। সাবেক ফ্যাশন মডেল মেলানিয়া কম প্রকাশ্যে আসতে পছন্দ করেন এবং হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন সময়ে প্রচারাভিযানে তেমন কিছু বক্তব্য দেননি। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক জীবন প্রায়ই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে। তবে মেলানিয়া, বিশেষ করে তাঁর স্বামী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার অভিযানে একাধিকবার উপস্থিত ছিলেন। তাঁর একান্ত উপস্থিতি যেমন ছিল, তেমনই ছিলেন না অনেক সময়।
মেলানিয়া ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল, তিনি নিজের ভূমিকা নিয়ে কখনোই অন্যের ওপর চাপ দেননি। ২০২২ সালের শেষের দিকে, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন মেলানিয়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি সেই সময়ও কোনো বক্তব্য দেননি, যা ছিল তার পক্ষে একটি রীতিবহির্ভূত কাজ। তবে তিনি মুদ্রিত বক্তব্যে কখনো কখনো সাবধানী ভাষায় মন্তব্য করেন, যা তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ছিল।
মেলানিয়ার এই নিরবতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, মেলানিয়া কোথায়? তবে তাকে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে একটি উজ্জ্বল লাল পোশাক পরে যোগ দেন, কিন্তু বক্তব্য দেননি, যা আবারও তাঁর বিশেষ স্টাইলের পরিচায়ক।
মেলানিয়া যখন কথাবার্তা বলেন, তার প্রতিটি শব্দ সাবধানে নির্বাচিত হয় এবং সেগুলি তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি বা অবস্থানকে সুক্ষভাবে প্রকাশ করে। ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচার অভিযানে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ট্রাম্পের সমাবেশে মেলানিয়ার বক্তব্য ছিল ছোট, তবে তা পুরোপুরি ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। ট্রাম্পকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার ঘটনায়ও মেলানিয়া ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং অপরাধীকে ‘দানব’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
ফক্স নিউজকে দেয়া বিরল সাক্ষাৎকারে মেলানিয়া ট্রাম্প ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আক্রমণ করা গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দোষারোপ করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে, তারা এই আক্রমণগুলোর জন্য উৎসাহ জুগিয়েছে।
বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ট্যামি ভিজিল, যিনি মেলানিয়া ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক ভূমিকা বিশ্লেষণ করেছেন, বলেন, “মেলানিয়া এবারের দফায় আরও পরিকল্পিতভাবে কাজ করবেন। তিনি জনসাধারণের মধ্যে কতটা সক্রিয় হতে চান, সে বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।