আগত সকলের শুরুটা হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার ঝালমুড়ি আর পিঁয়াজু দিয়ে। সঞ্চিতা খান এশার তত্ত্বাবধানে ঝাল আর পেঁয়াজের স্বাদ নিতে নিতেই সবাই ছুটতে থাকেন রাবেয়া বাশারের চা, পান, বিড়ির পশরার দিকে। এ পর্যায়ে কেউ বিড়ির ধূয়া না ওড়ালেও চায়ের কাপে ধূয়া তুলেছেন সকলে। যেখানে বাঙালি থাকবে, আড্ডা হবে, অথচ দেশ নিয়ে কথা হবে না; তাই কি হয়? একেবারেই না। ক্ষণিকের জন্য অনেকেই তাই মেতেছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা আলোচনায়ও।
বৃক্ষশোভিত ছায়া সুনিবিড় পার্কে সূর্য যখন মাথার ঠিক উপরে, ক্ষুধার পারদও তখন চড়তে থাকে উর্দ্ধপানে। সোহরাব হোসেন, আরশাদুজ্জামান সুমন, আব্দুল জলিল, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, অসিম সিদ্দিক ও ডা. করিমের তত্ত্বাবধানে রান্না করা খাবারের ঘ্রাণ ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয় বহুগুনে।
মাইকে খাবার পরিবেশনের ঘোষণা আসতেই সমবেত সকলে দাঁড়িয়ে যান লাইনে। সেলফ্ সার্ভিসের পরিবর্তে সাইফ আর আসিফের পরিবেশনায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আগতদের সকলের হাতে পৌঁছে যায় বনভোজনের প্রধানতম আকর্ষণ মজার খাবার। সুবিশাল জলাধারের কোলঘেঁষে পাতাঝড়া বনে শুরু হয় ভোজনের উৎসব। এ উৎসবকে আরো উপভোগ্য করে তোলে নানা রঙের ও স্বাদের মিষ্টি, ডেজার্ট।
বনভোজনের বিশেষ আকর্ষণ লুঙ্গি ড্যান্স। ছবি-সঞ্চিতা খান।
এর পরপরই শুরু হয় শিশু, কিশোর, নারী ও পুরুষদের নানা প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা। খেলাধূলা পর্বে ছিলো দৌঁড়, ভেতর-বাহির, পিলো পাস, বল ইন দ্যা বাস্কেট। এরই এক পর্যায়ে গানের তালে তালে পুরুষদের লুঙ্গি ড্যান্স যেন নাচিয়ে তোলে সকলকেই। সমবেত সবাই হাততালি দিয়ে ও মুখে নানা শব্দ তুলে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ যোগান।
সব আয়োজন যখন শেষের পথে তখন অতি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কম্যুনিটির বয়োজ্যেষ্ঠ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. শফিকুর রহমান এই আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের পাশাপাশি প্রধান দুই কুশিলব ড. জিয়া হাসান ও শাহানা হাসানকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। ড. রহমান বলেন, “এ পর্যন্ত ছোট-বড় অনেক শহরে অনেক কম্যুনিটি দেখেছি। অনেক জায়গায় অনেক বিভাজন দেখা যায়। কিন্তু সাউথ ক্যারোলাইনার ছোট এই শহরে বাংলাদেশীদের দীর্ঘদিন একটি সংগঠনে সব কিছুতে সকলের সমান অংশগ্রহণ সত্যি বিরল উদাহরণ।” তিনি সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো বৈচিত্রময় আয়োজনের প্রত্যাশা করেন। বরাবরের মতো এবারেও আনন্দমুহূর্তকে ধরে রাখতে তোলা হয় সম্মিলিত ছবি।
পুরো বনভোজনে আনন্দ আয়োজনের নানা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আব্দুল হাকিম রাহুল, রাহাত খান, সোহরাব হোসেন, ডা. বিশ্বজিত বনিক, এহতেশাম মিয়া, সঞ্চিতা খানসহ আরো অনেকে।
দেখতে দেখতে সময় হয়ে যায় বাড়ি ফেরার। যাবার আগে অনেককে আরেকবার ভির করতে দেখা যায় চা-পানের আয়োজন ঘিরে। কেউ কেউ অবশ্য ব্যস্ত থেকেছেন এবারের আয়োজনে শেষবারের মতো নিজেদের ছবিটি মুঠো ফোনে বন্দি করতে।
ফল ফেস্টিভ্যাল: গত ২৬ অক্টোবর শনিবার কলাম্বিয়ার মসজিদ নুরউল হুদার খোলা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় ফল ফেস্টিভ্যাল। শহরে অন্যান্য কম্যুনিটির নানা মেলা, ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হলেও বাঙালিদের এমন আয়োজন খুব বেশি চোখে পড়ে না। ফলে নতুন এ আয়োজন এখানকার বাঙালিদের মধ্যে বেশ উৎসাহের উদ্রেক করেছে। হেমন্তের পরন্ত বিকেলে তাই অনেকেই এসেছিলেন এই ফল ফ্যাস্টিভেলে।
অনুষ্ঠানে ফেস পেইন্টিং, মেহেদী পড়া, বাচ্চাদের খেলাধুলা ও ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি ছিলো খাবার এবং কাপড়ের স্টল। এসব স্টলে বাহারী বাঙালি খাবার, বেকারীর পাশাপাশি মেয়েদের ধর্মীয় ও নানারকম পোশাকের সমারোহ ঘটে। আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা আশা পোষণ করেন, ভবিষ্যতে এ আয়োজন আরো বড় ও ব্যাপক হবে। ফলে সুযোগ হবে আনন্দ করার পাশাপাশি মেলার মেজাজে খাওয়া-দাওয়া ও কেনাকাটার মধ্য দিয়ে আরো একটি সুন্দর দিন উপভোগের।