Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

মার্কিন নির্বাচনে উড়ছে ডলার

কমলার তহবিল সংগ্রহ ৯০ কোটি ৬০ লাখ ডলার * ট্রাম্পের সংগ্রহ প্রায় ৪০ শতাংশ কম
মার্কিন নির্বাচনে উড়ছে ডলার
নির্বাচনের মাঠে টাকা ওড়ানো কথাটা শুধু বাংলাদেশেই চাউর আছে, এমন নয়। বিশ্বের নানা দেশে নির্বাচনের মাঠ দখলে নিতে নানা প্ল্যাটফর্মে দেদার অর্থ ঢালার নজির আছে অহরহ। তবে বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে যেন সবার উপরে। নির্বাচনের কাউন্টডাউনের শুরু থেকেই প্রার্থীদের পক্ষে তহবিল সংগ্রহের তীব্র প্রতিযোগিতা বিশ্ব মিডিয়ার খবরের উঠে আসে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থায় ওপেন সিক্রেট। কারণ দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে বিপুল অর্থ খরচ করতে হয়। সেটি জোগাড় করতে প্রার্থীরা বেশ কিছু বিকল্প পদ্ধতিও বেছে নেন। যেমন প্রার্থীরা নিজস্ব অর্থ দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেন অথবা ব্যক্তিগত দাতাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। তহবিলের আরেকটি উৎস রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটি গ্রুপ থেকে আসে, যা প্যাক (পিএসি) বা সুপারপ্যাক নামে বেশি পরিচিত। তা ছাড়া সরকারি তহবিল থেকেও অর্থ পেতে পারেন প্রার্থীরা। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যয়ের হিসাবের কঠোর সীমাবদ্ধতা মেনে চলতে হয়। ফলে গত কয়েকটি নির্বাচনে মূলধারার প্রার্থীরা এই বিকল্পটি বরাবরই এড়িয়ে গেছেন। এবার দেখা যাক আসন্ন ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন প্রভাবশালী নারী প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং নানা কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত ডোনাল্ড ট্রাম্প কে কত টাকার অর্থ তহবিল সংগ্রহ করেছেন।

কমলা হ্যারিস : মার্কিন নির্বাচনে অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয়ের তথ্য সংগ্রহ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওপেনসিক্রেটস। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুসারে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯০ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ হাজার কোটি) সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে জো বাইডেনের প্রচারের জন্য দেওয়া তহবিলও রয়েছে। অবশ্য জুলাই মাসে বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বড় আকারে তহবিল সংগ্রহ শুরু করেন কমলা হ্যারিস। এর বাইরে কিছু গ্রুপ হ্যারিসকে সমর্থন করে গত ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারের (চার হাজার কোটি টাকা) বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১২৫ কোটি ডলার (প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা) কমলা হ্যারিসের প্রচারাভিযানের তহবিলে যুক্ত হয়েছে। মোট সংগ্রহের ৫৬ শতাংশই এসেছে বড় বড় ডোনেশন থেকে। বাকি ৪৪ শতাংশ সংগ্রহ হয়েছে ব্যক্তিগত পর্যায়ের ছোট ছোট অবদানের মাধ্যমে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প : রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প হ্যারিসের চেয়ে অনেক কম অর্থ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তার আনুষ্ঠানিক প্রচারণা দল ৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার (প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা) সংগ্রহ করেছে। হ্যারিসের চেয়ে এই পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ কম। ওপেনসিক্রেটসের তথ্য অনুসারে, বাইরের গ্রুপগুলো আরও ৫৭ কোটি ২০ লাখ ডলার (৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) ট্রাম্পের তহবিলে যোগ করেছে। এর ফলে ট্রাম্পের মোট তহবিল দাঁড়িয়েছে ৯৪ কোটি ডলারে (১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা)। ট্রাম্পের তহবিলের ৬৮ শতাংশেরও বেশি অবদান এসেছে অতিধনীদের সমর্থন থেকে।

তহবিলে কারা অর্থ প্রদান করতে পারে?
প্রার্থীদের তহবিলে কারা অর্থ প্রদান করতে পারবেন, কারা পারবেন না- এ নিয়ে ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের কঠোর নিয়ম রয়েছে। কেবল মার্কিন নাগরিক বা গ্রিনকার্ডধারীরাই পার্টি বা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর তহবিলে অর্থ প্রদান করতে পারেন। এর ফলে বিদেশি নাগরিকেরা কোনোভাবেই নির্বাচনী তহবিলে অর্থ দিতে পারবেন না। অর্থ প্রদানের সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি ঠিকাদার, করপোরেশন, জাতীয় ব্যাংক, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং অলাভজনক সংস্থাগুলো ফেডারেল নির্বাচনে প্রার্থী বা দলগুলোর তহবিলে সরাসরি অবদান রাখতে পারবে না।

প্যাক ও সুপার প্যাক কী?
পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি (পিএসি) দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নির্বাচন-ব্যবস্থার একটি অংশ। এই লবিং গ্রুপগুলো প্রার্থীদের পক্ষে অর্থ ও ভোট সংগ্রহে কাজ করে। তাদের অনুদান সীমিত ও দাতাদের তালিকা প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ২০১০ সালের প্রচারাভিযানে অর্থায়নের নিয়মকানুনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সে বছর বাকস্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে করপোরেশন ও ইউনিয়নগুলোর ক্ষেত্রে প্রচারণায় অর্থ প্রদানের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এই সিদ্ধান্তের পর করপোরেশন ও ইউনিয়নগুলো সমন্বিতভাবে বেশ কয়েকটি সুপার প্যাকের জন্ম দিয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলো ব্যক্তি, ইউনিয়ন বা করপোরেশন থেকে সীমাহীন সংগ্রহ করতে পারে এবং অনুদান দেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশেরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্যাক ও সুপার প্যাকগুলো সরাসরি কোনো প্রার্থীকে অনুদান দিতে পারে না এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে হয়। তবে কিছু নিয়মকানুন এ ক্ষেত্রেও শিথিল করা হয়েছে।

প্রচারাভিযানে বড় অবদানের সমস্যা
প্রচারাভিযানে এই অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা অনেক ভোটারের মনে এমন ধারণা তৈরি করে যে অর্থদানের ফলে রাজনীতিবিদদের কাছে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এর ফলে দুর্নীতি বা গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা নষ্ট হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস ও জর্জ সোরোসের মতো ধনী মার্কিনিরা হ্যারিসকে সমর্থনকারী গ্রুপগুলোতে লাখ লাখ ডলার দান করেছেন। কেউ কেউ নিজস্ব সুপার প্যাক প্রতিষ্ঠা করেছেন। 
ফিন্যানশিয়াল টাইমসের তথ্য অনুসারে, বিলিয়নিয়ারদের আরেকটি গ্রুপ ট্রাম্পপন্থী সুপার প্যাকগুলোতে সম্মিলিতভাবে ৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার (প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা) অনুদান দিয়েছে। এই গ্রুপে রয়েছেন ইলন মাস্ক, টিমোথি মেলন, মিরিয়াম অ্যাডেলসন ও রিচার্ড উইহেলিনের মতো অতিধনীরা। এই বিশাল অর্থ অনুদান দেওয়ার মানে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কি না, সেটি একটি জটিল প্রশ্ন।

প্রচারাভিযানে কীভাবে অর্থ ব্যয় হয়?
কোটি কোটি ডলার খরচ হাতে থাকায় সেটা কীভাবে এবং কোন খাতে ব্যয় করা হবে, সে ব্যাপারে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় প্রার্থীর প্রচার দল ও প্রেশার গ্রুপকে। নির্বাচন যেহেতু খুব কাছাকাছি চলে এসেছে এবং বিজয় অনেকটাই নির্ভর করবে সুইং স্টেটগুলোর মুষ্টিমেয় ভোটের ওপর, ফলে এখন প্রচার দলগুলো সেখানেই তাদের বেশির ভাগ অর্থ ব্যয় করছে। এই অঙ্গরাজ্যগুলো রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে ঢেকে যাচ্ছে। নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট টানতে প্রচারকারীরা ভোটারদের কল দিচ্ছেন, কোথাও কোথাও ভোট দিতে রাজি করাতে প্রচার দলের সদস্যরা সরাসরি ভোটারদের বাসায় গিয়ে হাজির হচ্ছেন।
২০২০ সালের নির্বাচন থেকে নির্বাচনী ব্যয়ের ব্যাপারে একটি ধারণা পাওয়া যায়। ওপেনসিক্রেটসের দেওয়া তথ্য অনুসারে, চার বছর আগে প্রায় ৫৬ শতাংশ ব্যয় ছিল গণমাধ্যমে, ১০ শতাংশ তহবিল সংগ্রহে এবং প্রায় ১৭ শতাংশ প্রচারে এবং প্রচার দলের বেতনে। বাকি অর্থের ৬ শতাংশ প্রশাসনে, ৪ শতাংশ কৌশল নির্ধারণ এবং গবেষণায় ব্যয় হয়েছিল। অবশিষ্ট ব্যয়কে ‘শ্রেণিবিন্যাসযোগ্য নয়’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালের প্রচারাভিযানের ব্যয়ও একই ধরন অনুসরণ করবে।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স