বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন স্বচ্ছ হবে না এমন আশঙ্কা সেলিম-আলী প্যানেলের। আর সেই হিসাবে পরিকল্পনকারী তাদের পরিল্পনা সফল করার জন্যই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সেলিম-আলী প্যানেলের ৩০৭ ভোট বাদ দিয়েছে। আর তাদেরকে বাদ দিয়েই নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটার তালিকা দেয়া হয়। সেই ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন হচ্ছে। ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন না করেও কোন উপায় ছিল না। কারণ নির্বাচন না করলে সেলিম-আলী প্যানেলকে বাদ দিয়েই নির্বাচন হতো। আর জয়ী হতো অপর প্যানেল। ফলে এই পরিকল্পনা যাতে বাস্তবায়ন না হয় সেই জন্য অন্তত নির্বাচনে থেকে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করেন সেলিম-আলী প্যানেলের প্রার্থীরা।
সেলিম-আলী প্যানেলের পক্ষ থেকে গত ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার নবান্ন পার্টি হলে সোসাইটির নির্বাচন বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন সেলিম-আলী প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শাহনেওয়াজ, সমন্বয়কারী রুহুল আমিন হাওলাদার, সভাপতি প্রার্থী আতাউর রহমান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আলী। অনুষ্ঠানে তারা নির্বাচনের ভোটার তালিকা ও পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সোসাইটির সাবেক এ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারী সিরাজউদ্দিন সোহাগ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এর পাশাপাশি ইশহেতার পাঠ করেন মোহাম্মদ আলী। অনুষ্ঠানে সেলিম-আলী প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ, প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানান। বলেন, সোসাইটির নির্বাচন আগামী ২৭ অক্টোবর রোববার ২০২৪। আসন্ন এই নির্বাচন ঘিরে আমরা কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের মাধ্যমে কমিউনিটিকে জানাতেই আজকের সাংবাদ সম্মেলন।
সম্পাদক ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে সিরাজ উদ্দিন সোহাগ বলেন, আমরা শুরু থেকেই বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নাতীত হোক সেটাই চেয়ে এসেছি এবং এখনো চাচ্ছি। কিন্তু সোসাইটির বর্তমান কমিটির কতিপয় শীর্ষ কর্মকর্তাদের কিছু কিছু কর্মকান্ড নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ভোটার তালিকার ভুল-ভ্রান্তি এবং তিন শতাধিক ভোটার নিয়ে আমাদের প্রশ্নের ব্যাপারে সোসাইটির পক্ষ থেকে কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের পক্ষ থেকে গত ২৬শে আগষ্ট একটি লিখিত অভিযোগ সোসাইটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বরাবর প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রেরিত অপর এক আবেদনে গঠনতন্ত্র ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে সোসাইটির আসন্ন নির্বাচনে ভোটার তালিকায় প্রথম দফায় ২৯২ জন এবং দ্বিতীয় দফায় ৩০৭ জন ভোটারের নাম সংযুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে সোসাইটির চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ভোটারের কিংবা ঠিকানা সংশোধন ছাড়া আর কোন পরিবর্তন সংশোধন কিংবা পরিবর্ধন করা হবে না। কিন্তু সভাপতি/সম্পাদক সাহেব সেই প্রতিশ্রুতি বরখেলাপ করেছেন এবং দুই দফায় আরো ৫৮৯টি সদস্য আবেদন ভোটার তালিকায় সংযুক্ত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত। আমরা সোসাইটির এই বিধি বহির্ভূত এহেন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং বিধি বহির্ভূত ভোটার তালিকায় যে আবেদনগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে তা বাদ দেয়ার দাবী জানিয়েছি এবং এখনো দাবী করছি।
আরো বলেন, সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দ, আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানাতে চাই যে, গত ৩০শে জুন ছিলো ভোটার হওয়ার শেষ দিন এবং সোসাইটির গঠনতন্ত্র মোতাবেক ৩১শে জুলাই খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে বর্তমান কার্যকরী পরিষদ সোসাইটির গঠনন্ত্র লংঘন করে গত ১৭ই আগষ্ট চুড়ান্ত ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করেছে। এছাড়াও সোসাইটির ১৮,৩৩০ ভোটার তালিকায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৫৯২জন ভোটারের নাম নতুন যোগ করা হয়েছে। ভোটার হওয়ার শেষ দিন সভাপতি আব্দুর রব মিয়া সোসাইটি অফিসে সাংবাদিক সহ আমাদের সবার সামনে বলেছিলেন যে ১৮,৩৩০ জন ভোটারের আবেদন জমা হয়েছে এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ২/৪টি ভোটার সংখ্যা কমতেও পারে বা বাড়তেও বলে জানিয়েছিলেন। সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্তে ৩০ জুনের পর যাদের ভোটার করা হয়েছে, তা বাতিল হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু কার্যকরী পরিষদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তা না করে বরং ‘সেলিম-আলী’ প্যানেল সমর্থিত সংরক্ষিত ভোটারদের বাদ দিয়েছে বলে আমাদের কাছে রিসিট সহ প্রমান রয়েছে। এর মধ্যে জ্যামাইকা ও ব্রঙ্কসের বেশী ভোটার বাদ পড়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রতিপক্ষের একজন প্রার্থীকে জয়ী করতে সোসাইটির কর্মকর্তারা অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছে। এভাবে কুটকৌশলে ২৫ বান্ডিল রিসিট থেকে ৩০ জুনে জমা দেয়া বৈধ ভোটারদের বাদ দিয়ে অবৈধ ৫৮৯ টি ভোট ভোটার তালিকায় যোগ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে সোসাইটির সভাপতি ও ট্রাষ্টিবোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও আমাদের অভিযোগ আমলে নেয়া হচ্ছে না এবং পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত কার্যকরী পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হলেও তাও কার্যকর হচ্ছে না। যা গঠনতন্ত্রের চরম লংঘণ। আমরা জানি কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্তই সোসাইটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।এব্যাপারে সোসাইটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ তাদের ক্ষমতা বলে ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের সমর্থক ভোটগুলো বাতিল করেছেন।
সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দদের জন্য আরো বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির ৫০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম তৃতীয় ভোটার লিস্ট নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যা ভোটারদের মনে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তবে আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ এই অনিয়মের জবাব দেবে। অপরদিকে কে বা কারা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এবং আগামী নির্বাচনে ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের বিজয়ের সম্ভাবনা দেখে জ্যামাইকা ও ব্রুকলীন সহ অন্যান্য এলাকায় বারবার আমাদের পোস্টার ও ব্যানার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। যা অত্যন্ত দু:খজনক। আমরা প্রতিহিংসা নয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা চাই, সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রেখে বাংলাদেশ সোসাইটিকে এগিয়ে নিতে চাই।
সোহাগ আরো বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নাতীত নির্বাচনের স্বার্থে স্বচ্ছ ভোটার তালিকার বিকল্প নেই। আর স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়নে সোসাইটি ব্যবস্থা নেবে এবং নির্বাচন কমিশন এব্যাপারে সহযোগি হবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা এবং দাবি।
সেলিম-আলী প্যানেলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সিরাজউদ্দিন সোহাগ বলেন, আমরা নির্বাচিত হলে ‘সেলিম-আলী’ প্যানেল ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আপনাদের মূল্যবান সময় দিয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমরা ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের পক্ষ থেকে জানাই অনেক কৃতজ্ঞতা। সেই সাথে নির্বাচন ঘিরে আমাদের প্রচারপ্রচারণায় সার্বিক সহযোগিতার জন্য সকল মিডিয়ার প্রতিও আমাদের কৃতজ্ঞতা। সোসাইটির নির্বাচন
সংবাদ সম্মেলনে ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের পক্ষে সভাপতি প্রার্থী আতাউর রহমান সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সকলকে ধন্যবাদ জানান।