‘আমার শহীদি রক্তে যেন ইসলামি আন্দোলনের বিজয় আসে। তোমরা প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করবে না। আর যখনই তোমরা সুযোগ পাবা, আমাকে যারা ভালোবাসত তাদেরকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করবে।’
ফাঁসির আগে স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় প্রিয় ছেলেকে এ কথা বলেই সান্ত্বনা দেন জামায়াতের তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে কাদের মোল্লার জন্মস্থান ফরিদপুরের সদরপুরে এক গণসমাবেশে এ কথা জানান কাদের মোল্লার সন্তান হাসান মওদুদ।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার নারকীয় তাণ্ডবে হতাহতদের স্মরণে উপজেলা সদরের হাসপাতাল মোড়ে এই গণ-সমাবেশের আয়োজন করে সদরপুর উপজেলা জামায়াত।
হাসান মওদুদ আব্দুল কাদের মোল্লার ছয় সন্তানের মধ্যে চতুর্থ। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ায় দীর্ঘ ১২ বছর পড়াশোনা করেছেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতেই নিজের এই পরিচয় জানিয়ে হাসান মওদুদ বলেন, ‘আব্বু আমাকে অনেকগুলো কথা বলেছিলেন। তার মধ্যে এ দুটি কথা ভালো মনে আছে।
তিনি বলেন, ফাঁসির আগে শেষ সাক্ষাতের জন্য আমরাই বিচলিত ছিলাম। তবে আব্বু বিচলিত ছিলেন না। তিনি একটি সবুজ পাঞ্জাবি পরেছিলেন। তখন শীতকাল ছিল। আমাদের পরিবারের সদস্যদের বাবার সঙ্গে দেখা করতেও দেওয়া হতো না। ফাঁসির আগ মুহূর্তে যখন আমরা দেখা করতে যাই, তিনি জেলারকে গেটটা একটু খুলে দিতে বলেন আমাকে শেষবারের মতো একটু বুকে জড়িয়ে কোলাকুলি করবেন বলে।’
হাসান মওদুদ বলেন, ‘আব্বুর ফাঁসির পর তাকে দাফনের জন্য সদরপুরে আনার পরেও আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ধরে তারা থানায় নিয়ে গেছে। আব্বুর যারা সহযোগী ছিলেন, তাদেরও বারবার মিথ্যা মামলায় হয়রানির চেষ্টা করেছে তারা। অথচ আজ তারা কোথায়? এটিই আল্লাহর বিচার।’
সদরপুর উপজেলা জামায়াতের আমির মো. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা বদরুদ্দিন, জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল ওহাব, অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এ সময় দলীয় কর্মী ও সমর্থক ছাড়াও স্থানীয় জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা বদরুদ্দীন বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা ও অস্ত্রশস্ত্রের মাধ্যমে আমাদের নেতাকর্মীদের নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা ও গুরুতর জখম করা হয়েছে। এই দেশের জমিনে আওয়ামী লীগের সেই সব অন্যায়-নির্যাতনের প্রত্যেকটি অপরাধের বিচার করা হবে। অন্যায়-অপরাধ ও দুর্নীতিমুক্ত করে বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’
ঠিকানা/এনআই