Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

ডেমোক্র্যাটদের কপালে বাড়ছে চিন্তার ভাঁজ

ডেমোক্র্যাটদের কপালে বাড়ছে চিন্তার ভাঁজ ছবি সংগৃহীত
দুই মাস আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে কমলার হ্যারিসের নাম ঘোষণা করা হলে আনন্দের জোয়ারে ভাসছিল ডেমোক্র্যাট শিবির। কমলার জয় অনিবার্যই মনে করছিলেন তারা। তবে ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে ডেমোক্র্যাটদের কপালে বাড়ছে চিন্তার ভাঁজ।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন কমলা। তবে দেখা যাচ্ছে, তিনি ডেমোক্র্যাট শিবিরের ভোটারদেরই সমর্থন পাচ্ছেন, যারা শুধু বাইডেনের বয়স নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।

বিজয়ের জন্য হ্যারিসকে ডেমোক্র্যাটদের শিবিরের বাইরের ভোট টানতে হবে, পাশাপাশি ভঙ্গুর জোটকে ধরে রাখতে হবে, যা বাইডেনকে ২০২০ সালে জিততে সাহায্য করেছিল।

গত কয়েক সপ্তাহের আগাম ভোটে দেখা যাচ্ছে, লড়াই আরও তীব্রতর হচ্ছে। মিশিগান, উইসকনসিন ও পেনসিলভানিয়ার মতো ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্র্যাট ঘাঁটিগুলোতেও ট্রাম্প জায়গা করে নিচ্ছেন। বিষয়টি ডেমোক্র্যাটদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সেই সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ এবং লাতিন ভোটারের ভাগ নিচ্ছেন ট্রাম্প, যা চিরাচরিতই ডেমোক্র্যাটরা পান।

দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রতিযোগিতা আগের মতোই হাড্ডাহাড্ডি থাকলেও ভোট গণনায় কিছু ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফলে এই হাড্ডাহাড্ডি পরে ভুল প্রমাণিত হতে পারে।

নির্বাচনের মাঠে ট্রাম্পের বাড়ন্ত দেখে স্বস্তিতে নেই কমলা, যা তার গত কয়েক দিনে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনায় ফুটে উঠেছে। শুরুর দিকে ট্রাম্পকে নিয়ে এত কথা বলেননি কমলা। কিন্তু এখন সম্মেলনে তিনি ট্রাম্পকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করছেন, ট্রাম্পকে ‘অসংযত মানুষ’ ও কিম্ভূতকিমাকার’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। সর্বশেষ তিনি ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিবাদী’ ও ‘ক্রমশ অবিচ্ছিন্ন এবং অস্থির’ বলে অভিহিত করছেন।

কমলার এমন আচরণ ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ইঙ্গিতই দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। পোলিং বলছে, হ্যারিসের পপুলার ভোটে বা সামগ্রিক ভোটে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তা যথেষ্ট হবে না। ইলেক্টোরাল কলেজে জিততে তাকে গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে জিততে হবে।

বিবিসির প্রতিবেদক সারাহ স্মিথ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেশির ভাগ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো ঘুরেছেন। তিনি এসব অঙ্গরাজ্যর ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, হ্যারিস সম্পর্কে অনেক ভোটার এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে, কারণ তাকে এখনো ভালোভাবে জানেন না।

হ্যারিসের সবচেয়ে বড় সমস্যা মিশিগানে। এই অঙ্গরাজ্যে আরব-আমেরিকান ভোটারদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেন এখানে দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। কিন্তু গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধ করতে বাইডেন প্রশাসনের নীরবতা অঙ্গরাজ্যটির ৩ লাখ আরব-আমেরিকান ভোটারকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। আর এর জন্য বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিসকেও সমানভাবে দায়ী করছেন তারা।

ডিয়ারবোর্নের মধ্যপ্রাচ্য-শৈলীর হারাজ কফিশপে সারাহ স্মিথ একদল অনড় ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে আলাপ করেন। যারা আগে ডেমোক্র্যাট পার্টির হয়ে প্রচারণা চালাতেন। সারাহ স্মিথ বলেন, ‘আমি আশা করেছিলাম, তাদের মধ্যে কেউ কেউ হ্যারিসকে ভোট দেবেন আর কেউ দেবেন না। তবে সেখানে সামরা লুকমান নামের একজন বামপন্থী ডেমোক্র্যাট আমাকে বলেছেন, তিনি কেবল ট্রাম্পকে ভোট দিচ্ছেন না বরং অন্যদেরও ভোট দিতে উৎসাহিত করছেন।’

সামরা লুকমান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, দলের প্রতি সারা জীবনের জন্য দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। কিন্তু গাজায় যা হচ্ছে, আমি এর জন্য ডেমোক্র্যাটদের ক্ষমা করব না এবং আমি রিপাবলিকানে ভোট দিতে দ্বিতীয়বার ভাবব না।’

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য হলো পেনসিলভানিয়া। এখানে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট সবচেয়ে বেশি। সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের টানতে দুই পক্ষই এখানে বিজ্ঞাপনের জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার ঢেলেছে।

সারাহ স্মিথ বলেন, প্রতিটি সফরে আমি দেখেছি ভোটাররা অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। তবে এবার এখানে ট্রাম্প সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বলে মনে হচ্ছে। ডেমোক্র্যাটরা যতই মাঝারি পর্যায়ের চাকরির সংখ্যা বা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির কথা বলুক না কেন—মাসিক খরচে রেকর্ড উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে ভোটাররা চার বছর আগে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করছেন।

বাল্ড ঈগল ন্যাশনাল পার্কে একটি জাতীয় শিকার এবং মাছ ধরার অনুষ্ঠানে সারাহ জিন উলের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি নির্দিষ্ট কোনো দলের ভোটার নন। তিনি বলেন, নানা কেলেঙ্কারির কারণে আমি ট্রাম্পকে ভোট দিতে অনিচ্ছুক। তবে এটাও সত্য, ট্রাম্পের সময়ে খাদ্যদ্রব্য ও পেট্রলের দাম কম ছিল। তাই আমার বেশির ভাগ বন্ধু এবার সম্ভবত ট্রাম্পকে ভোট দিতে যাচ্ছেন।’ পেনসিলভানিয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি এমন বলেই জানান তিনি।

পশ্চিম আমেরিকার দুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে একটি অ্যারিজোনা। অঙ্গরাজ্যটির সংবিধানে গর্ভপাতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে কি না—তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যালটে একটি প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে এখানে ১৫ সপ্তাহের পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধ সংক্রান্ত আইন রয়েছে।

অঙ্গরাজ্যটির ৬২ বছর বয়সী নারী নিকোল নাই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক প্রচারণায় জড়িয়েছেন। তিনি সারা জীবনে কখনো ভোট না দিলেও এবার এরই মধ্যে একজন ভোটারকেও ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার অধিকার নিয়ে খুব চিন্তিত। আমি যথেষ্ট ভাগ্যবান কারণ আমি যখন বেড়ে উঠেছি তখন অধিকারগুলো সুরক্ষিত ছিল। এখন সেটার জন্য লড়তে হচ্ছে।’

অ্যারিজোনার আগাম ভোট বলছে, ভোটাররা ব্যাপক ব্যবধানে প্রস্তাবটিকে সমর্থন করতে পারে, তবে এসব হ্যারিসের পক্ষে যাবে তেমনটি নয়। পাঁচজনের মধ্যে একজন বলেছেন, তারা অ্যারিজোনায় গর্ভপাতের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু একই সময়ে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিচ্ছেন।

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স