উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকা বিমানের রুটটি পুনরায় চালু করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর আবেদন জানিয়েছেন। প্রবাসীদের পক্ষে এই আবেদন করেন নিউইয়র্ক প্রবাসী মফিজুল হুসাইন, নিউজার্সি প্রবাসী মোস্তাক আযম চৌধুরী, নিউইয়র্ক প্রবাসী এবিএম সালেহ উদ্দিন ও নিউইয়র্ক প্রবাসী মফিজুর রহমান। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে প্রেরিত ওই আবেদনপত্রের কপি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল, ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, নিউইয়র্কে সাপ্তাহিক ঠিকানার নির্বাহী সম্পাদক ও ঢাকায় প্রথম আলোর সম্পাদকের কাছেও।
আবেদনপত্রে প্রবাসীরা উল্লেখ করেন, বিমানের ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটটি চালু করতে পারলে বিদেশি বিমান কোম্পানিগুলো থেকে ডলার সাশ্রয়, দেশের জন্য ডলার আয়, অনেক কর্মসংস্থান এবং প্রবাসীদের মানসিক তৃপ্তি, জাতীয় পতাকাবাহী বাহনে একটি নির্ভরযোগ্য যাতায়াত সেবার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তা ছাড়া বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর মতো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ‘ভ্রমণ প্যাকেজ’ ঘোষণা করতে পারলে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পও প্রসার লাভ করবে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে প্রবাসীরা আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন, আমরা অবশ্যই সচেতন যে আপনার দুই মাস বয়সী সরকার ভঙ্গুর অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রশাসন ও পুলিশ, বিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নির্বাচন-ব্যবস্থা, দুর্নীতি, ক্ষমতার সাম্য ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ও পরবর্তী ক্ষমতালোভীদের চাপে অনেকটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। এ অবস্থায় নতুন একটি দাবি তোলা অবিবেচকের মতোই কাজ। কিন্তু এই রুটটি চালু করতে হলে আপনার মতো সম্মানিত, যোগ্য এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একজন সরকারপ্রধানই প্রয়োজন। আপনি ক্ষমতা ছেড়ে চলে গেলে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা অপূর্ণই থেকে যাবে। অতীতে এই রুটটি চালু ছিল, কিন্তু লোকসান, দুর্নীতি, নিরাপত্তা ঘাটতি এবং বিদেশি কোম্পানিগুলোর ঘুষ-বাণিজ্যের কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায় বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
লোকসানের বিষয়ে বলা হয়, প্রতিদিন নিউইয়র্ক থেকে আমিরাত, ইত্তেহাদ, কাতার, সৌদি, কুয়েত ও টার্কিশ এয়ারলাইন্সে ৭০০-৮০০ বাংলাদেশি যাত্রী ভ্রমণ করেন। এসব এয়ারলাইন্সে গড় ভাড়া ১০০০-১২০০ ডলার। বাংলাদেশ বিমান বহরের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটি ১৮৯-২০০ যাত্রী বহন করতে সক্ষম। যদি প্রতি ট্রিপে ১৯০ দ্ধ ১২০০= $২২৮০০০ বিক্রি হয়, তাহলে লোকসান হওয়ার কথা নয়। এটুকু নিশ্চয়তা রয়েছে- বিমানের কোনো সিট কখনো খালি যাবে না।
নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়ে প্রবাসীরা বলেন, যতটুকু নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে বলে বলা হয়, তার চেয়ে বেশি হলো রাজনৈতিক। আমরা সবাই জানি, বিগত সরকারের সঙ্গে মার্কিন সরকারের একটা গভীর দূরত্ব ছিল, কিন্তু আপনার গুড অফিস সে দূরত্বটুকু কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আমরা নিশ্চিত। আমাদের বিমান যদি লন্ডনের হিথ্রো ও কানাডার টরন্টোর নিরাপত্তার মানদণ্ড মেনে রুট চালাতে পারে, তাহলে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা মান কেন বজায় রাখতে পারবে না? সবশেষে প্রবাসীরা ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকা বিমান রুটটি পুনরায় চালু করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানান।