কেউ খেটে রোজগার করলে পাচার করার টাকা থাকবে না, করবেও না। দুর্নীতি করলেই অর্থ পাচার হয়। তাই দুর্নীতি ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। এসব কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ১৫অক্টোবর মঙ্গলবার ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ টকশো’তে অতিথি হিসাবে এসব কথা বলেন তিনি।
নিউইয়র্ক সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ ইউটিউব চ্যানেলে। যেখানে দেশের অর্থ-বাণিজ্য-শিল্পের নানা দিক নিয়ে খালেদ মুহিউদ্দীনের প্রশ্নের জবাব দেন অর্থ উপদেষ্টা।
বিগত সরকারের সময় অর্থপাচার হয়েছে, তাদের পতনের পর বিষয়টি অনেক বেশি আলোচনায় রয়েছে। এ নিয়ে বর্তমান সরকার কী করছে? এমন প্রশ্নে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থপাচার নিয়ে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হচ্ছে। এমনকি তার স্ত্রী, কন্যা, পুত্র- তারা যাতে লেনদেন করতে না পারেন, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হচ্ছে না। কারণ এটা করলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এটা করা হলে অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কর্মসংস্থানের সমস্যা হবে। তবে ব্যবসাগুলোয় নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানালেন অর্থ উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে অর্থ চলে গেছে অবৈধ পথে, সেসব দেশে থেকে তথ্য মিলছে কি না, এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু দেশে তথ্য চেয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এভাবে অর্থপাচারের কিছু তথ্য তারা এরইমধ্যে পেয়েছেও।’
দ্রব্যমূল্য: স্বস্তি কবে?
দেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি থামছে না। এ নিয়ে জনসাধারণ খুব চাপে আছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ধৈর্য কত দিন ধরে থাকবে- খালেদ মুহিউদ্দীনের এমন প্রশ্নে, চাহিদার তুলনায় পণ্যের স্বল্পতার দিকটি তুলে ধরেন সরকারের উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বন্যা, বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছু পণ্যের সংকট রয়েছে। আবার পণ্য সরবরাহে হাতবদল হতে হতে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যায়। পণ্য মজুদের ‘সিন্ডিকেট’ যে এখনো সক্রিয়, সেই ইঙ্গিতও দিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
‘সিন্ডিকেট’ প্রতিরোধে সরকার শক্ত হতে পারছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শক্তি প্রয়োগ করে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না। তবে দাম নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে ডিম আমদানি করা হচ্ছে। ভোগ্যপণ্য আমদানির খরচ কমানোর নানা পদক্ষেপের চিত্রও তুলে ধরেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
একই সঙ্গে তিনি জানালেন, আগের সরকারের সময়ের রাজনৈতিক প্রভাবশালী, বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক প্রভাবশালী, স্থানীয় প্রভাবশালী- এমন তিনটি পক্ষ মিলে কারওয়ানবাজারে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অস্থিরতা তৈরি করছে এখনো। স্বচ্ছ ও যথাযথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবে- সরকার নিজেই এমন ডিলার পাচ্ছে না, বলছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
কেন কর অব্যাহতি পাচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক?
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা যিনি, তিনি যখন দেশের সরকারপ্রধান, এমন এক সময়ে গ্রামীণ ব্যাংককে ২০২৯ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে এক ধরনের ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’-এর শঙ্কা রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এর কোনো সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টা এই সিদ্ধান্তের কথা জানতেনও না।
তিনি আরো যোগ করেন, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকাল থেকে কর অব্যাহতি পেয়েছে। এটা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করার জন্য। আগের সরকারও কিন্তু কর অব্যাহতি দিয়ে আসছিলো। যখন ঝামেলা হলো তখন সুবিধাটা বন্ধ করে দেয়। তবে কর অব্যাহতির বিষয়টি হালনাগাদ। চার-পাঁচ বছর বন্ধ থাকার যে সময়, সেখানে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি, বলছেন অর্থ উপদেষ্টা।
বদলে যাচ্ছে টাকার চেহারা
নতুন নোট ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যেখানে কোনো টাকায়ই আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকবে না। কাগুজে নোটে কী অন্য কোনো ব্যক্তিত্বের ছবি যুক্ত হতে পারে? খালেদ মুহিউদ্দীন বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘টাকায় একজনের ছবি ছাড়া অন্য কারো ছবি ছিল না। আমার সময়ে আমি চেষ্টা করেছি, কারো ছবি না দিতে। সেখানে আমরা পুরাকীর্তির ছবি দিয়েছি। অনেকেই বলেছেন, কাজী নজরুলের ছবি দিতে, রবীন্দ্রনাথের ছবি দিতে, জিয়াউর রহমানের ছবি দিতে, বঙ্গবন্ধুর ছবি তো আছেই। কিন্তু আমাদের দেশে টাকায় কারো ছবি থাকলে অনেক রকম প্রশ্ন আসে।’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘ভারতের টাকায় গান্ধীর ছবি আছে, পাকিস্তান জিন্নাহর ছবি রেখেছে। আমরা চেষ্টা করছি নোট ছবি ছাড়া করতে। তবে এটাও ফাইনাল কোনো ডিসিশন না।’