Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
২৬ অক্টোবর থেকে আগাম

ভোট প্রবাসী বাংলাদেশিরা  ভোট দেবেন কাকে

ভোট প্রবাসী বাংলাদেশিরা  ভোট দেবেন কাকে
৫ নভেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোটের বাকি আর মাত্র ২০ দিন। ভোটের দিন যত এগিয়ে এগিয়ে আসছে, দোদুল্যমান হচ্ছে ভোটারদের মন। গোটা আমেরিকানদের মন কী বলছে, তা নির্ণয় করতে না পারলেও বাংলাদেশি আমেরিকান ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন, তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে। 
যুক্তরাষ্ট্রে যত বাংলাদেশি আমেরিকান আছেন, তাদের সিংহভাগই বসবাস করেন নিউইয়র্ক স্টেটে। আবার স্টেটের বেশিরভাগই থাকেন নিউইয়র্ক সিটিতে। মূলধারায় বাংলাদেশিদের অবস্থার সুদৃঢ় না হলেও ভোটের মাঠে তাদের পছন্দ ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে। তবে একশ্রেণির বাংলাদেশি আমেরিকানদের পছন্দ ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও। বাংলাদেশিদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি হতাশাজনক। বলতে গেলে এক-তৃতীয়াংশ ভোটার ভোট দিতে যান না। কিন্তু নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটরা আশা করছেন, এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তাদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া উচিত। 
মূলধারার রাজনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস আহমেদ বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জিতবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ভোটের মাঠে বাংলাদেশিরাও বিভক্ত। তারা কাকে ভোট দেবেন সে সিদ্ধান্ত আগেভাগে নিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের দাবি আদায়ে মূলধারার রাজনীতিতে সোচ্চার হতে হবে। 
অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও বাংলাদেশিরা এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে গিয়াস আহমেদ বলেন, ২০ বছর আগে আমি যখন স্টেট সিনেটর হিসাবে নির্বাচন করি তখন বাংলাদেশিদের কোনো মুসলিম প্রার্থী ছিল না। এখন আমাদের প্রায় ৫০ জন বোর্ড মেম্বার আছেন। 
গিয়াস আহমেদ বলেন, নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশিরা এগিয়ে যাচ্ছেন। গভর্নর, মেয়র ও কংগ্রেসম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা বাংলাদেশিদের বাসায় যান। আমাদের সঙ্গে তাদের গিভ অ্যান্ড টেক সম্পর্ক। তাদের জন্য ফান্ড রেইজ করতে হবে। ভোট দিতে হবে। মূলধারার রাজনীদিতে বাংলাদেশিদের সক্রিয় হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মুসলিম ভোট আছে। 
ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে বাংলাদেশিরা ইমিগ্রেশন ইস্যুকে বেশী প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিন্তু সবাই আবার অবৈধ ইমিগ্রেশনের পক্ষে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তিনি মনে করেন, যারা বৈধভাবে আমেরিকায় এসেছেন তারা অবৈধভাবে আমেরিকায় আসা সমর্থন করেন না। সেক্ষেত্রে ভোটের মাঠে অনেকে ডেমোক্রেট হয়েও শেষ মুহূর্তে রিপাবলিকান প্রার্থীকে ভোট দেন। 
মঈন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য তাদের সবার ভোটার হওয়া উচিত। কারণ এই নির্বাচন ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পলিসিগত বিষয়, বিশেষ করে স্বাস্থ্যবীমা, ইমিগ্রেশন, অর্থনীতি, ফরেন পলিসি নির্ভর করে ভোটারদের ওপর। যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি নির্ধারণ করেন আগামী চার বছর যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হবে। 
মূলধারার রাজনীতিক ও কমিউনিটি লিডার ফাহাদ সোলায়মান বলেন, বাংলাদেশিরা কাকে ভোট দিলেন, এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা ভোটকেন্দ্রে গেলে সেটা জাতি হিসাবে গণনা করা হয়। এই গণনার ওপর কমিউনিটির গুরুত্ব বাড়ে। কিন্তু বাংলাদেশিদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনীহার কারণে মূলধারায় আমরা বেশীদূর অগ্রসর হতে পারছি না বলে উল্লেখ করেন ফাহাদ সোলায়মান। 
তিনি বলেন, ডেমোক্রেটরা সবসময় ইমিগ্র্যান্ট বান্ধব। তারা ইমিগ্র্যান্টদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পক্ষে। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা ইমিগ্র্যান্টবিরোধী। তারা ইমিগ্র্যান্টদের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব দেখান। এ কারণে বাংলাদেশিদের উচিত ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের অধিকার প্রয়োগ করা। তিনি বলেন, গেল গভর্নর নির্বাচনে নিউইয়র্কে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে নিউইয়র্ক স্টেটে ডেমোক্রেটরা নিয়ন্ত্রণ হারাবে না, এটা বলা যায় না। এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভাবতে হবে। 
ভোটের মাঠের হিসাব কী বলছে?
এদিকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস গড়ে মাত্র ১.৪ শতাংশ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন, যা এক মাস আগের জরিপের ফলাফল থেকে প্রায় অর্ধেক কম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ২০ দিন। এর মধ্যেই নতুন জরিপে ভোটের হিসাবে ওলট-পালট দেখা যাচ্ছে। ডেমোক্রেট পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জনপ্রিয়তায় বরাবরই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি টেলিভিশন বিতর্কের পরও ভোটারদের মাঝে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। জনপ্রিয়তার নিরিখে এখনও অবশ্য ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে পড়েননি তিনি। তবে সর্বশেষ জরিপ বলছে, ভোটের যখন মাত্র ২০ দিন বাকি, তখন আগের চেয়ে জনপ্রিয়তা কিছুটা হারিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
গত রোববার তিনটি জরিপ অনুযায়ী, হোয়াইট হাউসের দৌড়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ট্রাম্পের সঙ্গে কমলার ভোটের ব্যবধান সংকুচিত বা প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। এতে ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে তার বিজয়ের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এনবিসি নিউজের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, জাতীয়ভাবে কমলা হ্যারিস ও ট্রাম্প উভয়ের সমর্থন সমান সমান— ৪৮ শতাংশ। তার মানে এক মাস আগের জরিপের তুলনায় হ্যারিসের সমর্থন প্রায় ৫ শতাংশ কমে গেছে।
এবিসি নিউজ/ইপসোসের সর্বশেষ জরিপেও কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা কমতে দেখা গেছে। এই জরিপের ফল অনুযায়ী, কমলা হ্যারিস এখনও ৫০ শতাংশ বনাম ৪৮ শতাংশ (ট্রাম্পের সমর্থন) ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। তবে মাসে এই ব্যবধান ছিল ৫২ শতাংশ বনাম ৪৬ শতাংশ।
অন্যদিকে, সিবিএস নিউজ/ইউগভ জরিপেও উঠে এসেছে একই চিত্র— কমলা হ্যারিসের প্রতি ৫১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের বিপরীতের ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন ৪৮ শতাংশ ভোটার। একই প্রতিষ্ঠানের জরিপে গত মাস আরও চার পয়েন্ট বেশি এগিয়ে ছিলেন কমলা। তার মানে সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, কমলা হ্যারিস গড়ে মাত্র ১.৪ শতাংশ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন, যা এক মাস আগের জরিপের ফলাফল থেকে প্রায় অর্ধেক কম। গত মাসের জরিপগুলোতে কমলা হ্যারিস গড়ে ২.২ শতাংশ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন।
সম্প্রতি ডেমোক্রেটরা আশঙ্কা করছিলেন, কমলা হ্যারিস হিস্পানিক ও আফ্রিকান-আমেরিকানদের মতো দুই গুরুত্বপূর্ণ ভোটার গোষ্ঠীর সমর্থন হারাচ্ছেন। সেই আশঙ্কার মধ্যেই নতুন এই জরিপের ফল প্রকাশিত হল।
সব জাতির নারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকলেও পুরুষদের মধ্যে, বিশেষ করে আফ্রিকান-আমেরিকান ও হিস্পানিকদের মধ্যে কমলার সমর্থন বাড়ছে না। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ভোটার গোষ্ঠী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছে।
শনি ও রোববার প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজের জরিপে দেখা গেছে, এবার ৭৮ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার এবং ৫৬ শতাংশ হিস্পানিক ভোটার কমলা হ্যারিসের পক্ষে রয়েছেন। কিন্তু এই সমর্থন ২০২০ ও ২০১৬ সালের ডেমোক্রেট প্রার্থীর প্রতি তাদের সমর্থনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বৃহস্পতিবার কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের সমালোচনা করেন এই বলে যে, তারা ২০০৮ ও ২০১২ সালে তার প্রতি যতটা সমর্থন দেখিয়েছিলেন, কমলা হ্যারিসের প্রতি ততটা সমর্থন দেখাচ্ছেন না।
 

কমেন্ট বক্স