বাংলাদেশের অন্যতম খ্যাতিমান প্রবীণ সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক মনজুর আহমদ দেশ ও প্রবাসে টানা প্রায় ৬৫ বছর সাংবাদিকতা শেষে সম্প্রতি অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৮১ বছর বয়সী এই প্রবীণ সাংবাদিকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে গত ৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের একটি পার্টি জ হলে তার স্নেহস্পদ সাংবাদিক অকবর হায়দার কিরণ ও ফটো সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী আয়োজন করেন এক প্রীতি সম্মিলনের।
অনুষ্ঠানের আরেক মধ্যমনি ছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রেখা আহমদ। ‘শ্রদ্ধেয় মনজুর আহমদ-এর সাথে কিছুক্ষণ’ শিরোনামের এই আড্ডা অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিলেন ইউটিউব চ্যানেল ‘কিরণ টিভি’ এবং রূপা খানম ও সিমু আফরোজা। বিশেষ এই অনুষ্ঠানে মূল উদ্দেশ্য ছিলো সাংবাদিক মনজুর আহমদ ও রেখা আহমদ দম্পতির ‘অসাধারণ দাম্পত্য’ জীবনের গল্প জানা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন তাঁর চারযুগের একান্ত পরিচিত ও স্নেহধন্য সাংবাদিক লেখক আকবর হায়দার কিরন।
আড্ডায় জানা যায়, মাত্র ১২ বছর বয়স থেকে ঝিনাইদহের মেধাবী বালক মনজুর আহমদ শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা। কিছুদিন পর তাঁর কাছে ডাকের মাধ্যমে আসে দৈনিক সংবাদদাতার নিয়োগপত্র। তারপর থেকে ঢাকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশের প্রাচীন দৈনিক ‘সংবাদ’ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে ফুলটাইম। সময়ের সাথে সাথে দৈনিক পাকিস্তান হয়ে দৈনিক বাংলা’য় দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবন। পাশাপাশি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউএজ) ও জাতীয় প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনে। উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে আসার পর বেশ কিছুকাল কাজী শামসুল হকের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক এখন সময় সাপ্তাহিক এবং পরবতীর্তে সাপ্তাহিক আজকালে সম্পাদক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
অন্যদিকে রেখা আহমদ ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া জেলার মানুষ হলেও বাবার চাকুরির সুবাদে তাঁর জন্ম ও বড় হওয়া মনজুর আহমদের ঝিনাইদহ শহরে। কিভাবে তাঁদের পরিচয় ও পরিণয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনুরাগীদের প্রচণ্ড আগ্রহের কারনে কিছুটা জানা গেলো। মনজুর আহমদ বললেন,‘এই রেখা ছিলো আমাদের শহরের সেরা, গুণী ছাত্রী ও সুন্দরী।’ তাঁদের যখন বিয়ে হয় তখন মনজুর আহমদ—এর বয়স ছিলো ২২ আর রেখা আহমদ-এর ছিলো ১৮। বেতন ছিলো মাত্র ৬০ টাকা। তাঁদের জীবনের গল্প যেন সমবেত সবাই অবাক হয়ে শুনছিলেন। তিনি অদ্ভুতভাবে সেই যুগ যুগ আগের ঘটনা ও স্মৃতি ঝঁকঝঁকে আয়নার মতো করে শুনালেন। অনুষ্ঠানের অনেকেই মনজুর আহমদকে ‘সাংবাদিকতার এনসাইক্লপিডিয়া’ বলে আখ্যায়িত করেন।
অনুষ্ঠানে ‘মনজুর আহমদ ও রেখা আহমদ’ দম্পতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অড্ডার ফাঁকে ফাঁকে প্রবাসের জনপ্রিয় এই দম্পতি নিয়ে কথা বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মশিউর রহমান, প্রবীণ সাংবাদিক সাঈদ তারেক, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, শিল্পী রাগিব আহসান, বাংলাদেশ ফাইন আর্টস একাডেমি (বাফা)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন, সাংবাদিক ও লেখক মনিজা রহমান, গ্লোব বাংলা’র সম্পাদক আবু নছর মিনার, শাহ গ্রুপ-এর কর্ণধার শাহ জে. চৌধুরী, কবি রওশন হাসান, লেখক রাজিয়া নাজমী, এইচ বি. রিতা, শেলী জামান খান ও ভায়লা সালিনা লিজা, শিল্পী শহীদ উদ্দিন, বিশিষ্ট অভিনেত্রী প্রতিমা সুমী, সফি মাহমুদ, আহমেদ হায়দার সহ আরো অনেকে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা মনজুর আহমেদকে নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা এবং স্মৃতিচারণ করে বলেন, তার মত বিচক্ষণ সাংবাদিক আমরা আর পাব না। অল্প পরিসরে মনজুর আহমেদ ভাই তার পথ চলার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে আমাদের ঋদ্ধ করেছেন। তিনি সমুদ্রের মতো জ্ঞানগর্ভ, অত্যন্ত দক্ষ, অভিজ্ঞ, নির্ভীক, সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিক। নিজের মেধা, মনন, পরিশ্রম ও সেবা সর্বস্ব দিয়েছেন প্রবাসের বাংলাদেশি কমিনিটি ও মানবতার জন্য। সাংবাদিকতা জগতে তিনি একজন চৌকস সাংবাদিক আর ভাল মনের মানুষ। তাকে পরিমাপ করার সামর্থ্য নেই। তিনি ইতিবাচক, সহনশীল, নম্র, বিনয়ী, শ্রদ্ধাশীল মানবিক, ধৈয্যর্, সহিষ্ণুতা ও সদা মিষ্টি ভাষী নানা গুণের মানুষ। মনজুর আহমদ আমাদের হৃদয়ে আজীবন থাকবেন, সেখানে তাঁর কোন অবসর নেই।
বক্তারা মনজুর আহমদ ও রেখা আহমদ দম্পতির সুস্থতা আর দীর্ঘায়ু কামনা করেন।