Thikana News
২৭ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রবাস-প্রয়াণের প্রথম বার্ষিকীতে প্রজ্ঞাবান কবি আসাদ চৌধুরী

প্রবাস-প্রয়াণের প্রথম বার্ষিকীতে প্রজ্ঞাবান কবি আসাদ চৌধুরী



 
নিউইয়র্কের অনেকেই কবি আসাদ চৌধুরীর হাতের পান চিবিয়েছেন। বইমেলায়, জ্যাকসন হাইটসে বা জ্যামাইকায়। ‘তবক দেওয়া পানে’র কথা অনকেই ভুলতে পারেন না। ২০০৪-এ বৃহত্তর সিলেটের পানপুঞ্জিতেও গড়েন স্মৃতিময়তা। ছুঁয়ে আসা পান-বরজের গল্প করতেন দেশে-বিদেশে। পানরসে পূর্ণ এই জনপ্রিয় কবির প্রবাস-প্রয়াণ ২০২৪-এর ৫ অক্টোবর।
‘আসাদ চৌধুরী’ নামটির সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৭১ সালে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়িতে। সেই যুদ্ধবর্ষে আমরা তখন সপরিবারে শরণার্থী। তবে বসবাস শরণার্থী শিবিরে নয়, পরিত্যক্ত বাড়িতে। বাবার দ্বিতীয় বোনের বিয়ে হয়েছিল হলদিবাড়িতে। ১৯৪৭-এর পূর্বে, পাক-ভারত বিভাজনের আগে। ফুপা পরিবারসহ থাকেন গ্রামে, প্রধান পাড়ায়। হলদিবাড়ি শহরে ছিল একটি পরিত্যক্ত বাড়ি। উদ্বাস্তু হিসেবে সেই আবাসনে আমাদের ঠাঁই হয়। আমার বয়স তখন ১০ ও ১১-এর মধ্যিখানে।
আমাদের চিত্তে তখন ভয়, আশঙ্কা, দেশের চিন্তা। কিন্তু হাতে খরচের মতো সময়ের অভাব নেই। পাঠের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব শৈশব থেকেই। ওই সময়ে হলদিবাড়িতে একটি বই নিয়ে কাড়াকাড়ি। বই মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-বিষয়ক সংকলন। লাল প্রচ্ছদ, প্রতিবাদী নাম ‘রক্তাক্ত বাংলা’। প্রকাশক কলকাতাস্থ স্বাধীন বাংলা ‘মুক্তধারা প্রকাশন’। তাতে দারুণ সব লেখা লিখেছেন পূর্ব পাকিস্তানের লেখকেরা। তারাও নাকি কলকাতা শহরের শরণার্থী। শুনে আমরা ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হলাম। আগ্রহভরে নামগুলোর দিকে তাকালাম। (ড.) আনিসুজ্জামান, সৈয়দ আলী আহসান, আহমদ ছফা। আবার রামেন্দু মজুমদার, কামাল লোহানী, আসাদ চৌধুরী।
সংকলনটি মুক্তধারার পক্ষে প্রকাশ করেছেন চিত্তরঞ্জন সাহা। সবগুলো লেখাতেই স্বাধীনতার প্রত্যাশা। পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তির আকুলতা। আসাদ চৌধুরী সেরকমই প্রতিবাদী গদ্য লিখেছিলেন। লেখক পরিচিতির স্থানে লেখা ছিলÑকবি, অধ্যাপক। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পড়তেন কবিতা ও কথিকা। সেসবেরই আলোছায়া পড়েছিল বারুদ-মাখানো কবিতায়-
নদীর জলে আগুন ছিল আগুন ছিল বৃষ্টিতে
আগুন ছিল বীরাঙ্গনার উদাস করা দৃষ্টিতে।
আগুন ছিল গানের সুরে আগুন ছিল কাব্যে,
মরার চোখে আগুন ছিল এ কথা কে ভাববে?
কুকুর-বেড়াল থাবা হাঁকায় ফোঁসে সাপের ফণা
শিং কৈ মাছ রুখে দাঁড়ায় জ্বলে বালির কণা।
আগুন ছিল মুক্তিসেনার স্বপ্ন-ঢলের বন্যায়-
প্রতিবাদের প্রবল ঝড়ে কাঁপছিল সব অন্যায়।
এখন এসব স্বপ্নকথা দূরের শোনা গল্প,
তখন সত্যি মানুষ ছিলাম এখন আছি অল্প।
(তখন সত্যি মানুষ ছিলাম/ আসাদ চৌধুরী)
কবি আসাদ চৌধুরীর মূল নাম সাত শব্দে। কিন্তু তিরিশের দশকের কবিদের আদলে নামের সংস্কার করেন। দুই শব্দে নামটি সাজান, যা সফল কবিরা করেন। পিতা-মাতা : মো. আরিফ চৌধুরী, সৈয়দা মাহমুদা বেগম। পৈতৃক বাস বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, উলানিয়া। ঢাকা থেকে সর্বশেষ বসবাস উত্তর আমেরিকায়, কানাডায়। তিনি টরন্টোতে, আমি সীমান্তের এপারে নিউইয়র্কে।
মুক্তিযুদ্ধের আগুনঝরা স্মৃতি অনেক লিখেছেন আসাদ ভাই। যুদ্ধের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কলমযুদ্ধ করেছেন। কবিতার ভেতর দিয়ে নতুন প্রজন্মকে শিখিয়েছেন ইতিহাস। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে কিছু পঙ্্ক্তি মিথে পরিণত হয়েছে। দেয়ালে, পোস্টারে, উদ্ধৃতিতে প্রায়শ লক্ষণীয়-
তোমাদের যা বলার ছিলো,
বলছে কি তা বাংলাদেশ?
শেষ কথাটি সুখের ছিলো,
ঘৃণার ছিলো, নাকি ক্রোধের, প্রতিশোধের
কোনটা ছিলো?...
বলছে কি তা বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ স্বাধীন হলো ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর। বৃহত্তর রংপুরের নীলফামারীর ডোমারে আমাদের বেড়ে ওঠা। প্রথম তারুণ্যেই আসাদ চৌধুরীর কবিতা লালন করি। প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সহজবোধ্য-আধুনিকতা। ১৯৭৫-৭৬-এ বেরোল তিনটি কাব্যগ্রন্থ। তবক দেওয়া পান, বিত্ত নাই বেসাত নাই। এ ছাড়া বহুল আলোচিত ‘প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড়’।
১৯৮১-এর অক্টোবরে আমি মফস্বল ছেড়ে ঢাকায় স্থায়ী হই। ১৯৮২-তে আসাদ চৌধুরীর আরেক সাহিত্যচমক। কাব্যগ্রন্থ : জলের মধ্যে লেখাজোখা। এরপর বছর বছর নতুন কাব্যগ্রন্থ। যে পারে পারুক, মধ্য মাঠ থেকে। বেরোল-মেঘের জুলুম পাখির জুলুম। নদীও বিবস্ত্র হয়, বাতাস যেমন পরিচিত। অধিকাংশ কবিতাগ্রন্থেই ছন্দ ও ধ্বনি-সাজুয্যের প্রয়োগ। স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, অক্ষরবৃত্তের বাইরে শিরোনাম অনেক কম। অর্থাৎ কবিতাসমূহের চরিত্র প্রচ্ছদ দিয়েই যেন প্রকাশিত।
প্রচ্ছদ-জি, আসাদ চৌধুরীর আরেক শিল্প-সাম্রাজ্য। বাংলাদেশ টেলিভিশনের রুচিস্নিগ্ধ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘প্রচ্ছদ’। সস্তা, বাণিজ্যিক উল্লাসপনার বিপরীতে সৃষ্টিশীল নান্দনিক পরিবেশনা। গ্রন্থনা, সঞ্চালনায় সুধীমহলে আসাদ চৌধুরী ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তখন বাংলাদেশে একটিই জাদুর বাক্স : ‘বিটিভি’। আমি ১৯৭৯-৮০-তে বিটিভিতে বিতর্ক অনুষ্ঠান করেছি। মফস্বল থেকে বিতার্কিক হিসেবে দলবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ। তবে কবি হিসেবে প্রথম পদ্য পাঠ ১৯৮৪-তে এবং সেটি মর্যাদাকর ‘প্রচ্ছদ’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই।
একবার ‘প্রচ্ছদ’ অনুষ্ঠানে এলেন পপশিল্পী পিলু মমতাজ। কিন্তু না, ধুম-ধাড়াক্কার পপ গান নয়। পিলু চমৎকারভাবে গেয়েছিলেন মরমিয়া লোকসংগীত। ভীষণ উপভোগ্য হয়েছিল সেই পরিবেশনা। পিলুর বাবা খ্যাতিমান লোক-গায়ক মমতাজউদ্দিন আহমদ। তিনিও ভাবেননি, মেয়ে এত দরদি কণ্ঠে ফোক গাইবে। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটিতে আসাদ চৌধুরী ছিলেন প্রধান জাদুকর।
প্রিয় কবি আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ ১৯৮১-তেই। তিনি তখন বাংলা একাডেমিতে সম্ভবত উপপরিচালক। ১৯৮২-তে আমি অনেকগুলো সাহিত্যবান্ধব কর্মে সম্পৃক্ত। শিশুসাহিত্য পরিষদের কর্মকাণ্ডসমূহে প্রধান সংগঠক। দর্শনীর বিনিময়ে পদ্য-পাঠের একাধিক অনুষ্ঠান হলো। আসাদ ভাই প্রতিটিতেই পাঠে অনবদ্য। ১৯৮৩-৮৪-তে বেরোল ‘বাংলাদেশের ছড়া ও ছড়ালেখক’। বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্যের প্রথম এনসাইক্লোপেডিয়া। সম্পাদনা-প্রকাশনায় ছিলাম আমি (সালেম সুলেরী)। কবি আসাদ চৌধুরী তাতে লিখেছেনÑ
ট্রেন যায় হিশ-হিশ,
বায়ু যায় ফিশ-ফিশ,
চোর যায় চুপ-চাপ,
ট্রাক যায় ধুপ-ধাপ,
গরিবের দিন যায়
কী করে?
কী করে?
কী করে?
জানিবার সাধ হলে
হাত দাও শিকড়ে
শিকড়ে
শিকড়ে...।
(জ্ঞানতত্ত্ব/ আসাদ চৌধুরী)
আমার সম্পাদিত আরেকটি সংকলন বিশেষ সমাদর পায়। শিরোনাম : ‘প্রিয় কবিতা ও তার পটভূমি’। অর্থাৎ একটি কবিতা নির্মাণের নেপথ্য গল্প। বাংলাদেশ-ভারত-প্রবাসবাংলার প্রধান কবিবৃন্দ লিখেছিলেন। কবি আসাদ চৌধুরীও তাতে সাগ্রহে কলম ধরেন। প্রথমে সাদাকালো পত্রিকার পক্ষে ২০০১-এ সংকলিত হয়।
কবিতার শিরোনাম : ‘আজো ঝরছে নষ্ট রক্ত হলুদ পুঁজ’। নিজের ‘কবিতার জন্মরহস্য’ লিখলেন এভাবেÑ
‘বাবরি মসজিদ ধ্বংস হলো ১৯৯২ সালে। এরপর ভারতে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূচনা। তারই ফলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবনতি ঘটে। মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা ভাঙচুর ও ধ্বংস করা হয়। সে সময় আমার কবিসত্ত্বা দারুণভাবে নাড়া দেয়। ১৯৭১-এর মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের পর এমন দামামা। আমাকে চরমভাবে ব্যথিত ও আন্দোলিত করে। ভাষা-সংস্কৃতি এক, অথচ ধর্মকেন্দ্রিক এই দাঙ্গা। বিশেষত, চট্টগ্রামে মারাত্মক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। তারই প্রতিফলন আমার এই ব্যথাভরা নতুন কবিতাটি।’
আজো ঝরছে নষ্ট রক্ত হলুদ পুঁজ ♦ আসাদ চৌধুরী
এমনকি ’৭১-এর প্রতিশোধের কোনো চমৎকার উচ্চারণ সম্ভব হ’ল না।
বরং সৎ ও নির্যাতিত মানুষের অসম্ভব ক্ষমতার কথাই
প্রগাঢ় বিশ্বাসের পঙ্ক্তি হ’য়ে উঠলো আমার কবিতায়।
আমার সামনে ছিলো পূর্বপুরুষদের অমর গান ও কবিতা,
নদী ও আকাশের অসীম ঔদার্য,
ফসলের অহঙ্কারে দীপ্ত মাটি,
আর এ মাটির আকর্ষণে আগন্তুক পাখি,
আদিগন্ত ক্রন্দন ধ্বনি, বিপুল বিলাপ।
আমি অনিচ্ছায়, অজান্তে প্রতিবাদের পতাকা হাতে তুলে নিলাম
না প্রতিশোধ নয়, প্রতিশোধ কামনায়
উচ্চারিত তেজি ভাষণ হয়ে ওঠেনি আমার পদাবলী,
এমনকি ’৭১-এও নয়।
শরীরের ভিতরেও তো অচিকিৎস্য ক্ষত ছিলো
সেখান থেকেই আজো ঝরছে নষ্ট রক্ত, হলুদ পুঁজ-
ফায়দা নিচ্ছে যারা তারা জানে, সব জানে।
তাদের মুখের অন্ন কখনো বিস্বাদ হয় না।
ভোগের তীব্র আকাক্সক্ষায় এদের বিবেক ও বিচার তন্দ্রাচ্ছন্ন,
এরাই ভাইকে হত্যার জন্যে আস্তিনের তলায় গছিয়ে দিয়ে যায়
ইতিহাস স্তব্ধ করা অন্ধকার।
(সংক্ষেপিত, সাদাকালো ২০০১)
২০০৩-এ আসাদ ভাইসহ তিনটি রেকর্ড করেছি আমরা। হলদিয়ায় সারাভারত বাংলা কবিতা উৎসবে যোগদান। যা এখন ‘বিশ্ববাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি উৎসবে’ পরিগণিত। দ্বিতীয় বিষয়টি দুর্লভ জন্মতিথি পালন বিষয়ক, পরে বিস্তারিত। তবে প্রথমটি বিশ্বব্যাপী বাংলা সংস্কৃতির বিস্তার বিষয়ক। ভাষা আন্দোলনের ৫১ বর্ষপূর্তিতে তিন বাংলার উন্মোচন। বাংলাদেশ, ভারত ও প্রবাসবাংলার সেতুবন্ধ সংগঠন ‘তিন বাংলা’।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৩-এর ঘোষণা দিবসটি ছিল স্মৃতিময়। কিংবদন্তি ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন প্রধান অতিথি। সম্মানিত অতিথি ‘একুশে পদকপ্রাপ্ত’ পাঁচ কৃতবিদ্য। প্রথম নামটিই প্রিয়-শ্রদ্ধেয় আসাদ চৌধুরীর। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সে আয়োজনে সভাপতিত্ব করার। ছিলেন কবি আল মুজাহিদী, নির্মলেন্দু গুণ, সুকুমার বড়ুয়া। প্রবন্ধ পড়েন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ভারতবাংলা থেকেও ছিলেন পাঁচ কৃতবিদ্য লেখক। শ্যামলকান্তি দাশ, অমৃত মাইতি, অপূর্ব দত্ত (প্রয়াত)। ছিলেন ছড়া-কবিতার রতনতনু ঘাটী, দীপ মুখোপাধ্যায়। প্রয়াত কবি সমুদ্রগুপ্ত, গ্রন্থকার প্রণব ভট্ট। আসাদ ভাই বলেছিলেন, গাঁথা হলো বিশ্ববাংলার সেতুমালা। ২০১৮-এর ৮ জানুয়ারি ছিল তিন বাংলার বর্ষশুরু কবিতা উৎসব। বাংলাদেশ-ভারত-প্রবাসের শতাধিক কবির মিলনমেলা। সম্মানিত অতিথি রূপে আসাদ চৌধুরী বক্তব্যে-আতিথেয়তায় ছিলেন প্রাণবন্ত।
সতীর্থরা বলেন, সেদিন আমরা জন্মদিনবিমুখ কবি আসাদ চৌধুরীকে বরণ করেছি। জন্মস্মারকের মাল্য দিয়ে বরণমালা পরিয়েছি। করকমলে যথাসাধ্য স্মারক উপহার তুলে দিয়েছি। প্রথা মেনে প্রদীপ জ্বেলে কেকও কেটেছি। একই কর্মে জড়িয়েছি আরও তিন সমার্থবাদীকে। তিনজনই কবি-পদ্যকার-সাংবাদিক পদবাচ্যধারী। যথাক্রমে ফয়েজ আহমদ, আবু কায়সার, সালেম সুলেরী। ২০০৩-এর উদ্যোগটি হয়তো একদিন ইতিহাস হবে।
জীবনচক্রে জন্মতিথি আসবে, যাবেও। স্মৃতিপ্রদ সেই আয়োজনের তিনজন বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়াত হলেন। প্রথমে প্রিয়-শ্রদ্ধেয় ফয়েজ আহমদ, আবু কায়সার। নিয়তির ডাকে আসাদ ভাই গেলেন ২০২৩-এর ৫ অক্টোবর। সমাধিস্থ হলেন পরিবারপাশে কানাডার টরন্টোতে।
তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ বাঙালির জীবনে একটি অভিন্ন ঘটনা...। সনদে আর পারিবারিক জীবনে দুটো জন্মদিন। শেষ জীবনে ৫ নভেম্বর আসাদ ভাই পারিবারিক জন্মতিথিও উদযাপন করেন। যদিও ফেসবুক ও সর্বত্র ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ তারিখটি সংরক্ষিত।
জন্মদিন বা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে প্রায়শ পদ্য পড়ি। লেখক, সৃষ্টিকর্মীর বৈশিষ্ট্য নিয়ে চার পঙ্্ক্তির নিবেদন। কবি আসাদ চৌধুরীর প্রথম জন্মতিথি পালনকালে রচিত। এখন সেটি যেন সর্বজনীন সম্পদে পরিণত হয়েছে-
‘জীবনের কাছে পরাজিত তাই বয়েস হচ্ছে লীন,
টুকরো টুকরো ঝরছে মানুষ এলেই জন্মদিন।
ঝরতে ঝরতে অবশেষে হয় জীবনের পারাপার,
তাই দিয়ে যায় স্মৃতির শব্দ আগামীকে উপহার।’
লেখক : কবি-কথক-সম্পাদক
 

কমেন্ট বক্স