প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্থ খাত নিয়ে দেখা দেওয়া সম্ভাবনা সমূহ ঝুঁকিতে। সম্ভাবনাকে বুমেরাং করার মহা আয়োজন চলছে। প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি চরদের কিছু কিছু কর্ম ধরাও পড়ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অত্যন্ত সম্মানিত-সমাদৃত হলেও এ মুহূর্তের প্রতিপক্ষ প্রচুর। ডক্টর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ডক্টর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের মতো অর্থনীতির জাঁদরেলদের নিয়ে ড. ইউনূসের জাদুর কাঠির পরশে শেখ হাসিনার ফেলে যাওয়া বিশৃঙ্খল, বিধ্বস্ত অর্থনীতির কয়েক জায়গায় দৃশ্যমান আলোর রেখায় অন্ধকার নামানোর চেষ্টা একদম স্পষ্ট।
অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা অজুহাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গ্রুপের দেড় শতাধিক কোম্পানি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। তাদের এককথাÑদেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নেই। ছোট-বড় মিলিয়ে সংখ্যায় তারা অর্ধশতাধিক। এরই মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি আরজেএসসিতে বন্ধের আবেদনসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে। আবার কিছু কোম্পানি সাধারণ সভার বৈঠকে কোম্পানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বন্যার প্রভাবে বিভিন্ন বাণিজ্যিক খাত, বিশেষ করে শিল্প, পর্যটন, কৃষি ও সেবা খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন শ্রম অসন্তোষের কারণে দেশের শীর্ষ রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা চলছে। আগে থেকেই দেশের অর্থনীতি সংকটে থাকায় বেশ কিছু কোম্পানি সমস্যায় ছিল। গত মাস দেড়েকে সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে কিছু কোম্পানি সংকট কাটাতেও পেরেছে। কিন্তু নাটকীয়ভাবে গত কদিন সমস্যাকে আরও বড় করে দেখানো হচ্ছে। সামিট, বসুন্ধরাসহ কয়েকটি কোম্পানির ব্যাংক হিসাব জব্দ ও নিরীক্ষার আওতায় আনার পর এই কারসাজিটা জমেছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রেস রিলিজের সূত্র ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ ও ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ চালানো হচ্ছে- এমন অভিযোগ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠিও দিয়েছেন গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান শাহ আলম। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের (মানি লন্ডারিং) অভিযোগ অনুসন্ধান করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত ৫ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
চিঠিতে দেশের অর্থনীতিকে ‘রক্ষা’ করতে এবং ‘সাংবাদিক’সহ বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ‘লাখ লাখ’ পরিবারের জীবিকার স্বার্থে এসব ‘অপপ্রচার’ ও ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ বন্ধের ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। বসুন্ধরার এই চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সিআইডির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে বলা হয়, সিআইডির প্রেস রিলিজ এবং এর সূত্র ধরে হওয়া সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ ও ‘সাজানো’ অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়েছে।
পাশাপাশি এসব কারণে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ঋণমান ও বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার খরচে (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও চিঠিতে সতর্ক করে দেন আকবর সোবহান। বসুন্ধরা গ্রুপের চিঠিটি প্রকারান্তরে সরকারের জন্য একটি থ্রেট এবং এটি বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানেরই কথা। একদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনীতি চাঙা করার চেষ্টা, আরেকদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি। এই ফাঁকে আকস্মিক ঝড় বিজনেস হাউসগুলোতে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে, তা নিয়েও নানা কথার তেজ বাড়ছে। সময়টার মাঝে নানা ফোড়ন পড়ছে। কেউ বলছেন, সংস্কার শেষ করার পরই নির্বাচন হওয়া উচিত। এমন নানা কথার কচলানির মাঝে ক্ষমতাচ্যুত দল ও তাদের সহযোগীদের পুনরুত্থানের চেষ্টা-তদবিরের ঠান্ডা আয়োজনও বেশ চাঙা। আর এ সময়েই শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে উড়ো খবর। ভারত ছেড়ে তিনি আরব আমিরাতের আজমান শহরে আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর বেশ চাউর। আরব আমিরাতের আজমানে শামীম ওসমানের নিজের একটি বাড়ি আছে বলে প্রচারিত। তবে এই উড়ো খবরকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা। শেখ হাসিনা এখনো ভারতেই অবস্থান করছেন বলে জোর দাবি তাদের।
শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে থাকার ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যায় বেশ কিছুদিন আগেই। এদিকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে মোদি সরকারকে দেশের ভেতরে-বাইরে যথেষ্ট চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। মোদি সরকারকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ অবস্থায় শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য কোথায়, নাকি তিনি দীর্ঘ সময় ভারতেই অবস্থান করবেন- সে বিষয়েও নিশ্চিত তথ্য নেই।