Thikana News
১৮ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪


 
বিএনপি-জামায়াত উতলা ♦ বাম দলে ওলটপালট

সংস্কারে সেনাতুষ্টির উদ্গিরণ

সংস্কারে সেনাতুষ্টির উদ্গিরণ


যৌক্তিক সময়, প্রয়োজনীয় সময়, যথাসময়ের ফেরে আর যাচ্ছে না বিএনপি-জামায়াত। সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দল দুটির। সেনাপ্রধানের ১৮ মাসের সময়েও ইদানীং সমূহ সন্দেহ তাদের। তাড়াতাড়ি নির্বাচনের কথা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছে বিএনপি। জামায়াতও ক’দিন ধরে একই পথে।     
দুই দলের সমীকরণ আলাদা হলেও নির্বাচন বিলম্বে ঘোরতর আপত্তি তাদের। জামায়াত এত দিন সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য যত দরকার তত সময় দেওয়ার কথা জানালেও এখন বিগড়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের টুকটাক সমালোচনা শুরু করেছে। হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও শুনিয়েছে। বিএনপি বলছে, এ সরকারে শেখ হাসিনা এবং ওয়ান ইলেভেন সরকারের বেনিফিশিয়ারিরাও আছে। এটি তাদের কাছে বেশ আপত্তিকর, আগামীর জন্য অ্যালার্মিংও। জামায়াতের সাম্প্রতিক হিসাবও তা-ই। আবার বিএনপি-জামায়াত উভয় দলেই পারস্পরিক ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া ও খাওয়ার সন্দেহ।
আওয়ামী লীগ পালানোর পর ফুটপাত, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, মাদক পাচারের রুটের মতো টাকার মেশিনের জায়গাগুলো এখন বিএনপির ক্যাডারদের দখলে। বিজনেস হাউসসহ ব্যবসায়ীদের কাছেও বেশ যাতায়াত। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ নেতাদের এলাকায় প্রত্যাবর্তনেও টাকা আদায় করছে। মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দাগানোর কাণ্ডও চলছে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে বেশ কঠোর। বিশেষ করে, তারেক রহমান বারবার সতর্ক করছেন। কথা না শোনায় পদাবনতি, এমনকি কমিটি বাতিল পর্যন্ত করছেন। কিন্তু দমানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে জামায়াত-হেফাজত-চরমোনাই সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়ে গোল দেওয়ার আশা করছে। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা, যুদ্ধাপরাধী ইত্যাদি তকমায় তাদের কোণঠাসা করতে চায় বিএনপি। এর মাঝে সমন্বয়কদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশের পর বিএনপির গ্ল্যামারে টোকা পড়ছে।
এ রকম অবস্থায় নির্বাচন যত দেরি হবে বিপ্লবী বামদের একটু গা ঝাড়া দেওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কাসহ আশপাশের কয়েকটি দেশে বামদের উত্থান বাংলাদেশের লাল ঝান্ডাধারীদের মধ্যে একধরনের পুলক তৈরি করে। এরই মধ্যে সেই পুলকে ধাক্কা পড়ে গেছে। বাস্তবতার মাঝে সে ধরনের ভূমিকা না রেখে তারা আছেন ফেসবুকে দু-চার লাইনের ট্রল বা টক শোতে কিছু জ্ঞানী কথা নিয়ে। ১৪ দলে যুক্ত বামেরা বাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে অনেক আগেই। মন-মগজ আওয়ামী লীগের কাছে বন্ধক রাখার বাইরে থাকা বামরাও পারছে না মাঠে নেমে কাজ দেখাতে। তাদের মধ্যেও আবার ব্যক্তিগত আমিত্ববোধের দ্বন্দ্ব। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষে কাছে পৌঁছার কোনো জুতসই রাস্তাও তারা করতে পারছে না। মানুষের মাঝে সমাজ পরিবর্তন ও প্রগতির ধারা বিস্তারের কোনো অ্যাজেন্ডাও দেখা যাচ্ছে না। এতে বামদের নিয়ে আকাক্সক্ষার জগৎটাই ফাঁকা। অথচ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে উচ্চারিত সামরিক শক্তি। দেশ সৃষ্টি, রক্ষা এবং গড়ার কাজে সামরিক বাহিনীর একেকটি উদাহরণ নতুন করে আলোচিত।
একাত্তরে শৃঙ্খলার মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে যে কয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল, সেগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন সামরিক বাহিনীর অফিসাররা। স্বাধীনতা-উত্তরকালে আওয়ামী-ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠী বীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের প্রভাব এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় সামরিক বাহিনীর সমান্তরালে রক্ষীবাহিনী গঠন করে। মূল দলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিপর্যয়ের মধ্যে পঁচাত্তরে একদলীয় বাকশালের পতনেও সেনাবাহিনীর ভূমিকা স্মরণ করতেই হয়। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী জনগণের মধ্যে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজকে উজ্জ্বল করতে মুক্ত অর্থনীতি চালু করে। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসারদের পুলিশে অন্তর্ভুক্ত করে পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন করেন তিনি। রাজধানী ঢাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসি তার সময়ে চালু করা হয়। বেসামরিক প্রশাসন, বিডিআর, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকেও সফলভাবে পুনর্গঠন করেন জিয়া। সমালোচিত হলেও কিছু কিছু সংস্কার হয়েছে জেনারেল এরশাদের জন্য। এরপর ১৯৮২ সালে সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা নিয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রণীত অর্থনৈতিক, সামাজিক যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। উপজেলা পদ্ধতিও চালু করেন।
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন হলে গণতন্ত্রীরা ক্ষমতায় এসে উপজেলা পদ্ধতি বাতিল করে দেয়। ২০০৭ সালেও সংস্কারের কিছু ছড়ি ঘুরিয়েছেন ১/১১-এর সেনা সদস্যরা। বাহিনীর প্রধান জেনারেল ম‌ইন ইউ আহমেদ পেছনে থেকে ক্ষমতার কলকাঠি নাড়িয়েছেন। স্বল্প সময়ে দেশব্যাপী জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, হাতিরঝিল প্রকল্প, বনানী সেতু নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ও সংস্কারে সামরিক বাহিনী দৃশ্যপটে চলে আসে। এবারের ছাত্র-জনতার বিপ্লবেও আশ্চর্য রকমের ভূমিকা সেনাবাহিনীর। এখন সংস্কারেও সেনাবাহিনী বেশ প্রাসঙ্গিক।
সাড়ে পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে রাষ্ট্রের সবগুলো সংগঠন বিনষ্ট হয়ে গেছে। পুলিশকে দিয়ে জনগণের ওপর অত্যাচার করার কারণে জনগণের ক্ষোভ ফেটে পড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে। অনেক থানা জ্বালিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে কর্মস্থল ত্যাগ করে। পরে কচ্ছপ গতি নিয়ে পুলিশ কাজ শুরু করে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার রাজধানীসহ সারা দেশে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌ ও বিমানবাহিনীকেও বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর কেবল সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এখন একই স্মারক ও তারিখ ঠিক রেখে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। সেনাবাহিনী এখন দৃশ্যমান কী অবদান রাখে, সেদিকে চোখ মানুষের।

কমেন্ট বক্স