দিন যত যাচ্ছে নিউইয়র্কে কবরের দাম তত বাড়ছে। কারণ এখন কবরের জায়গা তেমন নেই। ফলে নতুন নতুন জায়গা খুঁজতে হচ্ছে। এ কারণে দাম বাড়ছে। বাংলাদেশ সোসাইটিসহ বিভিন্ন সমিতি কবর কিনে রেখেছে। তবে বেশির ভাগ সংগঠনই কবর কেনে নিজেদের এলাকার মানুষের জন্য। যদিও বাংলাদেশ সোসাইটি সব এলাকার বাংলাদেশিদের জন্যই কবর কেনে। তবে করোনার সময় সমিতির বাইরে, বাংলাদেশি কমিউনিটির বাইরেও অন্যান্য মুসলিম কমিউনিটির মানুষের জন্য কবরের ব্যবস্থা করেছে। কারণ ওই সময়ে সবার পক্ষে কবর সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল না। করোনার পর বিভিন্ন সংগঠন কবর কেনার উদ্যোগ দিয়েছে। এ ছাড়া যেসব সংগঠনের কবর রয়েছে, তারাও কবরের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একাধিক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, লং আইল্যান্ডে কবরের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই নিউজার্সিমুখী হচ্ছেন। সেখানে কবরের দাম এখনো কিছুটা কম। বাংলাদেশ সোসাইটি করোনার সময় অনেক কবর মানুষকে দিয়ে দেওয়ায় তারা নতুন কবর কেনার উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা গেছে, গত বছর মানিকগঞ্জ কল্যাণ সমিতি ১৮০টি কবর কেনে। এর মধ্যে তারা ১৬০টি কবর সংগঠনের বিভিন্ন সদস্যের নামে ক্রয় করেছে। ২০টি কবর তারা বরাদ্দ রেখেছে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য। প্রতিটি কবরের দাম ধরা হয়েছিল ৬০০ ডলার করে। নিউজার্সির ৪৫ ইগরেট, ক্রসিং রোডে এই কবরস্থান।
সংগঠনের সভাপতি সাজ্জাত সেলিম বিশ্বাস জানান, তারা সমিতির পক্ষ থেকে এসব কবর কিনেছেন। কবর কেনার পর সমিতির একজন সদস্য মারা যান। তাকে সেখানে সমাহিত করা হয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সজিব চৌধুরী বলেন, আমরা গত বছর ১৮০টি কবর কিনি। এর মধ্যে ১৬০ জন ৬০০ ডলার করে নিজেরা কবর কিনে নিয়েছেন। ২০টি কবর অবশিষ্ট রেখেছিলাম। আমরা নিজেদের সমিতির মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য মানুষকেও কবর কেনার সুযোগ দিয়েছি। কবরস্থানটি কেনার পর ব্রুকলিনে আমার প্রতিবেশী জোবায়ের মনির মারা যান। তার নামে কোনো কবর কেনা না থাকলেও তার বোন একটি কবর কিনেছিলেন, সেই কবরে তাকে সমাহিত করা হয়। তিনি বলেন, কবরগুলো যে দামে কেনা হয়েছিল, সে দামেই বিক্রি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মনির সাহেবকে কবর দেওয়ার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল কবরস্থানে যোগাযোগ করা হয়। সেখানে একটি কবরের দাম চাওয়া হয় ৪৫০০ ডলার। সেখানে আমরা ৬০০ ডলারে একটি কবরের ব্যবস্থা করেছি। আগামী দিনে কবরস্থানের সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ও জেএমসির পরিচালনা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, আমাদের সোসাইটির কেনা কবর রয়েছে। আমরা আরও নতুন কবর কিনব। আগে কবরের দাম যা ছিল, এখন তার চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ফলে এখন আর কম দামে কবর কেনা যাচ্ছে না। বিশেষ করে ওয়াশিংটন মেমোরিয়ালে, লং আইল্যান্ডে কবরের দাম অনেক বেশি। নিউজার্সিতে দাম তুলনামূলক কম হলেও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
বাংলাদেশি আমেরিকান সোসাইটির সভাপতি ও বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা সোসাইটির অনেক কবর করোনার সময় মানুষকে দিয়েছি। আমাদের কমিউনিটির বাইরের মানুষকেও দিয়েছি। আমরা দায়িত্বে থাকার সময়েই সোসাইটির কবরের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বর্তমান কমিটিও চেষ্টা করছে কবরের সংখ্যা বাড়ানোর। কবরের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। কারণ করোনার সময় হঠাৎ করেই এত সংখ্যক কবরের দরকার হবে, এটা কারও ধারণার মধ্যেও ছিল না।
তিনি আরও বলেন, বাস্তবতা বিবেচনা করে এখানকার বিভিন্ন সংগঠন বর্তমানে কবর কিনছে। যেসব সংগঠনের আগে কবরের প্রকল্প ছিল, তারা কবরের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আর যাদের আগে কবরের প্রকল্প ছিল না, তারা কবরস্থানের প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। নতুন করে অনেক সংগঠনই কবর কিনছে। কেউ মারা গেলে এখান থেকে লাশ দেশে পাঠানো অনেক ঝামেলা ও সময়ের ব্যাপার। সেই সঙ্গে ব্যয়সাপেক্ষও। সেসব দিক বিবেচনা করে আগেভাগেই বিভিন্ন সংগঠন কবরের ব্যবস্থা করছে।
তার মতে, কবরের জন্য সবার একটি বাজেট থাকা দরকার। এখন ওয়াশিংটন মেমোরিয়ালে কবর কিনতে ১২ হাজার থেকে ১৬ হাজার ডলার লাগছে। এত ডলার একসঙ্গে অনেকের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না। তখন বিপত্তি দেখা দেয়। এ কারণে এই খাতের জন্য অবশ্যই মানুষের সঞ্চয় দরকার। যাতে তিনি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেলে কবর কেনার জন্য কারও কাছে হাত পাততে না হয়।