যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় হেলেনের তাণ্ডবে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের বানকম্ব কাউন্টিতেই অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
অ্যাশভিল কাউন্টির জরুরি সেবা-বিষয়ক কর্মকর্তা রায়ান কোল বলেছেন, ‘মনে হলো যেন অসুরীয় তাণ্ডব চলছে। আমরা কেউই আমাদের জীবদ্দশায় এমন ঘূর্ণিঝড় দেখিনি।’
নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর রয় কুপার বলেন, এটি ইতিহাসের অন্যতম ধ্বংসাত্মক বিপর্যয়। পশ্চিম-উত্তর ক্যারোলাইনার যাদের সঙ্গেই আমি কথা বলি, তারা বলেন, এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনো দেখেননি। ১৯টি রাজ্যের অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল মিলে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছে। ফেডারেল সরকারও তদারকিতে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হেলেন গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ফ্লোরিডায় আঘাত হানে। সেখানে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে উত্তর দিকে জর্জিয়া, ক্যারোলাইনা এবং টেনেসি অঙ্গরাজ্যে আছড়ে পড়ে। রাজ্যগুলোজুড়ে বিদ্যুৎ এবং মোবাইল পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। গাছ উপড়ে পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিমা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, এই ঘূর্ণিঝড়ে শুধু পানি ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ ও পরিবহন রুটের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ হবে ১০০ বিলিয়ন ডলার। বিস্তারিত ক্ষতির পরিমাণ এখনই নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
অনেক বাসিন্দা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে নিজেদের ধ্বংস হওয়া বাড়ি ছাড়া কিছুই দেখতে পাননি। এখনো অন্তত ১ হাজার মানুষ আত্মীয়স্বজনদের খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
আমেরিকান রেডক্রস জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোতে ১৪০টিরও বেশি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। প্রায় ২ হাজার মানুষ সেগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
অ্যাশভিল কাউন্টির ম্যানেজার এভ্রিল পিন্ডার জানিয়েছেন, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি খাবার এবং পানীয় জল সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (এফইএমএ) জানায়, ছয় ঘণ্টার মধ্যে হেলেন হারিকেনে রূপ নেয়। ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের (এনএইচসি) তথ্য অনুযায়ী, হেলেনের প্রভাবে ফ্লোরিডা উপকূলের কোথাও কোথাও ১৫ ফুট বা তার বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা হারিকেনগুলোর মধ্যে শক্তির বিবেচনায় হেলেন ১৪তম। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে স্থলভাগেই ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪২০ মাইল পর্যন্ত গতিতে বাতাস বয়ে গেছে। এর আগে ২০১৭ সালে হারিকেন আইডা এবং ১৯৯৬ সালে হারিকেন ওপালের সময় ঘণ্টায় ৪৬০ মাইল গতিতে বাতাস বইতে দেখা যায়।
ঠিকানা/এনআই