Thikana News
২৫ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

গুটিবাজদের কব্জায় জালালাবাদ

সংকট সমাধানে মুরব্বিদের চেষ্টা ব্যর্থ হতে চলেছে
গুটিবাজদের কব্জায় জালালাবাদ
একটি প্রবাদ আছে- ‘চোরকে বলে চুরি করতে, গৃহস্থালীকে বলে সজাগ থাকতে।’ এ ধরনের লোককে সমাজ নানা বিশেষণে চেনে। কিন্তু এই প্রবাসে এরা পরিচিত ‘গুটিবাজ’ হিসাবে। প্রবাসের সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক এমন কিছু ‘গুটিবাজ’-এর কব্জায় পড়েছে। এদের কারণে ঐহিত্যবাহী সংগঠনটি হারাতে বসেছে ঐক্যের অহঙ্কার। সংগঠনটিকে ‘গুটিবাজ’রা আস্ত রাখেনি, ভেঙে করে দিয়েছে দুই টুকরো। 
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন এখন চরম সঙ্কটে। বৃহত্তর সিলেটবাসীর প্রায় ৩৭ বছরের ঐতিহ্যের সংগঠনটি এখন দুই ভাগ। মুলতঃ ভবন কেনা নিয়ে তৈরি হয়েছে এই সঙ্কট। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিজয়ী বদরুল-মইনুল প্যানেল নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংগঠনটির হাল ধরেছিল। গুটিবাজদের ইন্ধন ও কুপরামর্শে এখন বদরুল ও মইনুলের মধ্যে সম্পর্ক ‘দা-কুমড়ো’র। সঙ্কটের সমাধান হবে সামাজিকভাবে নাকি আদালতের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করে কেউ এখন আর বলতে পারছেন না। তবে, সঙ্কটের সমাধানে মুরব্বীদের চেষ্টা ব্যর্থ হতে চলেছে, তা নানান আলামত দেখে ধারণা করা যাচ্ছে। 
সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি সভাপতি বদরুল হোসেন খানকে পাশ কাটিয়ে এবং গঠনতন্ত্র অমান্য করে ‘জালালাবাদ ভবন’ কিনেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনের শরণাপন্ন হয়েছেন বদরুল খানের নেতৃত্বাধীন কার্যকরী কমিটি। এর আগে নানাভাবে এ নিয়ে একাধিক সালিশ-বৈঠকও হয়েছে। কেউই ছাড় দেননি, অনঢ় ছিলেন। পাল্টাপাল্টি সাধারণ সভা হয়েছে। বদরুল খানের নেতৃত্বাধীন কমিটির ডাকা সাধারণ সভায় মইনুলকে স্থায়ীভাবে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মইনুলের ডাকা পাল্টা সাধারণ সভায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বদরুল খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিমকে। এরপর কার্যত দুই ভাগ হয়ে যায় জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। সহ-সভাপতি (সুনামগঞ্জ) শাহীন কামালীকে নিয়ে পাল্টা নেতৃত্ব ঘোষণা করেন মইনুল ইসলাম। এ ঘটনার প্রায় এক মাস পার হয়েছে। ‘মুরব্বী’রা নানাভাবে আলোচনা চালিয়েছেন সঙ্কট সমাধান করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে। কিন্তু গুটিবাজদের কারণে তা সম্ভব হয়নি। 
এখানে উল্লেখ্য, পাল্টাপাল্টি সভায় এমন কিছু লোক ছিলেন, যারা দুই সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। তাদের অনেকে পাল্টাপাল্টি বহিস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন। এদেরই ‘গুটিবাজ’ বলছেন সাধারণ সদস্যরা। 
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সদস্যরা বলছেন, প্রতিটি সঙ্কটের সমাধান আছে। কিন্তু কিছু লোকের কারণে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এসব ‘বাজে’ লোক বদরুল খানকে অনঢ় অবস্থানে থাকতে বলছে। আবার একই কথা বলছে মইনুলকেও। ফলে দুপক্ষই অনঢ় অবস্থানে থেকে লড়ে যাচ্ছেন। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের প্রাণের সংগঠন। 
সঙ্কটের সমাধান কোথায় জানতে চাইলে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান ট্রাস্টি ও অভিজ্ঞ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী ঠিকানাকে জানান, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে যে সঙ্কট চলছে তা এখন আদালতে গড়িয়েছে। এখনো সামাজিকভাবে সঙ্কট সমাধানের সুযোগ আছে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ট্রাস্টি হিসাবে এ বিষয়ে আর বেশী কিছু না বলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তিনি। 
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের একজন অ্যাটর্নি হিসাবে মঈন চৌধুরী বলেন, তহবিল তছরুপ এবং ভবন কেনা নিয়ে যে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত করছে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস। অভিযোগ গঠনের আগে বিষয়টির সুরাহা করা উচিত। তিনি বলেন, ভবন কেনা নিয়ে অনিয়ম হয়েছে। তবে মইনুলের উদ্দেশ্য সৎ ছিল, প্রক্রিয়াগত ভুল ছিল উল্লেখ করে মঈন চৌধুরী বলেন, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে খেসারত দিতে হবে। 
মঈন চৌধুরী বলেন, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনে আরো কোনো অনিয়ম হয়েছে কীনা তাও তদন্ত করছে। এখনো সময় আছে সমাধানের। তবে সমাধান করতে গিয়ে নতুন করে বেআইনি কিছু না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ট্রাস্টি ঠিকানাকে জানান, আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি সঙ্কটের সমাধান করা। সাধারণ সদস্যরা সংগঠনের বৃহৎ স্বার্থের কথা চিন্তা করছেন। কিন্তু একটি মহল সমাধান চায় না। তারা দু’পক্ষকে যার যার অবস্থানে অনঢ় থাকতে বলছে। এটা কাম্য নয়। আমরা চাই সঙ্কটের সমাধান হোক। জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশর তার গৌরব ফিরে পাক। 
-

কমেন্ট বক্স