বিমানবন্দরে পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু এ বছর বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের আগমনে বিমানবন্দরে রাজসিক কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। অথচ গত ১৬ বছর ধরে কমপক্ষে আড়াইশো লোকের বহর সরগরম করে রাখতো বিমানবন্দর থেকে হোটেল পর্যন্ত। রাজসিক আয়োজন দূরে থাক, সাংবাদিক ও নিরাপত্তা কর্মীসহ মাত্র ৫৭ জন সফরসঙ্গী নিয়ে এবারের জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে এসেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সরকার প্রধান হিসাবে যে জৌলুস থাকার কথা, তা একেবারেই ছিল না ড. ইউনূসের মাঝে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পা রেখেই বিশ্বের অন্যতম প্রধান ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন, যা গত তিন দশকে এমনটি হয়নি। এ কারণে প্রশংসার সাগরে ভাসছেন এই নোবেল বিজয়ী। বিশ্বের উজ্জ্বল করেছেন বাংলাদেশিদের নাম।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে নিউইয়র্কের জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডিএম সালাউদ্দিন মাহমুদ বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানান।
ছোট সফরসঙ্গী নিয়ে ড. ইউনূসের আগমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। অনেকই প্রশংসা করে লিখেছেন- আগে রাষ্ট্রের অর্থ যথেচ্ছাভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এমনকী আগে যেখানে সরকার প্রধানরা চার্টার্ড বিমানে আসছেন, সেখানে ড. ইউনূস এসেছেন বাণিজ্যিক ফ্লাইটে। এক্ষেত্রে উদারতা দেখিয়েছেন তিনি। এমন রাষ্ট্রনেতাই আমরা চেয়েছি।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের বাণিজ্যিক ফ্লাইটটি ঢাকায় সোমবার ভোর ৫টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে আসে।
জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ড. ইউনূস বেশ কয়েকজন সরকার প্রধান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রধানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন। ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে মিলিত হন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের এটিই প্রথম বৈঠক।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
এবারের অধিবেশন শুরু হয়েছে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে। এ অধিবেশনে সংঘাত নিরসন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করাসহ ভবিষ্যত-কেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর মাত্র দেড় মাসের মাথায় ড. ইউনূস জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন। তিনি ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন।