Thikana News
১৮ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪


 

দেখিয়া শব গৃধিনী সব করিতেছে মহোৎসব

দেখিয়া শব গৃধিনী সব করিতেছে মহোৎসব


রক্তাক্ত জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সোপান বেয়েই স্বৈরশাসনমুক্ত বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুরুতে দেশের আপামর জনসাধারণের সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেও অল্প দিনের ব্যবধানেই অনেক নেতা বোল পাল্টাতে শুরু করেন। বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতারা ইতিমধ্যে জোর গলায় দাবি করেন, ছাত্র-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থানের মূল নিয়ামক শক্তি ছিলেন তারা এবং এবারের অভ্যুত্থানে তাদের ৪২২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে ছোটখাটো রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও ইনিয়ে-বিনিয়ে অভ্যুত্থানের সাফল্যে ভাগ বসাতে কসরত শুরু করেছেন। টক শো ও বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে তাদের অনলবর্ষী ও সারগর্ভ বক্তব্য শুনতে শুনতে দেশবাসী বহুলাংশে অতিষ্ঠ এবং ক্লান্ত-অবসন্ন।
অথচ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলনগুলোর সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান হতভাগ্য দেশবাসীর অজানা নয়। দেশবাসী স্বচক্ষে অবলোকন করেছে, বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর অগ্নিঝরা বক্তব্য এবং লাখ লাখ নিবেদিতপ্রাণ কর্মীর গগনবিদারী আওয়াজ স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশি বাধার মুখে নিমেষে বালির বাঁধের মতো হাওয়ায় মিশে গেছে। নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে ডিভিশনসহ হাজতবাস করেছেন এবং নিরীহ কর্মীরা পুলিশের হাতে চরমভাবে নির্যাতিত-নিগৃহিত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন। বিক্ষোভ-বিদ্রোহের পূর্বে যেসব নেতা ছাই মেখে সরকারকে ধরার সদম্ভ ঘোষণা দিয়েছিলেন, সরকারি প্রতিবন্ধকতার মুখে তারা ছাইয়ের বস্তাসহ গোপন আস্তানায় নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর পুলিশি হয়রানি ও নির্যাতনের ভয়ে হাজার হাজার অসহায় নিরীহ কর্মী ঘরছাড়া-দেশছাড়া এমনকি দুনিয়াছাড়া হয়েছেন। দেশবাসীর দেখামতো বিগত ১৫ বছরে এ ধরনের আন্দোলন-সংগ্রাম বারবার দানা বেঁধে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারও কঠোর হস্তে তা দমন করায় কার্যত কোনো আন্দোলনই সাফল্যের মুখ দেখেনি। উল্টো ক্ষমতাসীন সরকারের সুরক্ষিত হর্মের ভিত উত্তরোত্তর সুদৃঢ় ও টেকসই হয়েছে। আবার সরকারের নির্বিচারে হত্যা-গুম-লুণ্ঠন ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো বারবার আন্তর্জাতিক আদালতে ধরনা দিয়ে ফলাফলস্বরূপ কার্যত পর্বতের মূষিক প্রসবই পেয়েছে। আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও গণতন্ত্র হরণের বিরুদ্ধে বারবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও শেষমেষ অশ্বডিম্বই তাদের ভাগ্যে জুটেছে। পক্ষান্তরে বিরোধী দলগুলোর নির্বাচন বর্জন, দিনের ভোট রাতে হওয়া, ৮% ভোটকে ৪২% এ পরিণত করে হাসিনা সরকার বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর কাছ থেকে বৈধতাও ছিনিয়ে নিয়েছিল। মোদ্দাকথা, হাসিনা সরকারের যাবতীয় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতানেত্রীরা বারবার পেঁয়াজ-পেঁয়াজু দুটোই খুইয়েছেন; কারাভোগসহ নানা নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়েছেন এবং অনেক ডাকসাইটে নেতা গুরুতর অসুস্থ হয়ে স্বাভাবিক হাঁটা-চলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাই সাদামাটা ভাষায় বিরোধী দলগুলোর রক্তাক্ত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সাফল্যের দাবিকে সত্যের অপলাপ বললে ব্যক্তিগত দৃষ্টিতে অতিশয়োক্তি হবে না।
সংগত কারণেই বলতে হচ্ছে, স্বৈরাচারী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার সংগ্রামে বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা প্রয়োজনে মৃত্যুর জন্য আদৌ তৈরি ছিলেন না। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা যাবতীয় ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকারে বদ্ধপরিকর থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতারা সর্বদা মসনদ দখলের দিবাস্বপ্নে বিভোর ছিলেন। তাই সরকারি সামান্য দমন-পীড়ন এবং পুলিশি বাধার মুখে বিরোধী দলগুলোর যাবতীয় লম্ফঝম্ফ ও আস্ফালন তাসের ঘরের মতো বাতাসে উড়ে গিয়েছিল এবং সরকারের ক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে স্বৈরশাসনে পরিণত হয়েছিল। আবার আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা গুলিবিদ্ধ কিংবা আহত-নিহত হলেও কেন্দ্রীয় নেতা-নেত্রীদের গায়ে লাঠির ঘা পড়ার খবরও পত্র-পত্রিকায় মেলেনি। পক্ষান্তরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমন্বয়ক এবং আমজনতা প্রয়োজনে মৃত্যুর জন্য পুরোপুরি তৈরি ছিলেন। মৃত্যুভীতিকে উপেক্ষা করেই বহ্নিমুখ পতঙ্গের মতো তারা ঝাঁকে ঝাঁকে বুকটান করে কামান বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন এবং নিজেরা মরেই মৃত্যুকে জয় করেছিলেন। কাঁদানে গ্যাস এবং মুহুমর্ুুহু গোলাগুলির মধ্যে পশ্চাৎপদ না হয়েই তারা বীরদর্পে সম্মুখপানে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাদের এই অকুতোভয় ও নির্ভীকতার কাছে স্বৈরাচারী হাসিনার যাবতীয় আগ্নেয়াস্ত্র-কামান-বন্দুক হার মেনেছিল এবং এশিয়ার সিংহী শেখ হাসিনা শিয়ালের মতো লেজ গুটিয়ে ভারতে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পেল।
বর্তমানে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে জাতীয় সংস্কার, দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ, অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণ দীর্ঘকাল মেনে নেবে না ইত্যাদি প্রসঙ্গ বিভিন্ন টক শো, প্রচারমাধ্যমে হরহামেশা উচ্চারিত হচ্ছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হচ্ছে, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সরকারি সম্পদ লুণ্ঠন-দখলদারিত্ব, পরবর্তীতে ভোটারবিহীন নির্বাচন, মিডিয়া ক্যু; বিপ্লব-প্রতিবিপ্লবে হাজার হাজার প্রাণহানি; দিনের ভোট রাতে নেওয়া, ৮% ভোটকে ৪২% ভোটের ঘোষণা; একমাত্র শিশু এবং পাগল ছাড়া নিরপেক্ষ বলতে কেউ নেই; শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন ইত্যাদি মূলত অঙ্কুরিত এবং পত্র-পল্লবিত হয়েছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের স্নেহসান্নিধ্যে-আশকারায় এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ মূলত আপামর জনগোষ্ঠী অর্থাৎ ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক-কৃষক-তাঁতি-জেলে-মেথর-মজুর তথা সর্বস্তর ও পেশার বাঙালির সমষ্টিগত ত্যাগের গৌরবোজ্জ্বল অর্জন। অথচ স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল বদনে কলঙ্কের কালিমা লেপন করেছিল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি-ক্ষমতাসীন সরকার-তাদের উচ্ছিষ্টভোগী ও স্বার্থান্বেষী মহল। সেই ধারাবাহিকতায় বারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার হাতবদল হলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ মদদ ও যোগসাজশে সরকারি কোষাগার লুণ্ঠন, অবাধ দখলদারিত্ব, কালোবাজারি, সিন্ডিকেটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, বিভিন্ন বাহিনীর অমানুষিক নির্যাতন ও দৌরাত্ম্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, চোরাচালান, বিনা বিচারে হত্যা-গুম-খুন, দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশে স্থায়ী পালঙ্ক পেতে বসেছে। এককথায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উত্থান-পতনের পর ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সরকারি কোষাগার লুণ্ঠন, ইয়াবা-ফেনসিডিল-মাদক সেবন, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ইত্যাদি কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫% বর্ধিত হারে ডালপালা বিস্তার করে বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে এবং দুরারোগ্য ক্যান্সারের মতো জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। অগত্যা শ্রুতিকটু শোনালেও বলতে হচ্ছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের রাজনৈতিক সংস্কারের সুবাদেই বাংলাদেশে অনিয়ম নিয়মে এবং অনাচার আচারে পরিণত হয়েছে; শোষণ-নির্যাতনের মাত্রা তুঙ্গে উঠেছে এবং মানবিক মূল্যবোধ-পরমতসহিষ্ণুতা ও ন্যায়বিচার নির্বাসনে গেছে।
প্রকৃত প্রস্তাবে বর্তমানে যারা নতুন করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতীয় সমস্যাদির সুষ্ঠু এবং বাস্তবসম্মত সমাধানের জিকির তুলছেন, তারাও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেরই অতীব চেনা-পরিচিত মুখ। তারাও কোনো না কোনো সময়ে ক্ষমতায় ছিলেন কিংবা ক্ষমতার কাছাকাছি ছিলেন। দেশবাসীর দৃষ্টিতে নিজেদের নিষ্কলুষ কিংবা ধোয়া তুলসী পাতা দাবি করার যৌক্তিকতা তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়। তাই অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের মতো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা জাতীয় মৌলিক সমস্যাদির কাক্সিক্ষত সংস্কার ও সমাধানের প্রত্যাশা করা নেহাত বোকার স্বর্গে বসবাসেরই নামান্তর।
এদিকে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড খানিকটা বিলম্বিত হচ্ছে বিবেচনায় ও বাস্তবতার পটভূমিতে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ৬০ দিনের জন্য সেনাবাহিনীর কমিশন্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন। অথচ দুর্ভাগ্যক্রমে তথাকথিত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা ওই প্রসঙ্গেও নানা ধরনের নেতিবাচক সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। দেশের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে একজন সমন্বয়ক দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেছেন, বিশেষ দলের ক্ষমতায়নের জন্য ছাত্র-জনতা প্রাণ বিসর্জন দেয়নি। তিনি আরও বলেছেন, নব্য চাঁদাবাজ ও দখলদারদের রং-বেরঙের পোস্টারে সারা দেশের দেয়ালগুলো ভরে গেছে। জনৈক উপদেষ্টা বলেছেন, দখলদারি-চাঁদাবাজি ও দুর্নীত এখনো চলছে। তাই চাঁদাবাজ ও অবৈধ দখলদারদের টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার বিরুদ্ধাচরণ করা হচ্ছে, তা বললে সম্ভবত ভুল বলা হবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, জাতীয় মৌলিক সমস্যাবলির স্থায়ী সমাধানপূর্বক চির-অধিকারবঞ্চিত বাংলার জনগণকে বৈষম্য ও অভিশাপমুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার খাতিরেই অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবানুগ ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব পদক্ষেপ স্বল্প সময়ে ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হলে বৈষম্যমুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েম হবে, ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে, গণতন্ত্র পুনর্জীবন লাভ করবে, ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি নতুন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, মনুষ্যত্ববোধের উন্মেষ ঘটবে এবং দেশবাসীর দুর্ভোগ চিরতরে লাঘব হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই চাঁদাবাজি-টোল আদায়-জবর দখল, মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য, অর্থ পাচার, চোরাচালান, অবৈধ মজুতদারি, সিন্ডিকেট ব্যবস্থা, পেশিশক্তির উপদ্রব, মাদকের ছড়াছড়ি ইত্যাদি কমে যাওয়ায় এবং নিতান্ত স্বল্প সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে মেট্রোরেল চালু হওয়ায় দেশের আমজনতা এর কল্যাণমুখী সুফল পেতে শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টামণ্ডলীর গতিশীল নেতৃত্ব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-আনসার-র‌্যাবের পাশাপাশি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কর্মচাঞ্চল্য অব্যাহত থাকলে অচিরেই দেশ ও জাতি নিশ্চিতভাবেই বহু অনাকাক্সিক্ষত অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। পতিত স্বৈরাচারের সাঙ্গপাঙ্গ ছাড়াও মুনাফাভোগী সিন্ডিকেট চক্র, রাজনৈতিক ফায়দালোভী; তথাকথিত জনদরদি রাজনীতিবিদ এবং নেতা-নেত্রী; কালোবাজারি, শোষক-নির্যাতক-লুণ্ঠনকারী গোষ্ঠী তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছে এবং ইতিমধ্যেই অনেক উচ্ছিষ্টভোগীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এমনতর বাস্তবতায় পতিত স্বৈরাচারের উচ্ছিষ্টভোগী ও দোসর, গায়ে মানে না আপনি মোড়ল গোছের রাজনীতিবিদ, লুটেরা গোষ্ঠী ও স্বার্থান্বেষী চক্র মৃতদেহের সন্ধানে নগ্ন নৃত্যরত শকুনির মতো আস্ফালন শুরু করেছে। পারস্পরিক যোগসাজশে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টির লক্ষ্যে একের পর এক সুকৌশলে গণহত্যা, নানা ধরনের দাবিদাওয়া ও রাজনৈতিক বায়নার বহর নিয়ে কিস্তিমাতের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আনসার বিদ্রোহ, শ্রমিক অসন্তোষ, সংখ্যালঘুর ওপর হামলা, গির্জা-মন্দির ভাঙচুর, মাজার ভাঙচুর, বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের অভ্যন্তরে মুসল্লিদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, মব জাস্টিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী তোফাজ্জল এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা শামীমকে পাশবিক নির্যাতনে খুন, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি-পাহাড়ি উপজাতি সংঘর্ষে কয়েকজনের প্রাণহানি ও সহায়-সম্পদের অবর্ণনীয় ক্ষয়ক্ষতি ইত্যাদি বস্তুত অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বদা বিব্রত রাখারই নামান্তর।
সারকথা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এবং ভুয়োদর্শী উপদেষ্টামণ্ডলীর উদ্ভাবনী শক্তির সুবাদে জাতীয় মৌলিক সমস্যাদির দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হলে পতিত স্বৈরাচার সরকারের প্রেতাত্মাদের কাঁধে ভর করা নব্য চাঁদাবাজ-দখলদার-ভূমিদস্যুদের সদ্আত্মা এবং রাজনীতির নামে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনা ভাগ্যবানদের সমাজচ্যুতি ও অপমৃত্যু ঘটবে। তাই রাজনীতির নামে দেশ ও জাতির ঘাড়ে সিন্দাবাদের একচোখা দৈত্যের মতো চেপে বসা গণদুশমন এবং স্বার্থপর লেফাফা দুরস্ত সমাজসেবকেরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাবতীয় পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত করছে। তারা নানা অপকৌশলে সরকারকে লেজেগোবরে পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিতে সর্বদা সক্রিয় রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা এবং পতিত স্বৈরাচারের পুনরুত্থান কিংবা নব্য স্বৈরাচারের ক্ষমতায়নের পথে যথাসাধ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। শকুন-শকুনিদের উল্লাসনৃত্যে ভাগাড় যেমন অহোরাত্র সরব থাকে, বাংলাদেশেও সম্প্রতি পতিত স্বৈরাচারের পুনরুত্থান-প্রত্যাশী এবং নব্য স্বৈরাচারের দোসর মনুষ্যরূপী হায়েনাদের উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হচ্ছে।
উপসংহারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এবং উপদেষ্টামণ্ডলীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রবাদ-প্রবচন অনুসারেÑকাপুরুষ বারবার মরে; পক্ষান্তরে বীর জীবনে একবারই মরে। শ্রদ্ধেয় উপদেষ্টামণ্ডলী, আপনাদের সিংহভাগই অনন্যসাধারণ প্রতিভাধর, করিতকর্মা, ভুয়োদর্শী, বিচক্ষণ, পলিতকেশ এবং গতিশীল নেতৃত্বের অধিকারী। নিজেদের সততা, বিচক্ষণতা, সুদীর্ঘ কর্মজীবনের প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও কর্মনিষ্ঠার বদৌলতে চির-অধিকারবঞ্চিত বাঙালিকে একটি বৈষম্য-শোষণমুক্ত, কল্যাণমুখী, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহারদানে সর্বাত্মক অবদান রাখুন। মহান আল্লাহ আপনাদের সহায়। আমিন!
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কমেন্ট বক্স