Thikana News
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

যেভাবে প্রবাসীদের ভোটও নিশ্চিত করা সম্ভব

যেভাবে প্রবাসীদের ভোটও নিশ্চিত করা সম্ভব
বর্তমানে বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা কত? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে খুব বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা এক কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৬০ জন। সভা-সমাবেশের বক্তৃতায় অনেকে প্রবাসীর সংখ্যা দুই কোটি বলে উল্লেখ করেছেন। আমরা যদি দেড় কোটিও ধরি তাহলে ১৬ কোটির বাংলাদেশে তা ৯ শতাংশের ওপরে। সংখ্যাটি কিন্তু অনেক বড়। এই বিপুলসংখ্যক দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিকে জাতীয় নির্বাচনসহ দেশের বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট দিতে না দেওয়া মহাঅন্যায়। একজন মানুষ যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারেন তাহলে তাঁর হৃদয়ে নাগরিকত্বের অধিকারবিষয়ক অনুভূতি দুর্বল হয়ে যায়। গণতন্ত্রের প্রতি, নির্বাচিত সরকারের প্রতি তাঁর অধিকারবোধ কমে যায়। ৯ শতাংশ মানুষ জাতীয় সংসদের ২৭টি আসনের মালিক। অথচ এই বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিকে আমরা ভোটের প্রশ্নে গুরুত্বই দিচ্ছি না!
আমি জাতিসংঘের সিভিল ও ভোটার রেজিস্ট্রেশনের একটি দলের নেতৃত্ব দিতে পূর্ব ইউরোপের কসোভোতে কাজ করেছিলাম। এ সময় আমার আরেকজন সহকর্মী ছিলেন বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান। অস্ট্রেলিয়ার কোনো একটি নির্বাচনে তিনি ভোট দিতে পারেননি। এটি ছিল তাঁর নিজের ব্যর্থতা।  সরকার প্রবাসী হিসেবে তাঁর ভোটদানের ব্যবস্থা করেছিল; কিন্তু তিনি নিজের দায়িত্বহীনতার কারণে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এ কারণে তাঁকে নাকি ৫০ ডলার জরিমানাও করা হয়েছিল।
পৃথিবীর ১৪১টি দেশ তার দেশের অনাবাসী বা প্রবাসী নাগরিকদের ভোটদানের ব্যবস্থা রেখেছে। উন্নত যোগাযোগের কারণে আজকের পৃথিবী এতটাই ছোট হয়ে গেছে যে, আমরা চাইলেই তৎক্ষণাৎ এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যেতে পারি। পৃথিবী যথার্থই এখন একটি বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা অন্য কোনো কারণে একজন ব্যক্তি পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় অবস্থান করতেই পারেন। এই ভৌগোলিক অবস্থান আজকের দিনে ভোটাধিকার প্রয়োগের অন্তরায় হবে, এটি একদমই মেনে নেওয়া যায় না।
২০২৩ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীরা পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। খুব জটিল একটি প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়, যা মোটেও প্রবাসীদের জন্য অনুকূল ছিল না।
নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘ভোটার তালিকায় নাম আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে... বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। এ ধরনের ব্যক্তিদের কেউ ভোট দিতে চাইলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে পোস্টাল ব্যালট পেপারের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনে ভোটারের নাম, ঠিকানা এবং ভোটার তালিকায় তাঁর ক্রমিক নম্বর উল্লেখ করতে হবে। রিটার্নিং অফিসার...অবিলম্বে ওই ভোটারের কাছে ডাকযোগে একটি পোস্টাল ব্যালট পেপার এবং একটি খাম পাঠাবেন। ভোটার পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য ব্যালট পেপার পাওয়ার পর নির্ধারিত পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে ব্যালট পেপারটি তাঁর কাছে পাঠানো খামে ডাকযোগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাবেন। রিটার্নিং অফিসার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাওয়া ব্যালটের ফলাফল মূল ফলাফলের সঙ্গে যোগ করে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করবেন।...’ (দৈনিক প্রথম আলো, ২১ নভেম্বর ২০২৩) এই জটিল পদ্ধতি অনুসরণ করে কতজন প্রবাসী ভোট দিতে পেরেছিলেন, তা আমার জানা নেই। সংখ্যাটি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রকাশ করলে আমাদের কথা বলতে সুবিধা হতো।
এখন বলি, কত সহজে কাজটি করা যায়। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে একটি বড় লাল বোতাম থাকবে। সেখানে লেখা থাকবে ‘প্রবাসী ভোট’। সেই বোতামে চাপ দিলে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নাম্বার এবং সিক্রেট কোড চাওয়া হবে। ভোটাররা আগে থেকেই তাদের বর্তমান ফোন নাম্বার ও ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে রাখবেন, যাতে সিক্রেট কোডটি শুধু তাঁর ই-মেইল ও ফোনে আসে। এই তথ্যগুলো দিলেই তাঁর নির্বাচনী এলাকার ডিজিটাল ব্যালট স্ক্রিনে চলে আসবে। তিনি তাঁর পছন্দের প্রতীকে ভোট দিয়ে সাবমিট বাটনে চাপ দেবেন। হয়ে গেল ভোট। দেড়-দুই কোটি মানুষের মধ্যে হয়তো ৬০-৭০ লাখ ভোটার আছেন, তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘরে বসে ভোট দিয়ে ফেলতে পারবেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সময়ের ভিন্নতার কারণে হয়তো পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২৪ ঘণ্টা লাগবে। তাই বাংলাদেশে যেদিন ভোট হবে তার এক দিন আগে প্রবাসীদের ভোটদান উন্মুক্ত করতে হবে, যাতে বাংলাদেশে ভোটদান শেষ হওয়ার আগেই বা সেই সময়ের মধ্যেই প্রবাসীদেরও ভোট প্রদান শেষ হয়ে যায় এবং ফলাফল ঘোষণায় কোনো রকম বিলম্ব না হয়।
লেখক : কবি ও কলামিস্ট

কমেন্ট বক্স