বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ভিজিট ও স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকায় আসেন। যারা ভিজিট ভিসায় আসেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে যান। আবার কেউ কেউ থেকে যান। অন্যদিকে যারা স্টুডেন্ট ভিসায় আসেন, তাদের মধ্যেও অনেকে পড়াশোনা শেষ করে চলে গেলেও অধিকাংশই থেকে যান। এই দুই ক্যাটাগরির ভিসায় আসা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা থেকে যান, তারা যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করতে চান। তাদের অনেকে চাকরি করেনও। কেউবা অ্যাসাইলাম আবেদন করেন। যারা থেকে যান, তারা স্ট্যাটাস হারানোর আগেই বিভিন্নভাবে থাকার সুযোগ বের করার চেষ্টা করেন। সম্প্রতি নতুন একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তা হলো দেশ থেকে আমেরিকায় আসার পর এখানে তারা বিয়ের মাধ্যমে থাকতে চান। বিয়ে করার জন্য পাত্র/পাত্রী চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেন। এই সংখ্যাটা পুরুষদের ক্ষেত্রেই বেশি। তারা বিয়ের জন্য এখানকার পরিচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে কিংবা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পাত্রী খোঁজেন। দেশ থেকে এসে এখানে বিয়ে করে থেকে যেতে চান কিংবা বিয়ে করতে চান, এমন মেয়ের সংখ্যা কম হলেও এখন কিছু কিছু পাওয়া যাচ্ছে। তারাও এখানে এসে বিজ্ঞাপন দিয়ে পাত্র খোঁজেন। দেশ থেকে আসা বেশ কিছুসংখ্যক ছাত্রছাত্রী রয়েছেন, যারা লেখাপড়া শেষে এখানে চাকরি করছেন এবং পাত্র/পাত্রী খুঁজছেন। অনেকে আবার কিছুদিন লেখাপড়া করার পর তা বাদ দিয়ে বিভিন্ন কাজকর্ম করছেন এবং বিয়ের জন্য পাত্র/পাত্রী খুঁজছেন। কেউ কেউ লেখাপড়া চলাকালীনও বিয়ের জন্য পাত্র/পাত্রী খুঁজছেন।
জানা গেছে, এখানে নিয়ম হচ্ছে, লেখাপড়া শেষ করার পর যাদের স্টেম কিংবা সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, তারা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কিছুদিন কাজ করার সুযোগ পাবেন। এরপর ওই সময় শেষ হওয়ার আগে কেউ যদি এখানে কোনো কোম্পানিতে চাকরি পান এবং ওই কোম্পানি তাকে স্পন্সর করে, তাহলে তিনি এখানে থেকেই কাজ করতে পারবেন। স্পন্সর না পেলে তাকে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট লেভেলে এমনটাই। তবে যারা পিএইচডি করেন, তারা অনেক সুযোগ পান। যদিও পিএইচডি করতে এসে এখানে বিয়ের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন এমনটি দেখা যায় না। তবে আন্ডার গ্র্যাজুয়েটসহ বিভিন্ন লেভেলে পড়তে এসে লেখাপড়া কন্টিনিউ না করে কাজ করছেন, এমন ব্যক্তিরাই পাত্রী খুঁজছেন।
স্টুডেন্ট ভিসায় আগত কেউ কেউ উপায় না থাকলে তখন তারা এখানে থাকার জন্য বিয়ে করার চিন্তা করেন। আবার এমনও আছে, অ্যাসাইলাম কেস ফাইল করেছেন কিন্তু অনুমোদন হচ্ছে না অথবা লম্বা লাইনে পড়েছেন, তারাও এখানে বিয়ে করে স্থায়ী হতে চান। তবে যারা এখানে উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আসেন, তাদের বেশির ভাগ স্টুডেন্টই লেখাপড়া করে নিজের ও পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করেন।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি কিছু কিছু মানুষের মধ্যে এমন প্রবণতা তৈরি হয়েছে, এখানে বেড়াতে আসার ছয় মাসের মধ্যেই বিয়ে করার চেষ্টা করেন। বিয়ে করার জন্য নিজেরা যেমন চেষ্টা করেন, তেমনি পত্রিকান্তরেও বিজ্ঞাপন দেন। এমনই এক তরুণের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভিজিট ভিসায় এখানে এসে থাকার চিন্তাভাবনা করছি। তাই এখানে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য বিয়ের পাত্রী খুঁজছি। এই তরুণের কথাবার্তায় এটা পরিষ্কার, এখানে বিয়ে করাটা মূল উদ্দেশ্য নয়, আসল কারণ হচ্ছে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়া।
সম্প্রতি ইংল্যান্ড থেকে এক ব্যক্তি আমেরিকায় বেড়াতে এসেছেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনিও এখানে বিয়ে করে স্থায়ী হতে চাইছেন। তার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আসার পর খুব ভালো লাগছে। পাশাপাশি এখানে সিটির বাইরে বাড়ির দাম অনেক কম। তাই এখানে বাড়ি কিনতে চাইছি। বাড়ি কেনার পর পরিকল্পনা হচ্ছে এখানে একটি ফার্ম করার। তিনি বলেন, আমি ইংল্যান্ডে থাকি। সেখানে না থাকলে বিয়ে করার পর স্ত্রী যদি মনে করেন, তিনি ইউরোপের অন্য কোনো দেশে স্থায়ী হবেন, তিনি তাও হতে পারেন। একজন আমেরিকান মেয়েকে বিয়ে করে তার সঙ্গে অন্য দেশে কেন যাবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছুটা হকচকিত হয়ে যান। বলেন, সমস্যা তো নেই। যিনি আমার স্ত্রী হবেন, তিনি চাইলে আমরা ইউরোপের কোনো দেশের দ্বীপে বাড়ি কিনতে পারি। সেখানে ফার্ম হাউস করতে পারি। আপনি ইংল্যান্ডে থাকেন, স্ত্রীকে সেখানে কেন নিয়ে যাবেন না-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে আমি আপাতত বিয়ের চিন্তা করছি। বিয়ে করার পর আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। দ্বীপে কেন বাড়ি কিনতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দ্বীপে থাকার জীবন অন্য রকম।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে এখানে আসার পর ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে, কেউ কেউ আছেন এখানে বিয়ে করার জন্য তার ভাই কিংবা বন্ধুর জন্য পাত্র খুঁজছেন বলে জানান। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেন। আবার বলে দেন যে পাত্রীকে অবশ্যই সিটিজেন হতে হবে। কারণ তারা জানেন, একজন সিটিজেন পাত্রীকে বিয়ে করতে পারলে তার আমেরিকায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। তিন বছরের মধ্যে একটি বৈধ স্ট্যাটাসসহ নিশ্চিত জীবন পাওয়ার সুযোগ থাকে। এ রকম বেশ কয়েকজনকে দেখা গেছে, তারা এভাবেই পাত্রী খুঁজছেন। কেউ কেউ আছেন পত্রিকায় পাত্র চাই বিজ্ঞাপন দেখেও যোগাযোগ করেন। এ ব্যাপারে কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগও করেছেন। বলেছেন, মেয়ের জন্য পাত্র চাইছি। কিন্তু মেয়ের জন্য যোগ্য নন এটা জানার পরও অনেকে ফোন করছেন, মেয়ে দেখতে চাইছেন। কিছু বাজে ফোনের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি।
আরেকজন এসেছিলেন লেখাপড়া করতে। লেখাপড়া শেষ করার পর চাকরিও করেছেন। কিন্তু দেশে ফেরত না গিয়ে এখানেই থাকতে চান। এ জন্য অ্যাসাইলাম কেস ফাইল করেছেন। কিন্তু কয়েক বছর হয়ে গেলেও তার ফাইল অনুমোদন না হওয়ায় এখন বিয়ে করে এখানে থাকতে চাইছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন পাত্রীও দেখেছেন। তার সঙ্গে একজনের অ্যাফেয়ারও ছিল। সেটি বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে গিয়েও গড়ায়নি। পরে পাত্রী খুঁজছেন।
অন্যদিকে স্টুডেন্ট হিসেবে এখানে আসার পর বিয়ে করে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা মেয়েদের মধ্যে কম হলেও ইদানীং তারাও এ পথে পা বাড়াচ্ছেন। এক তরুণী বিজ্ঞাপন দিয়ে বলছেন, তিনি এখানে পাত্র খুঁজছেন। তিনি এখানে একাই থাকেন। লেখাপড়া শেষ না করে কেন বিয়ে করতে চাইছেন, এর সঠিক জবাব তিনি দিতে পারেননি। বলেন, এখানে এসেছিলাম পড়তে। এখন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পড়ালেখা শেষ না করে বিয়ে করলে সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আমি একা থাকি। তাই বিয়ে করতে চাইছি।
কিছু স্টুডেন্ট রয়েছেন, যারা অন্য স্টেটে লেখাপড়ার জন্য ভিসা নিয়ে আসেন। পরে নিউইয়র্কের বিভিন্ন কলেজে ট্রান্সফার হয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্টুডেন্টদের জন্য এটি কঠিন কাজ। তার পরও অনেকেই চেষ্টা করেন। এমনও দেখা গেছে, স্টুডেন্ট হিসেবে অন্য স্টেটে আসার পর নিউইয়র্কে এসে ব্যবসা ও বিয়ে করার চেষ্টা করছেন। কিছু কিছু ক্লাস অনলাইনে করে অন্তত স্ট্যাটাস ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে একজন অ্যাটর্নির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা পড়তে বা বেড়াতে এসে বিয়ের চিন্তা করছেন, সেটা অনুচিত। যারা লেখাপড়া করতে আসেন, তাদের সবার আগে লেখাপড়া শেষ করা দরকার। কারণ অভিভাবকেরা অনেক স্বপ্ন ও আশা-ভরসা নিয়ে তাদের সন্তানদের এখানে লেখাপড়া করতে পাঠান। অনেক অর্থ খরচ করেন। বাবা-মায়ের কষ্টের দিকটিও দেখতে হবে। স্টুডেন্ট ছাড়া ভিজিট ভিসায় যারা এসেছেন, তাদেরও কেউ কেউ পাত্র/পাত্রী খুঁজছেন। এটা করা ঠিক নয়।
তিনি আরও বলেন, যারা এমনভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে পাত্রী খুঁজছেন, তাদের বিষয়ে পাত্রীপক্ষকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ যিনি এখানকার সিটিজেন, তিনি চাইলে তার স্বামীকে যেকোনো সময় আনার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু যে মেয়েটির এখানে কোনো বৈধ স্ট্যাটাস নেই, এমন মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হলে তিনি তো তার স্বামীকে বাংলাদেশ থেকে আনতে পারবেন না। ফলে সমস্যা সৃষ্টি হবে।