ঘটনা ১ : রাহুল আনন্দ নামের এক গায়কের বাসায় দুঃখজনকভাবে আগুন লেগে যায় ৫ আগস্ট। মূলত তার বাসা লক্ষ্য ছিল না, টার্গেট ছিল পাশের বাড়ি (শেখ মুজিবুর রহমানের)। আগুন ছড়িয়ে তার বাড়িও পুড়ে যায়। ঘটনার পরদিন তিনি অনেক পত্রিকা-মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন, তবে এটা যে দুর্ঘটনা বা তার বাড়িতে যে আগুন দেওয়ার লক্ষ্য ছিল না, সে বিষয়ে পরিষ্কার করে তিনি কিছু বললেন না। বরং তার কথা শুনে তার বাড়িটাই লক্ষ্য ছিল বলে অনেকের মনে বদ্ধমূল ধারণা হলো। এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি মিডিয়া এটিকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে। কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসে। রাহুল আনন্দ আর তার ব্যান্ড ‘জলের গান’ এ নিয়ে ৯ আগস্ট একটি বিবৃতি দিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে। সত্য প্রকাশের পর রাহুলের সমালোচনা শুরু হয়। তার পক্ষে অনেকে এগিয়ে এলেও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি কেন দ্রুত সত্য প্রকাশ করেননি। তবে যারা তার ট্রমা বুঝে সহমর্মিতা দেখিয়েছেন, তাদের প্রশংসা প্রাপ্য, যাদের মধ্যে আমার বন্ধু-পরিচিতরাও আছেন।
ঘটনা ২ : রাহুল আনন্দের বাসায় আগুন লাগার পরের দিন অর্থাৎ ৬ আগস্ট আমান আযমী নামের এক প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা প্রায় আট বছর আয়নাঘরে গুম থাকার পর মুক্তি পান। এই সময়ে তার ওপর ভয়াবহ নির্যাতন হয়। তিনি (দৃশ্যত অসুস্থ-ট্রমাটাইজড) ৩ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে তার ওপর পাশবিক নির্যাতনের বিস্তারিত জানালেন। একই সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি করলেন। বিতর্কিত এই মন্তব্যের পর তার বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষের মোটামুটি সবাই তার প্রতি হওয়া ভয়াবহ অন্যায়ের কথা ভুলে গেলেন, তার অসুস্থতা-ট্রমার কথাটাই আড়াল হয়ে গেল। তার মুখ্য পরিচয় দাঁড়িয়ে গেল, তিনি কুখ্যাত রাজাকারকুল শিরোমণি গোলাম আযমের ছেলে, জামায়াত-সংশ্লিষ্টতা ছিল তার। যারা রাহুল আনন্দের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছিল, এখন এমন অনেককেই দেখলাম তাকে আক্রমণ করতে। এদের মধ্যে আমার বন্ধু-পরিচিতরাও আছে। সহমর্মিতা অনুপস্থিত, এই লোকের জামায়াত-সংশ্লিষ্টতার কারণে তিনি সহমর্মিতার অযোগ্য, তার ট্রমা বিবেচনায় আনা যাবে না।
আমার মতামত : আমার কাছে এই ঘটনাগুলো আমাদের জাতির জন্য পরীক্ষা বলে মনে হয়েছে। আমরা এই পরীক্ষাগুলোতে মোটেই ভালো করতে পারিনি। আপনারা যারা সিলেকটিভ মানবিকতা দেখিয়েছেন, আপনারাই আপনাদের মানবিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন। একজনের রাজনীতি আপনি ঘৃণা করতেই পারেন, কিন্তু মানবতা যদি সর্বজনীন না হয়, তবে আপনাকে দিয়ে বাংলাদেশ ২.০ হবে না। স্রষ্টার কাছে আবেদন জানাই, তিনি যেন আমাদের আত্মসমালোচনার শুভবুদ্ধি দান করেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার উপযুক্ত করেন।
লেখক : নিউইয়র্কে কর্মরত একজন গবেষক ও বৈশ্বিক উন্নয়নকর্মী।