দিনের প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন শাসন করল বাংলাদেশ। তবে শেষ সেশন সফরকারীদের হতে দেননি রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের ব্যর্থতার দিনে ব্যাটিংয়ে সবটুকু সুযোগ কাজে লাগালেন ভারতের দুই স্পিনার। সপ্তম উইকেটে গড়লেন ২২৭ বলে নিরবচ্ছিন্ন ১৯৫ রানের জুটি। তাতেই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে স্বস্তিতে দিন পার করে চালকের আসনে স্বাগতিকেরা। প্রথম ও দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের মুখে যে হাসি দেখা গিয়েছিল, শেষ সেশনে তা কেড়ে নিলেন জাদেজা-অশ্বিন।
প্রথম দুই ইনিংসে ভারতের রান ছিল ৪৮ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৬। সেই দুই ইনিংসে কী দারুণ মিল! মধ্যাহ্নভোজে যাওয়ার আগে ভারত করে ২৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৮৮ রান। ওভার রেট—১১.৩। দ্বিতীয় সেশনেও ৩ উইকেটে করে ৮৮ রান। তবে তারা এবার খেলেছে ২৫ ওভার। ওভার রেট—১২.৩। কিন্তু তৃতীয় সেশনে সূর্যের আলো যতই ফিকে হচ্ছিল, জ্বলছিলেন দুই ‘রবি’।
দুই স্পিনার দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও যে কম যান না, সেটি প্রমাণ করলেন আবারও। দুজনের গায়ে অবশ্য আছে ‘বোলিং অলরাউন্ডার’ তকমা। জাদেজা একটু ধীরস্থির ব্যাট চালালেও চা-বিরতির খানিক আগে ব্যাটিংয়ে নেমে অশ্বিন চাপের মুখে করেছেন প্রতি-আক্রমণ। পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। তৃতীয় সেশনে প্রথমবার বোলিংয়ে আসা সাকিব আল হাসানের বল মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে বাতাসে ঘুষি মেরে অশ্বিন উদ্যাপনটাও করেন দেখার মতো। ১০৮ বলে সেঞ্চুরির ঘরে পা রাখা ৩৮ বছর বয়সী তারকা দিন পার করেছেন ১০২ রানে অপরাজিত থেকে। তার ১১২ বলের ইনিংসে ছিল ১০ চার ও ২ ছয়।
টেস্টে ৮ নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিতে দুই নম্বরে উঠে এসেছেন অশ্বিন। এ তালিকায় ৫ সেঞ্চুরি নিয়ে শীর্ষে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টরি। ৪ সেঞ্চুরি নিয়ে দুইয়ে অশ্বিন। সেঞ্চুরির পথে আছেন জাদেজাও। অশ্বিনের সমান ছয়-চারে ১১৭ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত আছেন তিনি। দুজনে গড়েছেন একটি রেকর্ডও। টেস্টের প্রথম দিনে সপ্তম বা তার নিচের উইকেটে দুজনে গড়েছেন সর্বোচ্চ রানের জুটি। এই কীর্তি আগে ছিল নিউজিল্যান্ডের হেসে রাইডার ও ভেট্টরির। ২০০৯ সালে ভারতের বিপক্ষে হ্যামিল্টনে দুজনে গড়েছিলেন ১৮৬ রানের জুটি।
অথচ চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনে যেভাবে তোপ দাগিয়েছিলেন—দিনটা হওয়ার কথা ছিল হাসান মাহমুদের। বাংলাদেশি পেসার প্রথম সেশনেই কপালে ভাঁজ ফেলেন ভারতীয়দের। প্রথম শিকার ওপেনার-অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে (৬) ফেরানোর পর পেস আক্রমণের সামনে খাবি খেতে থাকা শুবমান গিলকে ডাক উপহার দেন হাসান। তার তোপ থেকে নিস্তার পাননি বিরাট কোহলিও (৬)।
৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়া ভারতকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন যশস্বী জয়সওয়াল। উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্তের (৩৯) সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৬২ রানের জুটি গড়ে দলে স্বস্তি ফেরানোর চেষ্টাও করেন ভারতীয় ওপেনার। তবে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে আবারও হাসানের আঘাত—উইকেটের পেছনে লিটন দাসের গ্লাভসে বন্দী হয়ে ফেরেন পন্ত। এরপর এক প্রান্ত আগলে রেখে জয়সওয়াল তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি।
দেয়াল হয়ে থাকা জয়সওয়াল শেষ পর্যন্ত ফেরেন ইনিংসের ৪২তম ওভারে। নাহিদ রানার বলে ৫৬ রানে প্রথম স্লিপে সাদমান ইসলামের তালুবন্দী হন তিনি। পরের ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে স্লিপে জাকির হাসান ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ নেন লোকেশ রাহুলের। ফেরার আগে পঞ্চম উইকেটে দুজনে গড়েন ৪৮ রানের জুটি। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমেই প্রতি-আক্রমণ শুরু জাদেজা-অশ্বিনের।
জাদেজা ৭ আর অশ্বিন ২১ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যান। ফিরে খেলেছেন ৩২ ওভার। ভারতকে হারাতে দেননি আর একটি উইকেটও। ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারানো স্বাগতিকেরা এখন তাকিয়ে ৪০০ পেরোনো ইনিংসের দিকে।
তবে চেন্নাইয়ের এম. চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আজ সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে বাংলাদেশ প্রথম দিন বোলিংয়ে যেভাবে শুরু করেছে, আগামীকাল যদি সেটির পুনরাবৃত্তি করতে পারে, তবেই জমিয়ে তুলতে পারবে লড়াই।
ঠিকানা/এনআই