চিকন-মোটা বাছবিচারে না গিয়ে বিশ্বময় সমানে বন্ধু খুঁজছে চীন। নিজ দেশে যা ইচ্ছা তা করার সক্ষমতার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চশমায় এখন গোটা দুনিয়া। মূল টার্গেট আসলে বিশ্ব নয়, যুক্তরাষ্ট্রকে কাবু করা। যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারি রোখার বার্তা দিয়ে রাশিয়ায় তিনদিনের সফর সেরেছেন তিনি। দাঁড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঘোরা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে। ‘রাশিয়ান গেজেটে’ এ উপলক্ষে একটি নিবন্ধও লিখেছেন। প্রকাশিত লেখায় শি জিনপিংয়ের সফরকে বলেছেন- বন্ধুত্ব, পারস্পরিক সহযোগিতা ও শান্তির অগ্রযাত্রা নামে। রাশিয়া-চীন আক্ষরিক অর্থেই বৈশ্বিক সংকট সমাধানের সেতুবন্ধন তৈরি করতে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়- ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে বৈশ্বিক সম্প্রীতি নষ্ট করছে কোনো কোনো দেশ। এই কোনো কোনো দেশ কোনটি কোনটি?
নাম না বললেও দেশ মানে যুক্তরাষ্ট্র। এক সময়ের এই বন্ধুই এখন শত্রু। সাপের ছোলমের মতো বদলানোর বাতিক এখন অন্য পরাশক্তিগুলোর মাঝেও। যুক্তরাষ্ট্র তার ঘড়িতেই গোটা বিশ্বের সময় দেখছে। স্থানিক সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় ভিন্ন ভিন্ন ছকও কষছে। কখন কোথায় কী ঘটবে-ঘটাবে, পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে- কারো চশমাতেই তা পরিস্কার নয়। ঘড়ির সময়ও মিলছে না। স্নায়ুযুদ্ধের সময় কূটনৈতিক কার্যক্রম ব্যাক চ্যানেলে চলে বলে একটা কথা রয়েছে। যার জেরে উৎকণ্ঠা দেশে-দেশে। উতলা পরাশক্তিগুলো। বিভিন্ন দেশে তাদের খাস পছন্দ-অপছন্দের নেতাদের মাঝে অস্থিরতা। অসহিষ্ণুতাও চরমে। তা কেবল সরকারে?
বিরোধীদলেও কম নয়। যার ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাঝেও। তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে- এ শঙ্কায় সমর্থকদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও শিরোনাম হয়েছেন তিনি। এশিয়াসহ বিভিন্ন মহাদেশের ছোটখাটো রাষ্ট্রেও এ উতলার জের। দক্ষিণ এশীয় দেশ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে উত্তেজনা পজিশন-অপজিশন সব দিকেই। রাজনীতির সমান্তরালে এ চশমা-ঘড়ির চাহনী বাংলাদেশে বেশি অর্থনৈতিক সেক্টরে। প্রশাসনিক ও সামাজিক পর্যায়েও কি কম?
বাংলাদেশের গণমাধ্যম শাকিব-সাকিব, আসাদুজ্জামান খান-আরাভ খানময়। মাঝে আবার হিরো আলম, হিরোইন মাহিয়া মাহি। ফাঁকে বিভিন্ন নামের কয়েক পুলিশ কর্তা। তারা ভিন্ন ভিন্ন জগতের মানুষ। কেউ মাঠে, কেউ ঘাটে। খাটও যোগ হয়েছে। কিন্তু, ঘটনার ঘনঘটায় কিসের মধ্যে কী, কার সঙ্গে কে- নিশানা করা সম্ভব? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ঘোষণা- ইন্টারপোলের সহায়তায় দুবাই থেকে ধরে আনা হবে আরাভ খানকে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না। বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও বড় কড়া। জানিয়েছেন ছাড় নেই সাকিবেরও। দুবাইতে পলাতক আসামি আরাভ খানের স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন ঘটনায় সাকিবের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে বিসিবি। এ ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর সুযোগ আছে কি০না, বিসিবির সাথে সাকিবের চুক্তি খতিয়ে তা দেখা হবে। ধর্ষণ, অসদাচরণসহ নানা গুরুতর অভিযোগ আনার প্রতিবাদে গুলশান থানায় মামলা করতে গেলে শাকিব খানকে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। থানা থেকে অগ্রাহ্য হয়ে তিনি গেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা অফিসে। দিয়েছেন লিখিত অভিযোগ। শাকিব ছাড়বেন না রহমত উল্ল্যাহকে। মাহিয়া মাহিও গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলামকে দেখিয়ে দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এতক্ষণের ধারা বিবরণীতে বোঝা গেল কিছু?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।