Thikana News
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কদম ফুল ও অচেনা যুবক

কদম ফুল ও অচেনা যুবক


ঝুমবৃষ্টি হচ্ছে দুই ঘণ্টা যাবৎ, ক্লাস শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ আগেই। বৃষ্টি থামার জন্য ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় অপেক্ষা করছিল মোহনা। কিন্তু বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ না দেখে একপর্যায়ে ছাতা মেলে দিয়ে রওনা হলো। আজ সকাল থেকে কিছু না কিছু ঝামেলা লেগেই আছে তার, সকালে বের হতেই স্যান্ডেলটা ছিঁড়ে গেল, তারপর আবার ফিরে গিয়ে চেঞ্জ করে আসতে হলো। এত পড়ার পরও পরীক্ষাটা ভালো হয়নি, এখন আবার শুরু হয়েছে ঝুমবৃষ্টি। তার ওপর আজকে আবার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে, মায়ের কড়া নির্দেশ। সবকিছু মিলিয়ে মেজাজটা ভীষণ তিরিক্ষি হয়ে আছে মোহনার। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাজপথ ডুবে যাওয়ার মতো অবস্থা। যাত্রীছাউনিতে দাঁড়ানোর একটুও জায়গা নেই। কাকভেজা হয়ে ছাতাটা বন্ধ করে ছাউনিতে দাঁড়াতে গেলে একটুখানি জায়গাও ছিল না সেখানে। মোহনার এই অবস্থা দেখে কিছুটা সরে গিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা করে দিল অচেনা এক যুবক। ধন্যবাদ, বলে মোহনা ছেলেটির দিকে আড় চোখে তাকাল। হালকা আকাশি রঙের ফুলহাতা শার্ট পরা, কালো প্যান্ট, কাঁধে একটা ব্যাগ আর হাতে কিছু কদম ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ছেলেটা, দারুণ সুদর্শন দেখতে। মোহনার দিকে ফিরেও তাকাল না সে। যার যার গন্তব্য অনুযায়ী বাস আসতে থাকল আর একে একে সব যাত্রী যে যার বাসে উঠে চলে যেতে লাগল। কোনো বাস না পেয়ে ঝুমবৃষ্টিতে শুধু ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকল ওরা দুজন। হঠাৎ একটা রিকশা দেখতে পেয়ে দুজনই একসাথে ডেকে উঠল। ছেলেটি বলল, ‘আমাদের গন্তব্য যেহেতু কাছাকাছি, চলেন একসাথে যাই, এত বৃষ্টি আর কোনো রিকশাও তো দেখতে পাচ্ছি না।’
মোহনা প্রথমে রাজি হয় না।
-না, ঠিক আছে, আপনি যান।
-রিকশা পাওয়া কিন্তু ঝামেলা হবে। আর বাসও পাবেন কি না সন্দেহ আছে। এক কাজ করেন তাহলে, আপনি যান। আমি দেখি আর কিছু পাই কি না। বৃষ্টি ক্রমশ বেড়েই চলেছে, রাস্তায়ও পানি জমছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যাও ঘনিয়ে আসছে। উপায়ান্তর না দেখে একপর্যায়ে মোহনা বলল :
-আচ্ছা চলেন, একসাথে যাই।
খানিকটা দ্বিধা আর অস্বস্তি নিয়ে একসাথে রওনা হলো দুজন। বয়স্ক রিকশাওয়ালা, কাকভেজা হয়ে কোনো রকমে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দুজনকে। রাস্তাভর্তি হাঁটুপানি। ঝুমবৃষ্টি, রিকশার ছাউনি, পলিথিন, দুজনের ব্যাগ আর রাস্তার পানিÑসবকিছু মিলিয়ে বেসামাল অবস্থা। রিকশার পাদানি পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। বসার সুবিধার্থে কদম ফুলগুলো হাতে নিল মোহনা। প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে রিকশার হুড তুলে যেতে হচ্ছে, অপরিচিত একটা মানুষ, তার পাশে বসতে বেশ অস্বস্তিও হচ্ছে। কিন্তু কেমন যেন একটা ভালো লাগাও কাজ করছে, মানুষটা যে তার একদম পরিচিত নয়, তা মনেই হচ্ছে না। বেশ কাছাকাছি বসায় মানুষটার আফটার সেভ আর পারফিউমের ঘ্রাণটাও পাওয়া যাচ্ছে। বেশ সুদর্শন একটা মানুষ। একসাথে পথ চলতে খারাপ লাগছে না তার। অস্বস্তি কাটানোর জন্য দুজনেই টুকটাক কথা বলছিল। বৃষ্টিও কিছুটা কমে এসেছে। রাস্তার পানিও একটু কমেছে। একপর্যায়ে কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার ওপাশে গন্তব্যের বাস পেয়ে নেমে গেল ছেলেটি।
-আসি, ভালো থাকবেন।
-আল্লাহ হাফেজ, ভালো থাকবেন।
মোহনাও হাত নেড়ে বিদায় দেয়।
-আবারও দেখা হয়ে যেতে পারে অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে অথবা এভাবে চলতি পথে।
যেতে যেতে ছেলেটি মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল।
মোহনার মনটা কেমন যেন একটু খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে ভাবল, ‘হুম, তাই তো, আবার দেখা হলেও খারাপ লাগবে না।’
রিকশা থেকে নামার সময় খেয়াল করল ছেলেটির শার্টের হাতায় মোহনার নীল বাটিকের ভেজা ওড়নার ছাপ পড়ে আছে। জামাটা আজকেই প্রথম পরেছে সে, খুব শখ করে অনলাইন থেকে নীল বাটিকের জামাটা কিনেছিল। আজকে মেঘলা আকাশ দেখে ভাবল এটা পড়ে যাই, কিন্তু বৃষ্টির পানিতে রং উঠে সবকিছু নীল হয়ে গেছে। ভেবেছিল মেঘলা দিনে নীল জামাটা পরলে খুব দারুণ হবে। মোহনা লজ্জায় শার্টের দাগ নিয়ে কোনো আওয়াজ করল না তখন। রিকশা নিয়ে একটুখানি যাওয়ার পরে খেয়াল করল, ভুলে ছেলেটির কদম ফুলগুলো তার হাতে রয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে রিকশা ঘুরিয়ে যেতেই রাস্তার মাঝখানে প্রচণ্ড ভিড় দেখতে পেল মোহনা। ট্রাফিক পুলিশ রাস্তা আটকে দিয়েছে। রিকশা ঘুরিয়ে ওদিকে আর যাওয়া যাচ্ছে না। ট্রাফিক জানাল, এক লোক রাস্তা পার হতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করেছে। মোহনার বুকের ভেতরটা কেমন একটা মোচড় দিয়ে উঠল। মাত্রই তো ছেলেটাকে নামিয়ে দিয়েছিল মোহনা। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল তার। মোহনা একবার ভাবল, নিজেই সামনে গিয়ে একটু দেখে আসে, কিন্তু প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে সামনে যেতে না পেরে রিকশাওয়ালাকে একটু দেখে আসতে বলল।
-কী দেখলেন ভাই?
-ওই যে একটা মানুষ চিত হইয়া পইড়া আছে, সবাই মাথায় পানিটানি দিতাছে।
-ওমা! হসপিটালে নেবে না।
-নিবে মনে লয়, তয় আগে একটু চেষ্টা করতাছে আরকি।
-বয়স কেমন?
-আরে কম বয়সী, এগোর তো আবার মাথা গরম, দৌড়ে রাস্তা পার অইতে গেছিল মনে লয়।
-আচ্ছা ছেলেটা কি হালকা আকাশি রঙের শার্ট পরা ছিল আর কালো প্যান্ট?
-হয় হয়, সেই রংই তো দেখলাম।
ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল মোহনার। কদম ফুলগুলো হাতে নিয়েই বাড়ি ফিরল সে। মানুষটার নামটাও জিজ্ঞেস করা হয়নি, ফোন নাম্বারটাও নেওয়া হলো না। আর কী জিজ্ঞেস করবে, রিকশাতে বসাই তো একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, কী ভীষণ বৃষ্টি আর রাস্তায় ময়লা পানিটানি জমে একাকার।
এদিকে বাড়িতে তুমুল আয়োজন। ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই বড়পা চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিলেন।
-কিরে সারা দিন কই ছিলি তুই, আমরা কখন থেকে এসে বসে আছি। আর তোর কোনো খবরই নাই।
-ক্লাস ছিল, বড়পা।
-হ্যাঁ, তোমার বোন আমাকে দেখে পালিয়েছে।
-আমি আবার কোথায় পালালাম, দুলাভাই।
এর মধ্যে মোহনার মা গলা ফাটিয়ে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিলেন, ‘এই তোর আসার সময় হলো। বললাম আজকে না যেতে।’
-কী যে বলো মা, আজকে আমার ক্লাস টেস্ট ছিল।
-আচ্ছা যা, এখন গোসল করে আয়।
গোসল করে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মোহনার মা মিনু বেগম ওকে খাইয়ে দেওয়া শুরু করলেন।
-মা, এত ভাত দিয়েছ কেন, কমাও, আমি এত ভাত খাব না।
-মুখে দেওয়ার আগেই খাব না আবার কী, খা।
বড়পা টাওয়াল দিয়ে মোহনার মাথা মুছে দিতে লাগলেন।
-কিরে, তোর তো দেখি সর্দি লেগে গেছে, মোহনা।
-না বড়পা, একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
-তুই একটা অ্যালাট্রল খেয়ে একটু শুয়ে থাক। উঠে একটা চা খেয়ে রেডি হ।
-আমি এত রেডিটেডি হতে পারব না, বড়পা। যেমন আছি তেমনই থাকব।
মিনু বেগম চিৎকার করে বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমার মতে মতে তো সব চলবে না?’
মোহনার বাবা মিনু বেগমকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকে বলতে লাগলেন,
-আচ্ছা, ওরা কখন আসবে বলেছে?
-এই তো সন্ধ্যার পরপরই।
মোহনা বাসায় ব্যাপারটা কাউকে বলতেও পারছে না। মা যদি শুনতে পায়, এক রিকশায় করে এসেছে, তাহলে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দেবে। আর বড়পার তো পেটে কথা থাকে না। একটা কথার সাথে মসলা মিশিয়ে উনি একটা গল্প তৈরি করে ফেলতে পারেন। সৃষ্টিকর্তা তাকে গল্প বানানোর অসীম ক্ষমতা দান করেছেন। কাউকে কিছু না বলে বিষাদভরা মন নিয়ে ঘরের এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল মোহনা। যদিও দিনের শুরুটা ঠিকই ছিল, কিন্তু বেলা গড়িয়ে বিকেল হতে হতে কত কিছু বদলে যায় মানুষের। একটু পরপর সেই ছেলেটির কথা মনে হচ্ছিল তার। বারবার মনে হচ্ছিল এক্সিডেন্টের সেই যুবক আর রিকশার যুবক একই কি না। ছেলেটির কদম ফুলগুলো বিছানার পাশে একটা ফুলদানিতে পানি দিয়ে রেখে দিল মোহনা। কী সুন্দর সুবাস ছড়াচ্ছে ফুলগুলো। লাইটটা নিভিয়ে মোহনা একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু পানিভর্তি রাস্তা, রিকশা আর ছেলেটার কথা ভুলতেই পারছিল না সে। আহা, ছেলেটার নাম্বারটা থাকলেও জানতে পারত, ওর কোনো সমস্যা হয়েছে কি না।
পাত্রপক্ষ সন্ধ্যায় দেখতে আসবে তাকে। আলাপটা বড় আপাই এনেছে, তার শ্বশুরবাড়ির দূরসম্পর্কের আত্মীয়। ছেলেটা একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। মোহনা বায়োডাটা, ছবি কিছুই দেখেনি। তার এখন বিয়ে করার কোনোই ইচ্ছা নেই। শুধু মা ঘরে অশান্তি করবে, সে জন্যই রাজি হওয়া। পাত্রপক্ষ দেখে যাক, তারপর বলবে ছেলে তার পছন্দ হয়নি। এ বিষয়টা নিয়ে সে খুব একটা প্যারা নিতে চাচ্ছে না। এর আগেও এ রকম দু-একটা আলাপ এসেছিল, তখন অবশ্য বাবার সহায়তায় ওগুলোকে ভাগানো গেছে। বায়োডাটা দেখেই বলা হয়েছে, পছন্দ হয়নি। কিন্তু এবার বাবাও সাহস করতে পারেননি। তবে মোহনা ও তার বাবার প্ল্যান হলো এবার দেখার পরই বলবে পছন্দ হয়নি। চোখটা একটু লাগতে না লাগতেই বড়পা তাড়াহুড়া শুরু করে দিল।
-ওঠ, উঠে চা খেয়ে রেডি হ।
-কী শাড়ি পরবি, ঠিক করেছিস?
-না, করিনি বড়পা, একটা কিছু পরে নেব।
-একটা কিছু মানে, শাড়ি পরতে হবে না?
-না, শাড়িটাড়ি পরতে পারব না।
বড়পা মা মা বলে চিল্লাতে চিল্লাতে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
-দেখো তোমার মেয়ের কাণ্ড, আমি কিচ্ছু জানি না। তোমার মেয়ে নাকি শাড়ি পরবে না।
সঙ্গে সঙ্গে মিনু বেগম এলেন, এসেই তার কাসুন্দি শুরু হয়ে গেল।
-আমার আর ভালো লাগে না। আর কতকাল আমার ঘানি টানতে হবে। এ বাসায় সবাই অবুঝÑমেয়ে, তার বাপ সবাই।
পেছন পেছন মোহনার বাবাও এলেন। এসেই মোহনাকে ইশারা দিলেন। মোহনা ঘোলাটে পরিবেশ দেখে সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, তোমরা যাও, আমি পরছি, যাও আমি শাড়িই পরছি।’
অনেকক্ষণ আলমারি ঘেঁটে একটা নীল সুতির শাড়ি বের করল মোহনা। এক দিনও পরেনি শাড়িটা। সুতির শাড়িতে হ্যান্ড পেইন্ট করা। ঈদে মা কিনে দিয়েছিল। একদম ভাঁজও খোলা হয়নি শাড়িটার। আজকে ওর নীল দিবস। সকাল থেকেই শুধু নীল পরতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। খুব যত্ন করে চুলটা আঁচড়াল মোহনা, চোখে একটু কাজল দিল আর ঠোঁটে গাঢ় গোলাপি লিপস্টিক দিল।
বড়পা এসে বলল, ‘বাহ! তোকে তো শাড়িটাতে দারুণ মানিয়েছে। একটা টিপ পর।’
মোহনা টিপ পরতে রাজি হয় না। কানে দুটো মুক্তার টব আর গলায় একটা মুক্তার পেন্ডেন্ট ঝুলিয়ে দিল।
মিনু বেগম রুমে ঢুকেই বললেন, ‘মাশাআল্লাহ, এ রকম সোনার মেয়ে ওরা লাখে একটা পাবে? আমার মেয়ে, এই মিনু বেগমের মেয়ে।’
মোহনার কপালে একটা চুমু খেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। মোহনা জানালার পাশে বসে আরাম করে চা খাচ্ছিল। এর মধ্যে বড়পার গলা শোনা গেল, ‘মা, ওনারা চলে এসেছেন।’
আওয়াজ পেয়ে বুয়া মোহনার রুমে ঢোকে।
-ইয়া আল্লাহ ছোড আফা, আফনে খালি ছা খাইতাছেন, কত্ত কিছু রান্না করা হইসে, একটা কিছু দিয়া খাইতেন।
-কী কী রান্না করা হয়েছে, বুয়া?
-এই ধরেন যে পরোটা, মুরগির কোরমা, পায়েস, পুডিং আরও যেন কী, ওইগুলা আমি চিনি না। বড় আফায় বানাইসে।
তার মধ্যে বুয়ার ডাক পড়ল। মিনু বেগম বুয়াকে ডেকে ডেকে মোহনার রুমে এলেন,
-বুয়া, তুমি এখানে কী করো, যাও শরবতটা ড্রয়িংরুমে নিয়ে যাও।’
কিছুক্ষণ পরে বড়পা এসে মোহনাকে ড্রয়িংরুমে আসতে বললেন।
-কে কে এসেছে, বড়পা?
-আরে ছেলে, ওর মা-বাবা, ভাই আর ভাবি। ছেলেটা কিন্তু সেই হ্যান্ডসাম রে মোহনা। কী নাম জানিস তো নাকি? শুভ্র, দারুণ না নামটা, সেই রোমান্টিক।
-হুম বুঝেছি, এবার চলো যাই।
-তুই এ রকম গোমড়া মুখে যাবি? একটু হাসিখুশি থাক।
-হুম, যত সব যন্ত্রণা।
মোহনা সালাম দিয়ে সোফাতে বসে। ছেলের মা নাম জিজ্ঞেস করলে মোহনা উত্তর দেয়।
সবার সঙ্গে টুকটাক কথা হওয়ার পর ছেলের ভাবি বড়পাকে বলেন, ‘ওদের দুজনের একটু আলাদা কথা বলা দরকার।’
মোহনা উঠে রুমে চলে আসে। ছেলেটাকে ভালো করে মোহনা দেখতেও পায়নি, মানুষ সামনাসামনি বসে, আর এই লোকটা বসেছে সাইডে, মোহনা মনে মনে হাসে আর বলে বেআক্কেল একটা। এর একটু পরে শুভ্রও ওর ভাবির সঙ্গে মোহনার রুমে আসে।
শুভ্রর ভাবি চলে যাওয়ার পর মোহনা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে মৃদু চিৎকার দিয়ে ওঠে।
-আরে আপনি?
-হ্যাঁ আমি।
-আপনি কি জানতেন, এখানে আসবেন?
-না, আমি তেমন কিছু জানি না। তবে ছবি আর বায়োডাটা দেখেছিলাম, বাসায় ফেরার পর ভাবি হুটহাট রেডি হতে বলল, তার পরই এখানে। তবে রাস্তায় দেখে কিছুটা অনুমান তো করেছিলাম। এমনি এমনি তো যত্ন করে রিকশায় তুলিনি। বলে একটা দুষ্টু হাসি হাসে শুভ্র। মোহনা লজ্জায় লাল হয়ে থাকে।
-ও, সেই কদম ফুলগুলো।’
-হুম, আপনার ফুল।
-ঠিক মানুষের কাছেই তো এসেছে।
-আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম আজকে।
-না, ওটা আমি বাসে ওঠার পরের ঘটনা।
-আপনি তো আপনার নাম, ফোন নাম্বার কিছুই দিয়ে যাননি।
-হুম, আপনিও তো দেননি। আপনি কী জড়োসড়ো হয়ে বসে ছিলেন, আমি তো কথা বলতেই ভয় পাচ্ছিলাম। আপনার বাবা বলছিলেন আপনি নাকি আরও কিছুদিন সময় চান, পড়াশোনা করতে চান।
-হ্যাঁ চাই তো, আমি তো বিয়েই করতে চাই না।
মোহনা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
-ও তা-ই, বিয়ের পরেও তো পড়াশোনা করা যায়, নাকি? তখন দুজন এক রিকশায় যাওয়া-আসা করলাম।
একটা দুষ্টু হাসি হাসে শুভ্র।
একপর্যায়ে শুভ্রর ভাবি দুজনকে নিয়েই ড্রয়িংরুমে গেলেন। যাওয়ার সময় শুভ্রর হাতের সঙ্গে মোহনা হালকা একটু ধাক্কা খেল। তাকিয়ে দেখে, শুভ্রর হাতে ওর লিপস্টিক লেগে গেছে। ভাবি থাকার কারণে কিছু না বলেই ড্রয়িংরুমে যায় দুজন। আংটি বিনিময় হয় তাদের। সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া শেষ করে শুভ্ররা রওনা হলো।
দুই পক্ষই খুশি, শুধু মোহনার বাবা একটু কনফিউজড, প্ল্যানমতো তো কিছুই হলো না। মোহনা হঠাৎ এত লক্ষ্মী মেয়ে কীভাবে হয়ে গেল, উনি হিসাব মেলাতে পারছেন না। এদিকে শুভ্রর বাবা খুব সহসাই আবার বসে কথাবার্তা ফাইনাল করতে চান।
যাওয়ার পথে গাড়ির সামনের সিটে বসে শুভ্র। শুভ্রর মা পেছন থেকে বলে উঠলেন, ‘শুভ্র, তোর হাতে ওইটা কিসের দাগ, বাবা।’
শুভ্র দাগ দেখে ভাবির দিকে তাকায়, ভাবিও হাসে। শুভ্র তাড়াতাড়ি কানে হেডফোন লাগিয়ে গানের সাউন্ড বাড়িয়ে দেয় :
‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।
মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে
এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান ॥’
 

কমেন্ট বক্স