৩ মাস ২৬ দিন পর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়েছে। আজ ১৭ আগস্ট (শনিবার) সকালে মসজিদের নয়টি দান সিন্দুক খুলে রেকর্ড ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সিন্দুকগুলো খোলার কাজ শুরু হয়। প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্দুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে দোতলায় নিয়ে মেঝেতে ঢালা হয়। এখন চলছে গণনার কাজ। গণনা শেষে টাকার পরিমাণ জানা যাবে। জেলা শহরের নরসুন্দা নদী তীরের ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে নয়টি লোহার দান সিন্দুক আছে। প্রতি তিন থেকে চার মাস পর পর এই সিন্দুক খোলা হয়।
এর আগে এ বছরের ২০ই এপ্রিল দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। গণনা শেষে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকাসহ বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা তখন পাওয়া যায়। সেটি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। তবে এবার বস্তার পরিমাণ বেশি হওয়ায় আরও বেশি টাকা হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, সর্বশেষ বার টাকা গণনা করতে প্রায় ১৮ ঘণ্টা লেগেছিল। এবার টাকা গণনা দ্রুত করতে কিশোরগঞ্জের আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার আরও ১১২ জন শিক্ষার্থীকে গণনার কাজে যোগ করা হয়েছে। ফলে এবার দুটি মাদ্রাসার প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৭০জন স্টাফ এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সেনাবাহিনীর সদস্য মিলে প্রায় সাড়ে তিনশ’ লোক টাকা গণনায় অংশ নিচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের নেতৃত্বে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মিজাবে রহমত এর উপস্থিতিতে দান সিন্দুক খোলা হয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তরিকুল ইসলাম, ল্যাফটেনেন্ট কর্ণেল রিয়াজুল করিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এটিএম ফরহাদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কাজী মহুয়া মমতাজ ও কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূইয়া ও পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমানসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এখন চলছে টাকা গণনার কাজ।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি গড়ে ওঠে। কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করে থাকেন। মানুষ টাকাপয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার দান করেন। এ ছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়।
ঠিকানা/এসআর