বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বন্ধে স্থায়ী সমাধান চেয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র। গত ১২ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে। কিন্তু এই হামলা বন্ধে কোনো সরকারই কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাছে একই দাবি জানিয়ে বলেন, সদিচ্ছা থাকলে এই কাজটি যে কোন সরকারই করতে পারতেন। ২০০১ সাল থেকে সংঘটিত সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনে অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিষ্ণু গোপ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক নবেন্দু বিকাশ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক ড. দ্বীজেন ভট্টাচার্য, সদস্য সচিব চন্দন সেগুপ্ত, সিনিয়র পলিসি এনালিস্ট, সাংবাদিক ও কলাম লেখক শীতাংশু গুহ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে ২০১১ সালে জজ সাহাবুদ্দীর কমিশন রিপোর্টে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দীন সরাসরি বিচারযোগ্য যে কয়েক হাজার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীর তালিকা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছিলেন সেটা ধরে দ্রুত-নিষ্পত্তির ক্ষমতা সম্পন্ন আদালতে বিচারের কাজ অবিলম্বে শুরু করার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘু সুরক্ষার জন্য যে ব্যবস্থাসমূহ রয়েছে সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি কঠোর সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশের দাবি জানিয়ে বলা হয়, এ সংক্রান্ত একটি খসড়া বিল আমরা ক্ষমতাচ্যুত সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছিলাম। সেই খসড়া বিলটি আমরা আবারও বর্তমান সরকারের কাছে পাঠাচ্ছি। ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্বহাল করে দেশে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ব্যবহার করে দেশের একটি চিহ্নিত অপশক্তি সারা দেশব্যাপী আরেক দফা সংখ্যালঘু বিরোধী সন্ত্রাস শুরু করেছে। গত কয়েক যুগ ধরে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী, কট্টর মৌলবাদী, ও উগ্রপন্থিরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে, তাদের সবকিছু লুটপাট করে, দেব-দেবীর মূর্তি সহ উপাসনালয় গুড়িয়ে দিয়ে, বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ করে, শারিরীক নির্যাতন ও শ্লীলতাহানী করে, ফেইক ফেইসবুক আইডি করে মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে, নিরপরাধ সংখ্যালঘু নাগরিকদের ওপর ব্লাসফেমির মিথ্যা অভিযোগ এনে দেশত্যাগে বাধ্য করে এসেছে। রামু, নাসিরনগর বা ২০২১ সালের পুজার সময় দেশের ২২টি জেলায় তারা সংখ্যালঘুদের ওপর যে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল এর সবই আপনারা জানেন। সেই ধারাবহিকতায় গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে কোটা অন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা উৎখাত করার সময় থেকে আরেক দফা সংখ্যালঘু নির্যাতন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে দেশের ৫২টি জেলায় ২০৫টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। দেশে ১৯৭১ সালের মতই মৃত্যুভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন আমাদের আত্মীয়-স্বজন।
এই বর্বর অত্যাচারীরা একটা চিহ্নিত ধর্মীয় সন্ত্রাসী রাজনৈতিক গোষ্ঠী যারা ১৯৪৬-এ নোয়াখালী হিন্দু ম্যাসাকার করেছে. ১৯৭১ সালে গণহত্যায় শুধু সংখ্যালঘুদের নয় আপনাদের মত প্রগতিশীল মুসলমানদেরও ধর্ষণ-হত্যা করেছে, ১৯৯২ সালের লোগাঙে আদিবাসীদের ম্যাসাকার করেছে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এক টানা পাঁচ বছর, তার পর, সাম্প্রতিক কালে, রামু, নাসির নগর, বোরহানুদ্দীন, সাঁথিয়া সহ সারা দেশে কয়েক ডজন বড় আকারের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস করেছে। বর্তমানে দেশে এই বর্বর শক্তি যে সংখ্যালঘু নির্যাতন চালাচ্ছে এর তীব্র নিন্দাও ধিক্কার জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশ বিদেশে তীব্র প্রতিবাদের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা দুজনই বিলম্বে হলেও এর নিন্দা করেছেন এবং সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধ করতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। আমরা তাতে কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি। দুঃখজনকভাবে, কেউ কেউ অবশ্য ব্যাপারটাকে “রাজনৈতিক প্রতিশোধ” বলার অপপ্রয়াস করেছেন। তবে, শাক দিয়ে কি আর মাছ ঢাকা যায়! দেশের মোট জনসংখ্যায় সংখ্যালঘু নাগরিকদের প্রতিনিধিত্বের হারের আলোকে, মোট ১০টি উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে এর ১টি মাত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হলে উক্ত দাবি ধোপে টেকে, নইলে নয়। উপাসনালয় ধ্বংসের পরিসংখ্যান নিশচয়ই আমাদের বলে দেয়ার দরকার নেই। তারা একবারও ভাবে না যে তাদের আত্মীয় স্বজন যারা বিদেশে সংখ্যালঘু হিসাবে বাস করছেন তাদের সঙ্গে সেদেশগুলোর মানুষ যদি ঠিক একই আচরণ করে তবে কেমন হবে। কেউ কেউ দেশে পুলিশ বিভাগ কাজ করছে না বলে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। যদি সেটা সত্যি হয় তাহলে সরকার এই কাজে সেনাবহিনীকে ব্যবহার করলেই পরেন; আমাদের সেনাবহিনী সুনামের সঙ্গে বিদেশে শান্তিরক্ষীর কাজ করতে পারলে দেশে না পারার তো কোন কারণ নেই।