Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

গণতন্ত্রই স্বীকৃত শ্রেষ্ঠ পন্থা

গণতন্ত্রই স্বীকৃত শ্রেষ্ঠ পন্থা
হারজিত দুটি শব্দের সমন্বয়ে একটি জোড়া শব্দ, যা একটি অপরটির বিপরীত অর্থবোধক। হার জিত শব্দ দুটির সম্পর্ক সাপে নেউলে হলেও এদের অবস্থান খুব কাছাকাছি। তবে রয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব। হারকে জিতে পরিণত করতে হলে সৎ সাহস দৃঢ় মনোবল কঠিন অধ্যবসায়সহ আরও অনেক ইতিবাচক গুণের অধিকারী হওয়া আবশ্যক। তবে সংযম থাকা প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। পৃথিবীতে সংযমী মানুষদের কঠিন অধ্যবসায়ের মাধ্যমে হারকে জিতে পরিণত করার বহু নজির রয়েছে। হার জিত কোনো প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফলাফলের বহিঃপ্রকাশ। হারার জন্য কেউই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় না, তবু অনেক সময় হেরে যেতে হয়। তবে হারকে লজ্জাজনক বা ব্যর্থতার প্রতীক হিসেবে না ভেবে জেতার অনুপ্রেরণা হিসেবে উপলব্ধি করলে এবং সেভাবে নিজেকে পরবর্তী ইভেন্টের জন্য প্রস্তুত করলে একসময় অবশ্যই সাফল্য লাভ করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে সাফল্য না আসা পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করে চেষ্টা অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।
পৃথিবীর অনেক বড় বিপর্যয়সমূহ সংঘটনের মূলে অন্যতম কারণ লোভ, হিংসা বা কোনো ভুল সিদ্ধান্তজনিত চাহিদা পূরণের দৃঢ় বাসনা, যা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক সময় উচ্চঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। তা সত্ত্বেও বাসনা পূরণের প্রবল স্পৃহা ঝুঁকি নিতে বাধ্য করে। ফলে অসফলতা থেকে মহা বিপর্যয় ঘটে যায়, যা কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটলে হয় ইতিহাস আর অখ্যাত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটলে হয় সর্বনাশ। যার খেসারত বিখ্যাত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার আওতাধীন সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর অখ্যাত ব্যক্তির শুধু নিজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিখ্যাত বা অখ্যাত ব্যক্তি নির্বিশেষে এরূপ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে হাত দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে পরামর্শ প্রদানকারীদের নিরপেক্ষতা ও দূরদর্শিতার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। কোনো কাজের ফলাফল যেহেতু ভবিষ্যৎ-নির্ভর এবং মানুষের অজ্ঞাত, তাই কাজ শুরুর সময় ইতিবাচক ফললাভের আশা নিয়েই মানুষ তা শুরু করে কিন্তু ফলাফল যে সব সময় আশানুরূপ হয় এমন নয়, তবে এ জন্য বিরূপ ফলাফলের সম্ভাবনা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে ফলাফল আশানুরূপ না হলেও তা সহনীয় পর্যায়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং ফলাফল বিরূপ হলেও ধৈর্যধারণ করে তা মোকাবিলা করার মতো মনোবল তৈরি হয় এবং জ্ঞানী মানুষেরা তা থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
প্রতিযোগিতার গুরুত্ব ও ফলাফল স্থান-কাল-পাত্র ও প্রতিযোগিতার ধরনের ওপর নির্ভরশীল, যা বিভিন্ন পর্যায়ের হতে পারে। সাধারণভাবে প্রতিযোগিতা বলতে কর্মজীবনের বাইরে খেলাধুলার বিভিন্ন ইভেন্ট পড়ালেখায় ভালো ফলাফল লাভের চেষ্টা বিভিন্ন প্রকার বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি নানা বিষয়কে বোঝানো হয়ে থাকে। তবে এসব প্রতিযোগিতা তেমন ঝুঁকিপূর্ণ নয় এবং হারজিতে খুব বড় রকমের বেদনা বা হিংসা প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়ার মতো ব্যাপার ঘটে না। কিন্তু কিছু জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রয়েছে, যার প্রতিযোগিতা ও ফলাফল খুবই মারাত্মক। যেমন বিমান থেকে প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্যারাস্যুট নিয়ে লাফ দেওয়া, গভীর সমুদ্রে কোনো অনুসন্ধান কাজে ডুবুরি হিসেবে অংশ নেওয়া, প্রতিযোগিতাপূর্ণ পর্বত আরোহণ, চ্যালেঞ্জিং মহাকাশ ভ্রমণ, সামরিক কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রতিযোগিতা এবং গোয়েন্দাকাজে শত্রুশিবিরে ঢুকে অপারেশন সার্থকভাবে সম্পন্ন করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা হলো অবলীলায় ন্যায়-অন্যায়ের বাধবিচার না করে স্বার্থপরের মতো নিজের প্রয়োজনে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখার মতো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অর্জন করা। এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও তার ফলাফল সাধারণের নিকট খুব সহজে প্রতিফলিত না হলেও একপর্যায়ে ঠিকই সাধারণ মানুষ জানতে ও বুঝতে পারেন এবং সমাজে তার আশাতীত মূল্যায়নও প্রতিফলিত হয়। কাজটি শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার চেয়েও কঠিন। কারণ শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ সার্বক্ষণিক নয় কিন্তু বিবেকের সাথের এ প্রতিযোগিতা সার্বক্ষণিক। রিপুর তাড়নায় ক্ষণিকের স্খলন ভূমিকম্পের মতো সব লন্ডভন্ড করে দিতে পারে। সুতরাং এহেন ত্যাগের তুলনা কেবল আত্মত্যাগকারীর সঙ্গেই চলে, অন্য কারও সঙ্গে নয়।
জনসম্পৃক্ত কিছু কাজ আছে, হারজিত যার নিয়ামক নয়, জনতুষ্টি ও আত্মতৃপ্তিই যার মূল চালিকাশক্তি। যার মধ্যে স্বনিয়ন্ত্রিত স্বেচ্ছাসেবামূলক কিছু কাজের সুযোগ আছে, যা নিজ ইচ্ছায় গ্রহণ বা বর্জন করা যায়। অপরপক্ষে কিছু কাজের (দায়িত্ব) পদ আছে আইনের বিধিবিধান সাপেক্ষে জনগণ বা সংগঠন কর্তৃক নিয়োজিত কিন্তু হীনম্মন্যতার কারণে কিছু লোক এর মধ্যেও হারজিতের গন্ধ খোঁজেন এবং নিজেকে এসব কাজের জন্য একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করেন। যার ফলে কোনোভাবে এসব কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারলে আজীবন তা ধরে রাখতে চেষ্টা করেন। একবার ভেবেও দেখে না কাজটি বাস্তবায়নের জন্য তার চেয়ে যোগ্য লোকও থাকতে পারে এবং এ জন্য তাদের এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য তার সরে দাঁড়ানো উচিত। উন্নত দেশসমূহে জনসম্পৃক্ত কাজে কেউ যাতে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি দায়িত্বে থাকতে না পারে, সে জন্য আইনের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয় কিন্তু কিছু লোকের একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব; তার পরিবর্তন হলে ওই পদে তার সমকক্ষ কোনো যোগ্য উত্তরসূরি নিয়োজিত না হওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে নিজেকে যেকোনো অজুহাত ও প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে প্রচলিত বিধিবিধান উপেক্ষা করে ওই পদে অধিষ্ঠিত রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা গ্রহণের পদক্ষেপ নিতে আগ্রণী ভূমিকা গ্রহণে সচেষ্ট হওয়ার মতো ধারণা সাধারণ লোকের মধ্যে সঞ্চারিত করার মতো প্রয়াস লক্ষ করা যায়। যদিও প্রবল জনসম্মতির চাপে তা পেরে ওঠা সম্ভব হয় না। তাই সাধারণভাবে এসব কাজকে হারজিত হিসেবে বিবেচনা না করে জনকল্যাণকর বিবেচনা করা হয়ে থাকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সবার কর্মতৎপরতা যে সমান বিবেচিত হবে এমন নয়, তাই নির্দিষ্ট সময়ান্তে জনগণ কর্তৃক তাদের কাজের মূল্যায়নপূর্বক পুনর্নিয়োগ বা পরিবর্তন সাধিত হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ, যার নামকরণ করা হয়েছে গণতন্ত্র। সার্বিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত যার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার্য। পরবর্তী সময়ে এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়া গেলে হয়তো তা-ই গ্রহণ করা হবে, ততক্ষণ গণতন্ত্রই হোক সর্বজনস্বীকৃত কল্যাণকর পন্থা এবং এ পন্থাকে মেনে নেওয়ার জন্য জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ব্যাপক ধৈর্য ও সহনশীলতা অর্জন সময়ের দাবি। যাদের তা মানতে অনীহা তারাই ইতিহাসের অন্ধকূপে নিক্ষিপ্ত হয় বারবার।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও গবেষক।

কমেন্ট বক্স