Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

বাইডেন আউট, কমলা ইন

বাইডেন আউট, কমলা ইন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনের বিদায়ঘণ্টা বাজার আশু সম্ভাবনার জল্পনা-কল্পনা বিভিন্ন মহলে বেশ কিছু সময় ধরেই চালু ছিল। ২৭ জুনের প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের কাছে অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে ধরাশায়ী হওয়ার পর এই জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে ওঠে। ওই বিতর্কে বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার (Physical and mental acuity) প্রশ্নে ইতিমধ্যে সৃষ্ট সন্দেহের যৌক্তিকতা সর্বমহলে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত বাইডেন দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন তথা নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পকে পরাজিত করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ব্যক্ত করে বাইডেন সমর্থক লিবারেল মিডিয়াসহ খোদ তার নিজের দলের বহু নেতা তাকে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে গিয়ে অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়ার আওয়াজ তোলেন। এ ক্ষেত্রে তার পরিবর্তে সবচাইতে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে যার নাম বেশি উচ্চারিত হয়, তিনি হলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। একজন সাবেক প্রসিকিউটর, স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল, সিনেটর এবং সর্বোপরি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তাকে প্রেসিডেন্ট পদে বাইডেনের বিকল্প হিসেবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির টিকিট দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতম ব্যক্তি মনে করা হয়। যদিও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে তার পারফরম্যান্স নিয়ে বহু মহলে প্রশ্ন রয়েছে। নারীর অধিকার তথা তাদের গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা পালন করায় কমলা হ্যারিস বিশেষ করে শহুরে নারীদের (Urban women) কাছে বেশ জনপ্রিয়। তা ছাড়া কৃষ্ণাঙ্গ, সংখ্যালঘু এবং তরুণ ভোটারদের মধ্যেও তার বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে তাকে পার্টির টিকিট দেওয়ার পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়। কমপক্ষে দুজন মার্কিন সিনেটরসহ বহু কংগ্রেস দলের শীর্ষ নেতা এই জনমতের অংশীদার হন। এসব নেতার অন্যতম হলেন সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার ও মাইক বেনেট, কংগ্রেস সদস্য অ্যাডাম শিফ ও জেমি রাসকিন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ওবামা ও সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তারা পর্দার অন্তরালে বাইডেনকে নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে যেতে রাজি করাতে নানাভাবে তৎপরতা চালান।
২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের প্রত্যাশামতো ফলাফল না হওয়ার পেছনে প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা কাজ করেছে বলে বাইডেনের মনে দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম নেয়। সেই প্রত্যয় থেকে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী হয়ে ওঠেন। এ কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর তৎপরতাকে পাত্তা না দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রশ্নে তিনি অটল মনোভাব ব্যক্ত করেন। তার ভাষায় I am not going anywhere  এবং একমাত্র ঈশ্বর চাইলে তিনি সরে যাবেন বলে সাফ জানিয়ে দেন। ঈশ্বর কীভাবে তার ইচ্ছার কথা তাকে জানাবেন, সেটা অবশ্য তিনি জানাননি। এ ধরনের বক্তব্যদানের দু-তিন দিনের মধ্যে বাইডেন কোভিডে আক্রান্ত হন। এ কারণে তিনি নির্বাচনী প্রচারাভিযান স্থগিত করে ডেলাওয়ারে নিজের বাসভবনে ফিরে আসেন। বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার কারণে তার কোভিডের উপসর্গের উন্নতি হলেও কোভিড পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ায় তিনি অনেকটা একাকী এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
মিডিয়ায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০ জুলাই বাইডেনের দুজন শীর্ষ উপদেষ্টা স্টিভ রিখেটি ও মাইক ডনিলন তার সঙ্গে দেখা করে দূর থেকে বসে আলাপে তাকে যে তথ্যটি দেন, তা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের শেষ ঘণ্টা বাজিয়ে দেয়। উপদেষ্টারা তাকে জানান, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অধিকাংশ কংগ্রেস সদস্য ও শীর্ষ নেতা ছাড়াও দলের অভ্যন্তরীণ জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, নির্বাচনে তার জয়লাভের সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তার নির্বাচন তহবিল সংগ্রহ কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে তাকে জানানো হয়।
উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলার পর ২১ জুলাই তিনি স্ত্রী জিল বাইডেন ও হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ অ্যামি টোমাসিনিকে বাইডেন জানান, গত রাতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাইডেন তার টুইটার অ্যাকাউন্টে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর জনসেবা ও দেশের প্রতি তার নিঃস্বার্থ অবদানের জন্য মিডিয়াসহ বহু মহল তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় মেতে ওঠে। পরে বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিসের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে ট্রাম্পকে পরাজিত করার লক্ষ্যে সবাইকে তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট পদে বাইডেনের সমর্থনের জন্য তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মার্কিন রাজনৈতিক মঞ্চে নিজের সরব উপস্থিতির ঘোষণা দেন। যদিও এ ক্ষেত্রে বিগত সাড়ে তিন বছর তিনি অনেকটা সাইডলাইনে ছিলেন। সহসাই মিডিয়াসহ ডেমোক্র্যাটিক মহল কমলা হ্যারিসের ব্যাপক গুণকীর্তনে মেতে ওঠে। বাইডেনের কারণে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজমান হতাশা সরে গিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা (Momentum) সৃষ্টি হয়, যাকে কেউ কেউ Kamalamentum নামে অভিহিত করার প্রয়াস পান। দলের ডোনার যারা কিছুদিন পূর্বেও দলকে চাঁদা দিতে ইতস্তত করছিলেন, তারা চাঁদা দিতে পুনরায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তথ্যমতে, কমলা হ্যারিসের নাম ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মাধ্য তার নির্বাচনী তহবিলে ৮১ মিলিয়ন ডলার জমা হয়। নির্বাচনে দলের নমিনি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ১৯৬৮ জন ডেলিগেটের সমর্থনও তিনি সহসাই অর্জন করে নিতে সক্ষম হন। এ অবস্থায় নতুন উদ্যমে কমলা হ্যারিস নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নেমে পড়েন। এ সময় তাকে খুশিতে গদগদ হয়ে মাঝেমধ্যে উচ্চ হাসিতে ফেটে পড়তে দেখা যায়। যা দেখে বাংলার একটি জনপ্রিয় লোকগান ‘তোমরা দেখো গো আসিয়া কমলায় নৃত্য করে হেলিয়া দুলিয়া’র কথা মনে পড়ে যায়।
যেভাবে মিডিয়া ও দলীয় নেতাদের সর্বমুখী চাপে পড়ে একজন সিটিং প্রেসিডেন্টকে দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনী দৌড় থেকে ছিটকে পড়তে হয়, সে রকম যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে কখনো ঘটেনি। ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান, কিন্তু সেটা ছিল তার জনপ্রিয়তা ও প্রহণযোগ্যতা কম থাকার কারণে।
কেউ কেউ বাইডেনের সরে যাওয়ার ঘটনাটিকে একটি Political Goup-এর রেজাল্ট হিসেবে দেখছেন, যার পেছনে বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা Catalyst-এর ভূমিকা পালন করেছেন বলে মনে করছেন।
কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হওয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, যার আলামত সাম্প্রতিক একাধিক জরিপে প্রকাশ পেতে দেখা যায়। এসব জরিপে হ্যারিসকে ট্রাম্পের সমান সমান বা এক-দুই পয়েন্টে এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। নির্বাচনে বিজয়ী হলে কমলা হ্যারিস হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা ও দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। ওবামা ছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট।
লেখক : কলামিস্ট
 

কমেন্ট বক্স