প্রবাসে আমব্রেলা সংগঠন বলা হয় বাংলাদেশ সোসাইটিকে। বাংলাদেশি কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করার কথা, অথচ কাজের চেয়ে ‘নোংরামি’তে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে সংগঠনটি। সম্প্রতি কার্যকরী কমিটির সভায় সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান ও কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেনের ব্যক্তিগত রেষারেষি রূপ নেয় মারামারিতে এবং একপর্যয়ে তা গড়ায় মামলায়।
ব্যক্তিগত রেষারেষি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সামনে আরো ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারে। সোসাইটির শীর্ষ কর্তা-ব্যক্তিরা বার বার চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি, কার্যকরী কমিটি ও সাধারণ সদস্যের অনেকে বলছেন- নির্বাচন নিয়ে মামলা মোকদ্দমার কারণে বাংলাদেশ সোসাইটি ডুবতে বসেছিল। প্রায় তিন বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ীরা আবার হাল ধরেন সোসাইটির। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থের দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ সোসাইটির মর্যাদা ভুলুষ্ঠিত হতে বসেছে। দু-একজন কর্মকর্তার বাড়াবাড়িতে বিব্রত সোসাইটির ট্রাস্টি ও কার্যকরী কমিটির কর্মকর্তারা।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা বলছেন- দুই কর্মকর্তার বিরোধ দীর্ঘদিনের। দুজনই মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি। ওই সংগঠনে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা। সে সময় তাদের সঙ্গে নেতৃত্বের বিরোধ থাকতেই পারে। তাই বলে সেই বিরোধকে কেন বাংলাদেশ সোসাইটির মত সংগঠনে টেনে আনতে হবে? সোসাইটিকে কেন ক্ষতিগ্রস্ত করতে হবে?
একজন প্রত্যক্ষদর্শী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির ২ জুলাই সর্বশেষ সভায় এমন কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি যে এজন্য মামলা মোকদ্দমা হতে পারে। এমনকি দুই নেতাকে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুজন কথা দিয়েছিলেন কেউ আর বাড়াবাড়ি করবেন না। তারপরও কেন পুলিশ ডাকাডাকি তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, ওই সভায় কার কত ক্ষমতা তা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আর এতে সোসাইটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এর অবসান হওয়া দরকার।
এদিকে দু’দিন কারাবাসের পর নিউইয়র্কের আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান। গত ১৪ জুলাই শুক্রবার নিউইয়র্কের কুইন্সের আদালত থেকে বিকালে জামিন পেয়ে ঘরে ফেরেন তিনি।
গত ১২ জুলাই বুধবার বিকালে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ১১০ প্রিসিঙ্কটে গেলে সেখানে আটক করা হয় মহিউদ্দিন দেওয়ানকে। তিনি নিজের স্বপক্ষে বক্তব্য দিতে গেলে পুলিশ আইন অনুযায়ী তাকে আটক করে।
২ জুলাই বাংলাদেশ সোসাইটির সভায় অপ্রীতিকর উক্ত ঘটনায় নওশেদের অভিযোগের তদন্ত করছিল পুলিশ। জানা গেছে, ১২ জুলাই বুধবার রাতে পুলিশ হেফাজতে মহিউদ্দিন দেওয়ান অসুস্থবোধ করেন। ১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে তাকে এলমহার্স্ট হাসপাতালে পুলিশের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দুপুর ২টার দিকে তাকে আবার পুলিশ প্রিসিঙ্কটে নেওয়া হয়। তার পরিবার কোর্টে গিয়ে জামিনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু কোর্টের সিরিয়াল না পাওয়ায় জামিন প্রক্রিয়া বিলম্ব হচ্ছিল। পরে পরিবারের সদস্যরা আইনজীবীর মাধ্যমে তার জামিন করান। ১৪ জুলাই শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় কুইন্স কোর্ট থেকে জামিন পান মহিউদ্দিন দেওয়ান। এ সময় কোর্টে তার স্ত্রী, ছেলে, ভাই জসিম, বন্ধু কাজী তোফায়েল ইসলাম, মফিজুল ভূইয়া রুমি, বাবু, তপন, কেনেডি ও আজম উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি ও কার্যকরী কমিটির কর্মকর্তারা উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, যা ঘটলো তা খুবই দুঃখজনক। সোসাইটির ভাবমূর্তির ওপর বড় আঘাত। তবে ভবিষ্যতে এমনটি যাতে না ঘটে তা নিয়ে পরবর্তী সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।