নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে হেনস্তা এবং এ ঘটনার জের ধরে ছাত্রদল নেতা বাদল মির্জার গ্রামের বাড়িতে হামলার ঘটনায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-প্রবাসে। পাল্টাপাল্টি দুটি ঘটনার জেরে ১৭ জুলাই সোমবার সন্ধ্যার পর নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে পক্ষে-বিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল হয়েছে। ঘটেছে হাতাহাতির ঘটনাও। ঘটনার আকস্মিকতায় পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে স্থানীয় প্রিসিঙ্কটের বিপুলসংখ্যক পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
হেনস্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত বাদল মির্জা (৩৬) নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলা ও জয়াগ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি আমকি গ্রামের আবু বাহারের ছেলে। ৮-১০ বছর আগে বাদল মির্জা দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। বাদল মির্জার গ্রামের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে ১৭ জুলাই সোমবার বিকালে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র শহীদ তৌহীদ স্মৃতি সংসদ। বাদল মির্জা এই সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক। সমাবেশে বক্তারা হামলার নিন্দা জানিয়ে এ ব্যাপারে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা কাজী আজম, যুবদল নেতা জাকির এইচ চৌধুরী, আবু সাঈদ আহমেদ, মিজানুর রহমান মিজান, আতিকুল হক আহাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাকসুদ এইচ চৌধুরী প্রমুখ।
এদিকে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে হেনস্তার চেষ্টার প্রতিবাদে একই দিন সন্ধ্যায় ৭৩ স্ট্রিটে বিক্ষোভ সমাবেশ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। তারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, শামীম ওসমানকে হেনস্তার চেষ্টাকারী বিএনপি-জামাত চক্রকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রবাসে তাদের প্রতিহত করা হবে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাখাওয়াত বিশ্বাস, গাজী লিটন, কামাল হোসেন রাকিব, নূরুজ্জামান সরদার, যুবলীগ নেতা সেবুল মিয়া, তুরাণ, আওয়ামী লীগের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য জেড এ জয়, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ নেতা কাজী আজিজুল হক খোকন, মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী মমতাজ শাহনাজ, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাছিব মামুন, কামরুল হিরা, ইলিয়ার রহমান প্রমুখ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহীদ তৌহীদ স্মৃতি সংসদের নেতারা সমাবেশ শেষ করে ৭৩ স্ট্রিটে ঢুকলে সেখানে আওয়ামী লীগ, ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের মুখোমুখি হলে দেখা দেয় উত্তেজনা। প্রথমে কথা কাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতি ও ঠেলাধাক্কা শুরু হয় তাদের মধ্যে। বেশ কিছু সময় সেখানে উত্তেজনা চলতে থাকলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশ দেয়। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। পুলিশও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে শামীম ওসমানকে হেনস্তার চেষ্টা চালানোর ঘটনাটি জানার পরপরই নোয়াখালীর গ্রামের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান বাদল মির্জার পরিবারের সদস্যরা। ১৬ জুলাই শনিবার সকালে সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের ১০-১৫ জন নেতাকর্মী শামীম ওসমানকে হেনস্তার চেষ্টার প্রতিবাদে বাদলের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এই হামলার ৩ মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ১০-১৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে এবং এক পর্যায়ে তারা বসত ঘরে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাদল দেশে থাকতে জয়াগ ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা ছিল এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সরকার পরিবর্তন হলে জনগণের রোষাণলে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে হেনস্তার চেষ্টার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। পরবর্তীতে বাদলের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে তার শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেয়। ওই সময় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তারা ককটেল বিস্ফোরণ ও ভাঙচুর করেননি।’