গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের কাছাকাছি ভয়াবহ দাবানল দেখা দিয়েছে। ১৭ জুলাই (সোমবার) এ দাবানলের সৃষ্টি হয় ও জোর বায়ুপ্রবাহের কারণে তা এথেন্সের নিকটবর্তী উপকূলীয় শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতে ওইসব এলাকা থেকে অনেক বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। জানা যায়, এথেন্সের পশ্চিমে উপকূলীয় শহর লুট্রাকিতে দাবানল শিবিরের কাছে চলে আসায় সেখান থেকে ১২০০ শিশুকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত কাউভারাস এলাকায় আরেকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
গ্রীক ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের ধারণা, দাবানলের শুরু হয় এথেন্সের খুব কাছের গ্রাম কুভারাসে। একপর্যায়ে জোরালো বাতাসের কারণে তা দ্রুত আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মূলত ভূমধ্যসাগরীয় তাপপ্রবাহের প্রভাবেই এ দাবানল সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, লাগোনিসির সমুদ্রতীরবর্তী আবাসিক এলাকাতেও এ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এই এলাকায় পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় সব গ্রীষ্মকালীন রিসোর্ট রয়েছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ভয়াবহ দাবানলে অন্তত পাঁচটি বাড়ি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর বিস্তৃত এলাকা থেকে ১০০ জনেরও বেশি নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে পুলিশ। আগুন কালিভিয়া, অ্যানাভিসোস গ্রাম ও আশেপাশের অঞ্চলের আস্তাবলে পৌঁছে যাওয়ায় কয়েক ডজন ঘোড়াকে ট্রাকে করে সরিয়ে নেওয়া হয়।
জানা গেছে, ২০ জন সৈন্য, ৬৮টি ফায়ার ইঞ্জিন, ১০টি বিমান ও ৬টি হেলিকপ্টারের সহায়তায় ২০০ জনেরও বেশি দমকলকর্মী দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। প্রয়োজনে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোস্টগার্ডের নৌকা ও জাহাজও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সোমবার বিকেলে তৃতীয় অগ্নিকাণ্ড শুরু হয় ও এথেন্সের প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৮ মাইল) উত্তরে ডারভেনোচোরিয়া এলাকায় বন পুড়িয়ে দেয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সোমবার সারা দেশে মোট ৮১টি অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় লড়াই করেছে এবং ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও প্রবল বাতাসের কারণে মঙ্গলবার আরও তীব্র আগুনের জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, এথেন্স থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরেই দাবানল জ্বলছে। বেশকিছু বাড়িঘর পুড়ে গেছে। দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোতে কিছুদিন ধরেই তাপপ্রবাহ চলছিল। এখন সেখানে ৭০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। গ্রিসে গ্রীষ্মকালে দাবানল সাধারণ বিষয়। ২০১৮ সালে একটি দাবানলে এথেন্সের পূর্বাঞ্চলীয় সমুদ্রতীরবর্তী মাটি নামক গ্রামে দাবানলের ঘটনায় ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
গত এক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ ইউরোপের অনেক দেশের মতো গ্রিসেও তাপমাত্রা বাড়ছে। মধ্য গ্রিসে তাপমাত্রা বেড়ে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। এর ফলে এথেন্সসহ বেশকিছু জায়গায় দাবানল সতর্কতা জারি করেছে গ্রিস সরকার। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, ডয়েচে ভেলে
ঠিকানা/এম