মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর পশ্চিমের অঙ্গরাজ্য ওরিগনের পোর্টল্যান্ড শহর থেকে লিখছি। কলম্বিয়া নদীর পাড়ে অবস্থিত এ বন্দর নগরীতে আসা ইংরেজি শিক্ষকদের পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সম্মেলন ‘টিসল ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন’ এ যোগ দিতে। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ৫ হাজারের মতো শিক্ষক, গবেষক, নীতিনির্ধারকেরা যোগ দিচ্ছেন এ সম্মেলনে। শিক্ষকতার চ্যালেঞ্জ, নতুন শিক্ষাপদ্ধতি, কারিকুলামসহ বৈচিত্র্যময় বিষয়-ভাবনার আদান-প্রদানের মহোৎসব বলা যায় এ কনভেনশকে। চারদিনের এ কনভেশনের তৃতীয় দিনে রয়েছে আমার একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপনা।
অবশেষে ২০ মার্চ মধ্য রাতে ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজের বিমান যখন পোর্টল্যান্ড বিমানবন্দরে অবতরণ করল স্বপ্নগুলো তখন ছুঁয়ে গেল যেন অন্য আকাশ। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ইথিওপিয়ান ট্যাক্সিচালকের সাথে শুরু হয় হোটেল অভিমুখে যাত্রা। পোর্টল্যান্ড তখন আধোঘুমে। জেগে আছে কেবল সড়কবাতি। জানালার কাঁচ ভেদ করে চোখ উকি দেয় একটু দূরে। পাহাড়ের মতো মনে হয়। ঠিক যেন আমার জাফলং থেকে দাঁড়িয়ে শিলং, মেঘালয়ের মতোন। ওয়েলমেট নদী পার হই। রাস্তার দু’ধারে চোখ ঘুরে। পথে পথে জমে আছে খানিক আগে হওয়া বৃষ্টির জল।
আমাকে স্বাগত জানায় এ স্বপ্ন শহরের অচেনা নিস্তব্ধতা আর হিম শীতল বাতাস।পার্কলেইন স্যুটসে চেক ইন যখন করি তখন কোথাও দিন, কোথাও মাঝরাত। পৃথিবী এমনি। কোথাও গরম, কোথাও ঠান্ডা। কেউ ঘুমে, কেউ জেগে। চোখে ভাসে পুণ্যের মুখ। কাতার এয়ারপোর্টে পৌঁছাতেই একমাত্র ছেলেটার ভয়েস ম্যাসেজ ‘বাবা তুমি তাড়াতাড়ি এসে যাইও’। তখনো ‘নিরাপদে পৌঁছেছি’- শুধুমাত্র এই খবরটির অপেক্ষায় উদ্বেগাকুল আমার মা। ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে স্ত্রীর মিসড কল ভেসে আসে। স্বজনদের টেক্সট। পড়ি, উত্তর দেই...। এ জীবন মায়াময়...।
২১ মার্চ শুরু হলো কনভেনশন। রেডিও ট্যাক্সিতে চেপে পৌঁছাই ওরিগন কনভেনশন সেন্টারে। মিশে যাই জ্ঞান অন্বেষু মানুষের ভিড়ে। ১১০ টি দেশ থেকে শিক্ষক, গবেষকরা এসেছেন। জানবেন, জানাবেন। সর্বোত্তমটা নিয়ে যাবেন নিজের ক্লাসে। শিক্ষক জীবনের আনন্দ এ-ই যে, জ্ঞানের অপার সমুদ্রে ভেসে থাকা যায় পরম আনন্দে, যে আনন্দে ভাসানো যায় শিক্ষার্থীদেরও।