জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি) নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের রয়েছে অগাধ ভালোবাসা ও সম্মান। উন্নত, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে জেএমসি’র পরিচালনাধীন বায়তুল মামুর মসজিদে নামাজ আদায় করে অন্যরকম প্রশান্তি লাভ করেন মুসল্লিরা। অন্যদিকে নিউইয়র্কে সবচয়ে বড় ঈদের নামাজের জামাত আয়োজন করে আসছে জেএমসি। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে ঈদের জামাতে মুসল্লিদের উপস্থিতি কমছে। এ নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে আলোচনা-সমলোচনা চলছে।
যথাসময়ে ঈদের নামাজ শুরু না হওয়া, মূলধারার রাজনীতিকদের এনে বক্তৃতা করানো এবং ঈদের নামাজে প্রকাশ্যে দুজন ইমামের কর্তৃত্ব প্রদর্শন ও দ্বন্দ্বের কারণে মুসল্লিদের কাছে গুরুত্ব হারাচ্ছে জেএমসি। ঈদের জামাত এখন পর্যন্ত বড় হলেও ক্রমশ তা কমতে শুরু করেছে। বিষয়গুলো স্পর্শকাতর হলেও এসব নিয়ে মুসল্লিরা কথা বলতে শুরু করেছেন। তারা চান, জেএমসি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হোক। যোগ্যরা জেএমসির নেতৃত্বে আসুক। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে কতিপয় ব্যক্তির নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এসব ব্যক্তি একটি ধমীয় প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের মত করে পরিচালিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। এমনকী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে আবহাওয়া ভালো থাকলে জ্যামাইকা হাইস্কুল মাঠে ঈদের নামাজের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হতো। স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে এরপর থেকে ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাশের আরেকটি স্কুল, থমাস এডিসন হাইস্কুল মাঠে। সেখানে প্রায় ১২ হাজার মুসল্লির ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। প্রতি বছর দুই ঈদে সেখানে মুসল্লির সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেত। কোনো কোনো বছর মাঠ ছাড়িয়ে সামনের সড়কেও উপচে পড়তো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুসল্লির সংখ্যা কমছে। সর্বশেষ গত ১৬ জুন রোববার পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জামাতে মুসল্লির উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। অনেকে বলেছেন, সেখানে এ বছর উপস্থিতি ছয় হাজারের বেশী হবে না।
কেন কমছে মুসল্লিদের উপস্থিতি? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মুসল্লি বলেছেন, জেএমসির ঈদ জামাতের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে। কখনোই যথাসময়ে জামাত শুরু হয় না। জামাতের আগে মূলধারার রাজনীতিকদের বক্তৃতাবাজি চলে। ফলে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ব্যাহত হচ্ছে। ইদানিং বক্তৃতা কিছুটা কমলেও তা এখনো মুসল্লিদের কাছে অসহনীয়।
ওই মুসল্লি বলেন, গত ১৬ জুন রোববার অনুষ্ঠিত ঈদের নামাজের আগে একজন ইহুদি ধর্মাবলম্বী প্রার্থী বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি সেখানে তাওরাতের কিছু অংশ পাঠ করেছেন। এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন- মূলধারার একজন হিন্দু প্রার্থী নামাজের আগে গীতা পাঠ করলে মুসল্লিরা কী তা মেনে নিতেন? এসব ঘটনা জেএমসির কর্মকর্তাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও মুসল্লিরা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা জেএমসির ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্যের গোচরে আনা হয়েছে। জেএমসির পরবর্তী সভায় ওই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এসব বিষয় তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ঈদের নামাজে মুসল্লিদের উপস্থিতি কমে যাওয়ার ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে জ্যামাইকার একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মুসল্লি বলেন, জেএমসির ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু একটি বিষয় মানতে হবে যে জেএমসির এক মাইলের মধ্যে কমপক্ষে ১০টি মসজিদ গড়ে উঠেছে। এসব মসজিদেও ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। ফলে জেএমসি আয়োজিত ঈদের জামাতে উপস্থিতি কিছুটা কম হওয়ার কারণ বলে উল্লেখ করেন ওই মুসল্লি। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এ বছর নামাজের সময়টা কোনোভাবেই তিনি জানতে পারেননি। আগে ফোন কল এবং পত্রিকার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নামাজের সময় জানতে পারতেন। কিন্তু এ বছর কোনো কিছুই চোখে পড়েনি বলে জানান তিনি।
মুসল্লিরা বলছেন, ভবিষ্যতে নামাজের আগে বক্তব্য কমাতে হবে। নামাজে শতভাগ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখতে হবে। শুধু নির্ধারিত ইমাম সাহেব বয়ান করবেন এবং ঘোষিত সময়েই নামাজ শুরু করতে হবে। এর আগে একজন ইমামের হাত থেকে আরেকজন ইমামের মাইক কেড়ে নেওয়ার ঘটনা মুসল্লিরা ভালোভাবে নেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার দাবি করেন, গত ঈদুল আজহার নামাজের জামাতে মুসল্লিদের উপস্থিতি ১০ হাজারের কম হবে না। তবে গত রোজার ঈদের চেয়ে উপস্থিতি কম হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এটা সবসময় হয়। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, কোরবাণির কারণে অনেকে বাড়ির কাছের মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন।
একজন ইহুদি প্রার্থীর তাওরাত থেকে পাঠ প্রসঙ্গে মো. ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, বিষয়টি সঠিক নয়। ওই প্রার্থী সুরা এখলাসের কিছু অংশ পাঠ করে বোঝাতে চেয়েছেন যে তাওরাতের সঙ্গে সূরাটির মিল রয়েছে।
নামাজের আগে মূলধারার রাজনীতিকদের বক্তৃতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেএমসি একটি বড় প্ল্যাটফরম। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এ কারণেই এখানে আসেন। আমরা তাদের সম্মান দেই। তিনি বলেন, এ বছর ঈদুল আজহার নামাজ যথাসময়ে হয়েছে। বক্তৃতাও কম হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।


ঠিকানা রিপোর্ট


