Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
খুতবায় দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা

পবিত্র হজ পালিত

পবিত্র হজ পালিত
পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে ‘উকুফে আরাফা’য় অবস্থানের মধ্য দিয়ে গতকাল পবিত্র হজ পালন করেছেন গোটা দুনিয়া থেকে আগত লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। আরাফাতের পাহাড়ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত হতে থাকে আবেগাপ্লুত বেশুমার কণ্ঠের ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইক, লা শারিকালাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা, ওয়ান্ নি’মাতা, লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ তালবিয়ায়। ‘জাবালে রহমত’ সাদা আর সাদায় একাকার। আদিগন্ত মরু প্রান্তর এক অলৌকিক পুণ্যময়তায় অধিকার করে রাখে। এক অপার্থিব আবহ রচিত হয় পুরো ময়দানে।         

সবার পরনে সাদা দুই খণ্ড বস্ত্র। সবারই দিনহীন বেশ। নেই আশরাফ-আতরাফ বিভেদের অচলায়তন। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, রহমতপ্রাপ্তি ও নিজের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তাআলার মহান দরবারে অশ্রুসিক্ত ফরিয়াদ জানান সমবেত মুসলমানরা। একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হন, কুশল বিনিময় করেন। বিশ্বভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্যেরও অবতারণা হয় গতকাল সেই ময়দানে। বিশ্ব মুসলমানের মহাসম্মিলনের দিন। গতকাল দুপুরে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা প্রদান করেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ মাহের আল মুয়াইকিলি। হজের খুতবা শুনে ইমামের পেছনে পরপর জোহর ও আসরের নামাজ জোহরের ওয়াক্তে আদায়ের পর সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন হাজিরা। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের সময় ব্যবধান তিন ঘণ্টা। সূর্যাস্তের পর আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হন হাজিরা। মূলত ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়। খুতবায় মুফতি মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমাবেশ এবারের হজে ২০ লাখের বেশি মুসলমান অংশ নিচ্ছেন। আল্লাহ রব্বুল আলামিনের মেহমানরা গতকাল সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে কেউ গাড়িতে, কেউ পায়ে হেঁটে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওনা হন। সৌদি কর্তৃপক্ষ হাজিদের আরাফাত ময়দানে আনার জন্য বিপুলসংখ্যক গাড়ির ব্যবস্থা করেন। ইহরাম পরা মুসলিমদের এই স্রোত যতই আরাফাতের নিকটবর্তী হতে থাকে, ততই তারা ভাবাবেগে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন। তাদের মানসচোখে ভেসে ওঠে সেই আরাফাত ময়দানের ছবি, যেখানে ১৪০০ বছর আগে আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ময়দানে মহান আল্লাহ তার প্রিয় নবীর কাছে সর্বশেষ ওহি নাজিল করেছিলেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দিনকে (ইসলাম) পরিপূর্ণ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দিন মনোনীত করলাম।’ (সূরা আল মায়িদা, আয়াত-৩) বিদায় হজ থেকে ফেরার তিন মাসের মাথায় ইসলামের কান্ডারি রহমাতুল্লিল আলামিন প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন। আরাফাতের ময়দান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৫০ মিটার উঁচুতে। চারপাশে পাহাড়ঘেরা একটি সমতল ভূমি। হাজিদের কেউ কেউ সেখানে তাঁবু টানিয়ে, কেউ খোলা আকাশের নিচে মাথায় ছাতা ধরে অবস্থান করেন। অনেকে আগের রাতেই সোজা উঠে যান আরাফাত ময়দানসংলগ্ন ৭০ মিটার উঁচু ‘জাবালে রহমত’ তথা রহমতের পাহাড়ে। রহমতের পাহাড়ে উঠে সেখানেই তাঁরা দিনভর মহান আল্লাহর করুণা ও মাগফিরাত কামনা করেন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মসজিদ ‘মসজিদে নামিরাহ’ থেকে জুমার নামাজের আগে বয়ান ও খুতবা পাঠ করেন সৌদি আরবের মুফতি। এই মসজিদকে এক দিনের মসজিদ বলা হয়। আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম ‘ফরজ’ বা অবশ্যপালনীয়। আরাফাতের পাহাড়ে একটি বড় উঁচু পিলার আছে। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলে থাকেন। উঁচু পিলারের কাছে যাওয়ার জন্য পাহাড়ে সিঁড়ি করা আছে, যাতে এটি বেয়ে খুব সহজে চূড়ায় চলে যাওয়া যায়। জনশ্রুতি আছে যে, হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (আ.) দীর্ঘদিন কান্নাকাটির পর এখানেই এসে মিলিত হয়েছিলেন। হাজিরা আরাফাত ময়দানে অবস্থান শেষে তাদের গন্তব্য মুজদালিফা। মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সমস্ত রাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন।

ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য রহমত কামনা করে দোয়া
মক্কার আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরায় পবিত্র হজের খুতবা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর হজের খুতবা দিয়েছেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ মাহের আল মুয়াইকিলি। খুতবায় মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বিশেষভাবে ফিলিস্তিনিদের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদের জন্য দোয়াও করেছেন। বাংলাদেশ সময় সোয়া ৩টার দিকে হজের খুতবা শুরু হয়। খুতবায় তিনি বলেন, হে মানুষ, আল্লাহ ও তার রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করো। কুরআনে বলা হয়েছে যে, ফেতনা-ফাসাদ থেকে দূরে থাকো। আর যে অন্যায় করবে, আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স