আরেকটি গ্রীষ্ম আসছে অতিরিক্ত তাপ নিয়ে এবং আপনি এর প্রতি ডিগ্রি তাপ অনুভব করবেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ সামান্য তাপমাত্রা বৃদ্ধিতেও সংবেদনশীল। গবেষকরা আশা করছেন যে এই ফলাফল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রভাবিত করবে।
মানব ইতিহাসের ধারায় মানুষের একটি সূক্ষ্ম কিন্তু নিরলস স্পন্দন পৃথিবীর উপর প্রভাব ফেলে। ১৮৫০ সালে শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার পর থেকে এই গ্রহটি প্রতি বছর উষ্ণ হয়ে উঠেছে, এবং ১৯৮২ সালের পর এ পর্যন্ত এই হার তিনগুণ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ববাসী ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়ার একটি প্রবাহ দেখতে পাব।
২০২৩ ছিল রেকর্ড করা সবচেয়ে উষ্ণ বছর। ইতিমধ্যেই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে আমেরিকা ও ইউরোপে চরম তাপমাত্রা দেখা যাবে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মানুষ এর প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা অনুভব করতে চলেছে।
নেচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ তাপমাত্রা পরিবর্তনের প্রতি পূর্বের চিন্তার চেয়েও বেশি সংবেদনশীল। আসলে, মানুষ ০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ছোট ছোট তাপমাত্রার পার্থক্যও আশ্চর্যজনকভাবে নির্ভুলতার সাথে বুঝতে পারে। ‘আপনি জানেন বা না জানেন, এটি জৈবিকভাবে সংবেদনশীল এবং এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে পারে।’ গবেষণায় নেতৃত্ব দানকারী ইউনিভার্সিটি অফ ট্রেন্টোর স্নাতক ছাত্র লরা ব্যাটিসটেল এ কথা জানান।
তাপমাত্রার পরিবর্তনের প্রকৃত প্রভাব পরিবেশগত এবং আবহাওয়া ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটিসটেল আশা করছেন, তার গবেষণা মানুষকে বোঝাতে সাহায্য করবে যে তারা আসলে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে এমনকি এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পরিবর্তন কতটা তীব্রভাবে অনুভব করবে যা হয়তো তাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানের প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলতে পারে।
মানব দেহ কিভাবে তাপে অভ্যস্ত হয় : মানবদেহকে প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রিত করা হয়, যা কেবল শারীরিক সুস্থতার জন্যই নয় বরং জ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়াগুলোর জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতি তাপমাত্রা, হোক সেটা প্রচণ্ড গরম বা প্রচণ্ড ঠান্ডা, উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন হিট স্ট্রোক বা হাইপোথার্মিয়া তৈরি করে। মানুষের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় বেঁচে থাকার জন্য তাপমাত্রার পরিবর্তনগুলোর সাথে তাদের সুচারুভাবে সংযুক্ত করেছে। ছোট ছোট পরিবর্তন সনাক্ত করা সম্ভবত একটি প্রাথমিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করত, যেমন আশ্রয় খোঁজা, পোশাক পরা এবং আরামদায়ক থাকতে আচরণগুলো সামঞ্জস্য করা।
কিন্তু এই সামঞ্জস্যগুলো খুব বেশিদূর যেতে পারে না। আধুনিক জলবায়ু পরিবর্তনের গতি এবং পরিমাণ অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে। দ্রুত বাড়তে থাকা তাপমাত্রা ও পরিবেশগত ব্যাঘাতগুলো মানুষের অভিযোজন ক্ষমতাকে চাপে ফেলেছে এবং প্রভাবগুলো প্রশমিত করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে।