Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি নেই, একটি মাত্র দল আছে: ড. ইউনূস

বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি নেই, একটি মাত্র দল আছে: ড. ইউনূস
ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় আগ্রাসনের ফলে বাংলাদেশ ‘একদলীয়’ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন নোবেল শান্তি বিজয়ী, বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত মুহাম্মদ ইউনূস।

জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়লাভ করেছেন, কিন্তু ওই নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বয়কট করেছিল। দলটির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের আগে হয় জেলে নয়তো নির্বাসনে ছিলেন।

ইউনূস গ্রামের দরিদ্রদের জন্য ১০০ ডলারেরও কমের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি ২০০৭ সালে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করে হাসিনাকে ক্ষুব্ধ করেছিলেন।

২০০৬ সালের নোবেল বিজয়ী ইউনূস শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযুক্ত করে বলেন, বাংলাদেশে প্রকৃত রাজনৈতিক বিরোধীদের অভাব রয়েছে।

গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় নিজ অফিসে ৮৩ বছর বয়সী ইউনূস বলেন, ‘‘বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি অবশিষ্ট নেই। একটি মাত্র দল আছে যারা সক্রিয় এবং সবকিছু দখল করে। তারাই সবকিছু করে, নিজেদের (তৈরি) পথে নির্বাচনে যায়।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘তারা নিজেদের মানুষদের বিভিন্ন রূপে নির্বাচিত করে - সঠিক প্রার্থী, ডামি প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে সবাই কিন্তু একই দলের।’’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তিনি ইউনূসের মন্তব্যের সঙ্গে একেবারেই একমত নন। তিনি টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেন, ‘‘শুধু আমিই একমত নই, দেশের জনগণও দ্বিমত পোষণ করবে।’’

তিনি আরো বলেন, এ দেশে গণতন্ত্র পুরোপুরি অকার্যকর।

অর্থনীতিবিদ ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে নিজ কাজের জন্য নোবেল জিতেছিলেন। হাসিনার সরকার তাকে ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে জোরপূর্বক বহিষ্কার করেছিল, এই বলে যে, তার আইনিভাবে অবসরের বয়স সীমা (৬০) পেরিয়ে গেছে।

৭৬ বছর বয়সী হাসিনা দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, যিনি ১৯৭৫ সালে একটি সেনা অভ্যুত্থানে তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হারিয়ে ছিলেন। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনাকে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়, যদিও সমালোচকরা তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভিন্নমত দমনের জন্য অভিযুক্ত করে থাকেন।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছিল যে, জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না।

বৃটিশ সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তরও ‘‘ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার’’ নিন্দা জানিয়েছিল।

প্রধান বিরোধী দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এই (নির্বাচনী) মহড়াকে ‘‘ভুয়া’’ নির্বাচন বলে নিন্দা জানিয়ে এটি বাতিল কর‍তে বলেছে। তারা হাসিনার পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচনের জন্য একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আহ্বান জানায়।

নির্বাচনের ঠিক আগে, বাংলাদেশের একটি আদালত শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল, যেটি তিনি অস্বীকার করেন। যদিও সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর তাকে কারাগারে যেতে হয় নি, কিন্তু ইউনূস (নিয়ম) লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে ১০০ টিরও বেশি মামলার মুখোমুখি, যেগুলোকে তিনি ‘‘খুবই ঠুনকো, বানানো গল্প’’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

আনিসুল হক ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা- এমন দাবি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গেছেন, যেখানে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।’’ উদাহরণস্বরূপ, সুপ্রিম কোর্ট ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলায় রায় দেওয়ার পর ইউনূস কর্তৃক প্রদত্ত ট্যাক্স এর কথা তিনি উদ্ধৃত করেন। পাশাপাশি, অন্য মামলাগুলো বিচারাধীন বলে সেগুলো নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

ইউনূসের সমর্থকরা বলছেন, হাসিনার সরকার তাকে অসম্মান করতে চায় কারণ তিনি একসময় ‘‘নাগরিক শক্তি’’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা ভেবেছিলেন। হাসিনা এই বিতর্ককে অস্বীকার করে ইউনূসকে ২০১১ সালে "গরিবদের রক্তচোষা" বলে অভিহিত করেন।

কোনো নাগরিক রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করলে সেটা কি অপরাধ? এমন প্রশ্ন রেখে ইউনূস বলেন, তিনি রাজনীতির জন্য উপযুক্ত নন বুঝতে পেরে মাত্র ১০ সপ্তাহ পরে এমন একটি দল গঠনের ধারণা ত্যাগ করেছিলেন।

ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ পুনরুজ্জীবিত করাটা কঠিন হবে। ‘‘পুনরায় শুরু করা খুব বেদনাদায়ক হবে কারণ আমরা এটিকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছি যেখানে এটি সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে গেছে।’’ 
১১ জুন রয়টার্সে প্রকাশিত সূত্র থেকে।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স