সেকশন-৮ প্রোগ্রামের আবেদন গ্রহণ করা শুরু করেছে নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং ডিপার্টমেন্ট। তারা দুই ধরনের হাউজিংয়ের ব্যবস্থা করে। একটি হলো তারা বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরি করে সেখানে হাউজিং কানেক্টের মাধ্যমে ইনকামের ভিত্তিতে ও অন্যান্য যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে লটারির মাধ্যমে বাসা বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এটি অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং নামে পরিচিত। এ ছাড়া আরেকটি ক্যাটাগরিতে বাসা বিক্রি করে। তা হলো তারা নিজেরা কোনো বাসা দেয় না। বিভিন্ন বাড়ি সেকশন-৮ প্রজেক্টে রয়েছে, সেসব বাড়ির জন্য ভাড়াটিয়াদের সেকশন-৮ এর ভাউচার দেওয়া হয়। এই ভাউচার পাওয়ার জন্য অনেক যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। এর আগে ২০০৭ সালে অর্থাৎ ১৫ বছর আগে একবার সেকশন-৮ এর আবেদন গ্রহণ করা হয়েছিল সাধারণ মানুষের জন্য। সেই আবেদনের বিষয়গুলো এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে সেকশন-৮ এর বাসার ভাড়া পাচ্ছেন। কিন্তু যারা পাননি অপেক্ষমাণ রয়েছেন, তাদের আবেদন পরবর্তী সময়ে নিষ্পত্তি হবে। ৩ জুন রাত ১২টা থেকে সেকশন-৮ এর আবেদন নতুন করে গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। যারা সিটির স্বল্প আয়ের মানুষ, বাসা ভাড়া দিতে পারছেন না বা স্বল্প আয়ের কারণে ভালো বাসায় থাকতে পারছেন না, তারা যাতে একটু ভালোভাবে থাকতে পারেন, তাদেরকে সহায়তা করার জন্যই সেকশন-৮ এর আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। এই আবেদন জমাকারীদের মধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষকে ভাউচারের আওতায় আনা হবে। এসব কথা বলেন নিউইয়র্ক হাউজিং অথরিটিতে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত সাইদুর রহমান মিজান ও কামাল হোসেন মিঠু।
কমিউনিটি নেতা আল আমিন রাসেলের উদ্যোগে সেকশন-৮ এর আবেদনের বিষয়ে জনসাধারণকে জানানোর জন্য ২ জুন বিকেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ প্লাজায় মামাস পার্টি হলে এই অনুষ্ঠান হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। সেখানে তারা দুজন উপস্থিত থেকে অনেকের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা এবং এই সেকশন-৮ এর আবেদন কীভাবে করা যাবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তারা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই আবেদন করার পরামর্শ দেন। বলেন, জেনেশুনে কিংবা জ্ঞাতসারে কেউ কোনো ভুল তথ্য দেবেন না। ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে পরে অনেক বড় ধরনের জটিলতা হতে পারে। কারও আবেদন যদি লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়, তখন তাকে ইন্টারভিউতে ডাকা হবে। সেখানে নথিপত্র সব জমা দিতে হবে। আবেদন করার সময় কোনো নথিপত্র দিতে হবে না। স্টেপ বাই স্টেপ আবেদন করতে হবে। আবেদন করার জন্য ২০-৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে। সে হিসেবে একবারই সব প্রস্তুতি নিয়ে বসতে হবে। কেউ যদি একবার আবেদন করা থেকে উঠে যান বা বের হয়ে যান, তখন তাকে আবার সব ফিলআপ করতে হবে। এটি ফিলআপ করার সময় সব তথ্য সঠিক দিতে হবে। এখন তারা বেশি তথ্য চাইছে না। নাম, ঠিকানা, যোগাযোগের নম্বর, জন্মতারিখ, ইনকামের তথ্যসহ বিভিন্ন তথ্য চাইছে। সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বরও চাইবে।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, একটি পরিবারের অন্তত একজন সদস্যকে আবেদন করতে হলে রেসিডেন্ট কিংবা সিটিজেন হতে হবে। এমন যদি হয় একজন আবেদন করেছেন, কিন্তু তাদের পরিবারের কারোরই এ দেশে স্ট্যাটাস নেই, তাহলে তারা আবেদন করতে পারবেন না। কিন্তু যদি একজন অনাগত সন্তানও এখানে জন্ম নেয়, তার একটি সোশ্যাল হবে এবং সিটিজেন হবে এমন সম্ভাবনা থাকলেও আবেদন করা যাবে। তবে আবেদন জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর প্রক্রিয়া শুরু হবে, বিষয়টি এমন নয়। এটি করতে সময় লাগবে এবং ধাপে ধাপে হবে। তবে আমরা বলব, যেহেতু ১৫ বছর পর এই আবেদন খুলেছে, তাই আপনারা যোগ্য হলে আবেদন করে রাখুন। আর আবেদন করার পর কেউ নির্বাচিত হলে না নিলেও সমস্যা নেই। আবার আবেদন ডিনাই হলেও সমস্যা নেই। কারণ এটি একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে তো গেল। কিন্তু আবেদন না করলে ভাগ্যপরীক্ষা করে দেখারও সুযোগ থাকল না। সব সুযোগই বন্ধ থাকল।
তারা আরও জানান, কারও নামে যদি বাড়ি থাকে, তাহলে তারা ভুলেও আবেদন করবেন না। কারণ যাদের বাড়ি আছে অর্থাৎ যেকোনো বাড়ির ডিডে যদি কারও নাম থাকে, তাহলে তারাও আবেদন করতে পারবেন না।
তারা জানান, সেকশন-৮ ভাউচারে একজন ব্যক্তি তার বাসা ভাড়ার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া সহায়তা পাবেন। আর বাকি ৪০ শতাংশ আবেদনকারীর যিনি ভাউচারের যোগ্য হবেন, তিনি দেবেন। একটি পরিবারের যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। এখানে আবেদনকারীর পরিবারের সংখ্যা বেশি হলেও তারা আবেদন করতে পারবেন। পরিবারের সংখ্যার লিমিট নেই। ইনকামের জন্য আলাদা সিট রয়েছে, সেটি তারা দেখতে পারবেন। যে আয়ের সীমা দেওয়া আছে, এর বেশি হলে কোনোভাবেই আবেদন করবেন না। আবেদন করার সময় বর্তমানে যে আয় করছেন, তা-ই দিতে হবে। যখন তিনি নির্বাচিত হবেন, ওই সময়ে তার যে আয় থাকবে, সেই আয় হিসাবেই তারা ভাউচার পাবেন। কারও যদি ব্যাংকে অর্থ থাকে, তাহলে তারা কিছু কম পাবেন। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হবে, সেই স্টেটমেন্ট দেখে এরপর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে তিনি কত ডলার পর্যন্ত পাবেন।
তারা বলেন, আবেদনকারী অবশ্যই মেইলিংয়ের জন্য এমন একটি ঠিকানা দেবেন, যেখানে তিনি তার চিঠি পাবেন। কারণ অনেকেই ভাড়া বাড়িতে আছেন, আগামীতে নাও থাকতে পারেন। তখন তার চিঠি না পেলে তিনি জানতেও পারবেন না আবেদনটি বিবেচিত হয়েছিল। অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা থাকতে পারে, হাউজিংয়ের বিল্ডিংয়ে থাকবেন কি না বা নেবেন কি না। আসলে এটা নিতে কোনো সমসা নেই। তবে কেউ সুবিধা নেওয়ার জন্য মিথ্যা তথ্য দেবেন না।
তারা আরও বলেন, কেউ তাড়াহুড়ো করে আবেদন করবেন না। একটি পূর্ণাঙ্গ আবেদন করুন, একটু সময় নিয়ে করুন। এতে করে আবেদনে ভুল থাকবে না। লটারি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। ভুল আবেদন বাতিল হবে। কেউ আবেদন করার আগেই চিন্তা করবেন না যে আপনার পাওয়ার সম্ভাবনা কতখানি। আগে আবেদন করুন। এরপর দেখবেন পান কি না। না পেলেও এখানে হারানোর কিছু নেই। পেলে তো খুবই ভালো। কিছু কিছু জায়গা সংরক্ষিত থাকবে, যেমন যারা ডিসঅ্যাবল, যারা সিনিয়র সিটিজেন প্রভৃতি। অনেকেই এ ধরনের সুযোগ লাইফটাইমও পাচ্ছেন। এ জন্য তাকে প্রতিবছর তথ্য দিতে হবে ও রিসার্টিফিকেশন করতে হবে।
মিজান ও মিঠু বলেন, এবারের সেকশন-৮টি ভিন্ন। কারণ এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মাঝে মাঝে যাদের জরুরি প্রয়োজন হয়, তাদেরকে সাময়িক সময়ের ইমার্জেন্সি বিবেচনা করে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে বলা যায়, যারা যোগ্য, তারা আবেদন করুন। সবাইকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। কেবল যারা ডিসঅ্যাবল, তারা ২৮ জুন পর্যন্ত হাতে লেখা ফর্ম জমা দিতে পারবেন। ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কসে দুটি সেন্টার থেকে ফর্ম নিয়ে তা জমা দেওয়া হবে। তবে তারা যে ডিসঅ্যাবল এটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। কেউ প্রকৃতপক্ষে ডিসঅ্যাবল না হলে সুবিধা নেওয়ার জন্য নিজেকে ডিসঅ্যাবল দাবি করবেন না। ১৮ বছরের উপরে যেকোনো যোগ্য আবেদনকারী এতে আবেদন করতে পারবেন।
তারা বলেন, ইনকাম বলতে নেট ইনকাম নয়, এটি গ্রস ইনকাম। যারা সেলফ এমপ্লয়মেন্ট আছেন, তারা সতর্কতার সঙ্গে আয়ের তথ্য দেবেন। কোনো ফুলটাইম স্টুডেন্টের ইনকাম ইনকাম হবে না। কারণ তিনি ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত ইনকাম করলেও তার ইনকাম এক্সক্লুডেড ইনকাম। ফাফসার ওয়ার্ক স্টাডি ইনকামও ইনকাম হবে না। যারা আবেদন করতে চান, তাদের (on.nyc.gov/section8-application) এই সাইটে গিয়ে আবেদন করার জন্য নির্দেশনা অনুযায়ী ধাপে ধাপে ফরম পূরণ করতে হবে।