হার্ট ফেইলিওরের প্রাথমিক ঝুঁকি শনাক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা —এমন তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। নতুন গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, এআইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন এমন অসঙ্গতি শনাক্ত করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা প্রচলিত উপায়ে এতোদিন শনাক্ত করা কঠিন ছিল।
হার্ট ও সংবহনজনিত বিভিন্ন রোগ বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে বিবেচিত, যেখানে প্রতি বছর মৃতের সংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেলায় এটি কারণ হিসাবে থাকে। এমন বাস্তবতায় স্কটল্যান্ডের একদল গবেষক পরীক্ষা করে দেখেছেন, কীভাবে এআই প্রযুক্তি এমন রোগের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ‘লাগসই সুবিধা’ দিতে পারে।
এমন রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এআই কীভাবে সাহায্য করতে পারে, তা খুঁজে দেখতে ৫৭৮ জনের একটি চূড়ান্ত দল গঠন করেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ডান্ডি'র ‘স্কুল অফ মেডিসিন’ বিভাগের গবেষকরা।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজির জার্নাল ‘ইএসসি হার্ট ফেইলিওর’-এ।
এ গবেষণায় এআইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জনসংখ্যাভিত্তিক স্বাস্থ্য রেকর্ড ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি হার্ট স্ক্যানের তথ্য ঘেঁটে দেখা হয়েছে যাতে হার্ট ফেইলিওরে আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করা যায়।
পরবর্তীতে এআইয়ের ‘ডিপ লার্নিং’ প্রযুক্তির সাহায্যে এমন সব ছবি পরীক্ষা করা হয়, যেগুলোয় রোগীর বাড়তি ঝুঁকি ছিল।
“বিভিন্ন ইকোকার্ডিওগ্রাফিক ছবিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ডিপ লার্নিং প্রযুক্তির অগ্রগতি তুলে ধরে আমাদের গবেষণাটি,” বলেছেন অধ্যাপক চিম ল্যাং।
“এতে আমরা ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ডের ডেটাসেট থেকে হার্ট ফেইলিওরের রোগীদের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছি।”
“এআই সফটওয়্যারের মাধ্যমে তৈরি উন্নত বিভিন্ন ইকোকার্ডিওগ্রাফি হার্ট স্ক্যান, হার্টের গঠন ও কার্যকারিতা নিয়ে আরও বেশি পরিমাপ করার সুযোগ দিয়েছে, যা হার্টের ফেইলিওর নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।”
“তবে স্বাভাবিক হার্ট স্ক্যানের এইসব পরিমাপ ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ডে নিয়মিত রিপোর্ট করা হয়নি।”
“সেগুলোকে যখন নিয়মিত হার্ট স্ক্যানের বিভিন্ন রিপোর্টের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তখন এআই আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে পেরেছে, যা দিয়ে গতানুগতিক ছবির পাশাপাশি বড় পরিসরেও প্রক্রিয়াকরণ করা সম্ভব।”
“এ পদ্ধতির ক্লিনিকাল ও গবেষণামূলক প্রভাব থাকতে পারে। কারণ, বাস্তবিক ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে রোগী বাছাইয়ের দক্ষতা ও গতি বাড়াতে পারে এটি। সেইসঙ্গে এটি বিভিন্ন হাসপাতালের সিস্টেমে হার্ট ফেইলিওরের নজরদারি ও প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থাও উন্নত করতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হার্ট ফেইলিওর একটি প্রচলিত রোগ হলেও তা নির্ণয় করা জটিল। এর মানে, হৃৎপিণ্ড কার্যকরভাবে শরীরের সব অংশে রক্ত পাঠাতে পারে না।
জীবনধারা পরিবর্তন, অস্ত্রোপচার ও ওষুধ ব্যবহার করে এইসব লক্ষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুতর ও দীর্ঘমেয়াদী অবস্থা, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে খারাপ হতে থাকে।
জানুয়ারিতে ‘ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন (বিএইচএফ)’র প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে গোটা বিশ্বে আনুমানিক দুই কোটি পাঁচ লাখ মানুষ হৃদযন্ত্র ও সংবহনজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যা প্রতি দেড় সেকেন্ডে একজন ব্যক্তির মৃত্যুর সমান।
ঠিকানা/এসআর