বাংলাদেশ থেকে মায়ের হাত ধরে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। এখানে আসার পর চেষ্টা করেছেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। সে অনুযায়ী চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। মায়ের চেষ্টা ও সহযোগিতারও কমতি ছিল না। এখানে বিয়ে করবেন, এমন পরিকল্পনাও ছিল। সে অনুযায়ী বিয়েও করেছিলেন এখানকার এক বাংলাদেশি-আমেরিকানকে। কিন্তু নয় মাসের বেশি সংসার করা হয়নি। নয় মাস পর স্বামী তাকে ডিভোর্স দেন। তবে ডিভোর্স হলেও নির্যাতিতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সুযোগ পাবেন মেয়েটি।
ডিভোর্সের পর মেয়েটির পরিবার জানতে পারে, দিনের পর দিন তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। অনেক অপমানজনক কথা বলা হতো তাকে। এমনকি ওই ছেলেটি প্রতিনিয়ত মেয়েটিকে বলত, তুমি কাগজ বানানোর জন্য আমাকে বিয়ে করেছ। মেয়েটি কোনোভাবেই ছেলেটিকে বোঝাতে পারেনি, তার এমন উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি জানতেন যে বিয়ের পর স্বামী সিটিজেন হলে তিনি স্বাভাবিকভাবে আবেদন করলেই এখানে থাকার বৈধতা পাবেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি (স্বামী) তা মানতে নারাজ ছিলেন। অথচ তিনিই পারিবারিকভাবে সমঝোতার মাধ্যমে ও আলোচনার মাধ্যমেই বিয়ে করেছিলেন মেয়েটিকে। বিয়ের প্রথম কিছুদিন সংসারজীবন ভালো চললেও কিছুদিন পর থেকেই দেখা দেয় বিপত্তি। দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে।
সূত্র জানায়, মেয়েটির স্বামী তাকে কোনোভাবেই বাসায় রাখতে চাননি। একপর্যায়ে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। মেয়েটি তার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে না চাইলেও কোনো উপায় ছিল না। স্বামী যেহেতু তাকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই তার কিছু করার ছিল না। কারণ তার এ দেশে কোনো নথিপত্র নেই। ফলে নিরুপায় হয়ে স্বামীর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়েছে। বিষয়টি মেনে নিতে হয় মেয়ের পরিবারকে।
সূত্র জানায়, মেয়েটি দিনের পর দিন স্বামীর সংসারে নির্যাতিত হতে থাকেন। তাকে তার স্বামী বারবার বলেছেন, তিনি গ্রিন কার্ডের জন্য বিয়ে করেছেন। এটা জানেন বলেই তিনি তার জন্য আবেদন করবেন না। মেয়েটি তখন নিরুপায় হয়ে তা মেনে নেন এবং স্বামীকে বলেন, যদি গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন না করেন, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। তা-ও তিনি সংসার করবেন। নথিপত্র ছাড়াই থাকবেন। কিন্তু স্বামীটি এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তার পরও মেয়েটি সকল নির্যাতন সয়ে স্বামীর সংসার করে যাচ্ছিলেন। এতেও ক্ষান্ত হননি তার স্বামী। প্রায়ই তাকে খোঁচা মেরে কথা বলতেন এবং অপমান করতেন।
এদিকে বাবা-মা তাদের নির্যাতিত মেয়ের বিষয়ে ছেলের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। উল্টো বলেছেন, ছেলের কথার বিরুদ্ধে তারা কোনো কথা বলতে পারবেন না। ছেলে যা বলবে তা-ই হবে। ডিভোর্সের বিষয়ে ছেলের বাবা-মা বলেন, ছেলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, তাদের কিছু বলার নেই। এমনকি এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মেয়েটিকে নিয়ে তার পরিবার স্বামীর বাড়িতে যায়। কিন্তু তার স্বামী কথা বলতে রাজি হয়নি। উল্টো পুলিশে কল করে। পুলিশ এসে ঘটনার বিস্তারিত জানে। পুলিশ ছেলেটির সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে সে মানসিক ভারসাম্যহীন। এ কারণে তার কথার গুরুত্ব দেয়নি। মেয়েটির কোনো সমস্যা হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেছে।
সূত্র জানায়, নয় মাস বিবাহিত জীবনে নির্যাতিত হতে হতে অনেকটাই বিপর্যস্ত হতে থাকে মেয়েটি। ফলে ছেলেটি ডিভোর্স দিয়ে মুক্তি দেওয়ার পর এখন মেয়েটি ভালো আছে। ওই ছেলে তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিলেও তা ছিল নামমাত্র। স্ত্রীকে এ দেশে বৈধভাবে থাকার নথিপত্র করে দিতে রাজি হয়নি। অথচ তার নির্যাতনের কারণেই এখন যুক্তরাষ্ট্রে নির্যাতনের শিকার হিসেবে থাকার সুযোগ পাচ্ছে মেয়েটি।