Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

চীনের চিকনে মোটা হিসাব হাসিনার

চীনের চিকনে মোটা হিসাব হাসিনার
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতা ও হত্যাযজ্ঞ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাবের কৌশলী অবস্থান শেখ হাসিনা সরকারের। পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যাপক আয়োজনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশে শোডাউন করানো হয়েছে ছাত্রলীগকে দিয়ে। তারা পদযাত্রা ও সমাবেশ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশে দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এ ইস্যুতে ‘জয়কালে ক্ষয় নেই’ তত্ত্বে আরও মাত্রা পাওয়ার আশায় এগোচ্ছে সরকার। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পিণ্ডি উদ্ধার করা হয়েছে ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কীভাবে, কোন ভঙ্গিতে, কীসব বলতে হবে-এর কড়া রিহার্সাল করানো হয়েছে ছাত্রলীগের বাছাই করা নেতাদের। ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা হাতে পদযাত্রা ও সমাবেশে জড়ো করানো হয়েছে অনেককে। ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বাংলাদেশে অধ্যায়নরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে ব্যাপক প্রশংসা। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতারা। ইসরায়েলের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে জেগে উঠেছে, তা গোটা বিশ্বের তারুণ্যকে প্রভাবিত করছে বলে তেজোদ্দীপ্ত বক্তৃতা করেন ছাত্রনেতারা। ‘স্টুডেন্ট অব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারেও আলাদা বিক্ষোভ-সমাবেশ করানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্টে’ সংহতি জানিয়ে পালিত এই কর্মসূচিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করার পাশাপাশি মার্কিন সরকারের সমালোচনা করানো হয় শক্ত হাতের আয়োজন ও প্রযোজনায়।
পুরো বিষয়টিই কূটনৈতিক উদ্দেশ্যে। এতে লাভবান হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখছে সরকার। প্রকাশ্যে বলাও হয়েছে, যারা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকারকে চাপে রেখেছে, তারাই এখন বিশ্বময় চাপে আছে। এ অভিযাত্রায় চীন ও ভারত দুদিকেরই ব্যাপক সমর্থন ও সহযোগিতার আশা সরকারের। বিশ্ববাস্তবতাকে পুঁজি করে পা ফেলেছে সরকার। সামনে চীনের দাপট যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় সরকারের হাতে আরও নানা ছক আঁকা রয়েছে। বাণিজ্যের সঙ্গে কূটনীতিতেও চীন এখন অবিশ্বাস্যভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বিট করছে। চীনা চিকন বুদ্ধির বেনিফিশিয়ারি হওয়ার মোটামুটি নিশ্চয়তাও মিলেছে। চীনের মালিকানাধীন কোম্পানি চীনা অর্থে মেক্সিকোতে ‘মন্টেরের ম্যান ওয়াহ ফার্নিচার ফ্যাক্টরি’ নামে প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে বিলাসবহুল ও আরামদায়ক সব চামড়ার সোফা তৈরি করে সেগুলোর গায়ে ‘মেইড ইন মেক্সিকো’ লিখে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্টের মতো বড় বড় সব বিপণিতে রফতানি করছে।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মেক্সিকোর ত্রিমাত্রিক এ সম্পর্ক ‘নিয়ারশোরিং’ নামে নতুন শব্দে পরিচিত হয়ে উঠেছে মেক্সিকোতে। ম্যান ওয়াহ কয়েক ডজন চীনা কোম্পানির মধ্যে একটা, যারা সম্প্রতি উত্তর মেক্সিকোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এসে অবস্থান নিয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের কাছাকাছি এসে পণ্য উৎপাদন করে বিক্রি করা যায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে ওয়াশিংটন চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ও কর আরোপ করেছে, সেটা এড়ানোও সম্ভব হচ্ছে। অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক্যাল দিক চিন্তা করেই তারা মেক্সিকোতে তাদের কোম্পানি সরিয়ে এনেছে। সেখানে আরও তিন-চারগুণ উৎপাদন করে চীনারা বাণিজ্যের নামে মার্কিনিদের ঠিক দোরগোড়ায় পৌঁছার অভিযাত্রায় আগুয়ান। ব্যবসা-বাণিজ্যে চীনের অভিজ্ঞতা হাজার হাজার বছরের, সেই তুলনায় ব্যবসার চিন্তাধারায় বহু পিছিয়ে রয়েছে মার্কিনিরা। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েও চীনকে যুক্তরাষ্ট্র কাবু করতে পারবে না বলে বিশ্লেষণে তাড়িত বাংলাদেশ সরকার।
লোকসভা নির্বাচনসহ অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ের চাপে ভারতের আপাতত এ নিয়ে পর্যাপ্ত ভাবনার অবস্থা নেই। তার ওপর খালিস্তান আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি ভারত-কানাডার কূটনীতিক সম্পর্কে আরও চিড় ধরেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে ‘খালিস্তানপন্থী’ স্লোগান দেওয়া হয়েছে। কানাডাভিত্তিক সিপিএসি টিভিতে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্রুডো খালসা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ‘খালিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান আরও জোরে দেওয়া হতে থাকে। ঘটনার পর কানাডার ডেপুটি হাইকমিশনারকে তলব করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ এবং দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়েছে। সমাবেশটিতে ভাষণে গত বছর শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারত জড়িত বলে চাঁছাছোলা অভিযোগ করেন ট্রুডো। কানাডায় শিখদের অধিকার ও স্বাধীনতা সর্বদা রক্ষা করার এবং সম্প্রদায়কে ঘৃণা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দেন। কানাডার নাগরিক এবং খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জারকে হত্যার দায়ে কানাডা পুলিশ ভারতীয় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কানাডার অভিযোগ, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা ভারতীয় সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি হিট স্কোয়াডের অংশ হিসেবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ভারত, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য পরিস্থিতিটি যারপরনাই যন্ত্রণার।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইনগতভাবে বসবাসরত খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার পরিকল্পনার জন্য তথ্য-প্রমাণ দিয়ে ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইংকে (র) দুষছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জন-পিয়ের আনুষ্ঠানিক জানিয়েছেন, তারা বিষয়টিকে সিরিয়াসলি দেখছেন। বরাবর স্নায়ুযুদ্ধের সময় এমন বেহিসাবি ঘটনাই হয়। আবার পাল্টেও যায়। ততক্ষণে ঘনঘটার মাঝে লাভবান হয়ে যায় গুরুত্ব বা আলোচনার বাইরের কোনো দেশ। তা কখনো আঞ্চলিকে, উপ-আঞ্চলিকে। কখনো-বা নিজ দেশের অভ্যন্তরে। হালে সেই অবস্থায় অবস্থান বাংলাদেশ তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের। ভারতের বাইরে প্রতিবেশী আরেক দেশ মিয়ানমার পরিস্থিতিও সরকার, আওয়ামী লীগ সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আশীর্বাদের। 

কমেন্ট বক্স