ইন্টারনেটে স্ক্যামারদের যন্ত্রণা এড়াতে ও এদের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ কত উপায়ই না বের করছে। বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে মানুষকে। তা করেও অনেকেই রক্ষা পাচ্ছেন না। স্ক্যামারদের কারণে ব্যাংকের অর্থ খুইয়েছেন অনেকে। অনেকের গোপনীয় তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে। অনেকের মোবাইল ফোনের বিভিন্ন তথ্য হ্যাক হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে স্ক্যামারদের নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি, ভয়, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে। স্ক্যামারদের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ নানা ধরনের সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিয়েও রেহাই পাচ্ছে না। কারণ স্ক্যামাররা নতুন নতুন উপায় অবলম্বন করছে। স্ক্যাম করার জন্য বর্তমানে তারা ডোর টু ডোর পৌঁছে যাচ্ছে। স্ক্যামারদের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়ে গেছে যে মানুষ ঘরে থেকেও নিরাপদ নয়। নানা কৌশলে তারা মানুষের বাসায় গিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে সর্বস্বান্ত করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের দরজায় স্ক্যামারদের দৌরাত্ম্য বাড়ায় ভোক্তা সতর্কতা হিসেবে নিউইয়র্ক ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ডিভিশন অব কনজিউমার প্রোটেকশন ডোর-টু-ডোর স্ক্যাম এড়ানোর জন্য সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা জারি করেছে। সেই সঙ্গে স্ক্যামারদের থেকে নিরাপদে থাকতে কিছু টিপস দিয়েছে। ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হচ্ছে, গ্রীষ্ম ও উষ্ণ আবহাওয়া ডোর-টু-ডোর স্ক্যামারদের আরও বেশি নিয়ে আসে। এ বিষয়ে ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি রড্রিগেজ বলেন, আপনি কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন, তা আরও ভালোভাবে বুঝতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য, আমাদের ভোক্তা সুরক্ষা বিভাগ থেকে আপনাকে একটি সম্ভাব্য ডোর-টু-ডোর স্ক্যামার শনাক্ত করতে এবং আপনার কষ্টার্জিত অর্থ কেউ নিয়ে যাওয়া থেকে এবং প্রতারিত হওয়া এড়াতে সাহায্য করবে। স্ক্যামাররা সাধারণত বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তারা বৈধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং একটি পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করার জন্য আপনার দরজায় কড়া নাড়া দেয়। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো আপনার কাছ থেকে কিছু চুরি করা।
রড্রিগেজ আরও বলেন, অনেক ব্যবসা ডোর-টু-ডোর বিক্রয়ের ওপর নির্ভর করে, কিন্তু পরের বার ডোরবেল বাজলে এটি বৈধ বিক্রয়কর্মী নাকি একজন প্রতারক, তা জানা কঠিন হতে পারে। ডোর-টু-ডোর স্ক্যাম বছরের পর বছর ধরে চলছে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বেশি লক্ষ্য করে স্ক্যামাররা। ডোর-টু-ডোর স্ক্যামাররা ইউনিফর্ম এবং ব্যাজধারী কর্মচারী বা খণ্ডকালীন চাকরিতে নিযুক্ত কলেজছাত্র হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। তারা প্রায়ই ব্যক্তিগত তথ্য বা অর্থ দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের প্রতারণা করে। কিছু ক্ষেত্রে তারা এমনকি আপনার মনোযোগ বিভ্রান্ত করতে পারে, যাতে তাদের সহযোগী আপনার কাছ থেকে চুরি করতে আপনার বাড়িতে লুকিয়ে থাকতে পারে। প্রতারিত হওয়া এড়াতে টিপসগুলো নিম্নরূপ :
স্ক্যামাররা নকল সৌরশক্তি প্রদানকারী হিসেবে প্রতারণা করতে পারে। তারা এমন গ্রাহকদের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে, যারা তাদের বাড়িতে জ্বালানি দেওয়ার জন্য টেকসই শক্তি খুঁজছে এবং আপনাকে ‘এনরোলমেন্ট ফর্ম’ বা ‘অ্যাপ্লিকেশন’ সাইন ইন করানোর জন্য বোঝানোর চেষ্টা করে। ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার চেষ্টা করে বা অন্যভাবে জালিয়াতি করে।
স্ক্যামাররা ইউটিলিটি কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে পারে এবং বলতে পারে একটি ইউটিলিটি জরুরি অবস্থা তাদের পরিদর্শন করতে হবে। অনেক চোর জোড়ায় জোড়ায় কাজ করে। একজন আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার সাথে সাথে অন্যজন আপনার বাড়িতে ঢুকে লুকিয়ে চুরি করে। যেকোনো ‘ইউটিলিটি রিপ্রেজেন্টেটিভ’ হলে তাকে উপেক্ষা করতে হবে। ইউটিলিটি কোম্পানিগুলো সাধারণত বাসিন্দাদের তাদের বাড়িতে বা বিল্ডিং অ্যাক্সেসের প্রয়োজন হলে সতর্ক করার জন্য আগে চিঠি পাঠায়। ওই ধরনের চিঠি আগে পেয়ে না থাকলে কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়াই উচিত।
বেশির ভাগ ঠিকাদার বাসার সামনের দরজায় ব্যবসা খোঁজার জন্য খুব ব্যস্ত থাকে। ঠিকাদারদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এই স্ক্যামাররা দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে, যদি বাড়ির মালিক কোনো ধরনের পেমেন্ট অগ্রিম প্রদান করেন।
স্বনামধন্য অ্যাসফল্ট ঠিকাদাররা খুব নির্ভুলতার সাথে জানে যে তাদের একটি কাজ শেষ করার জন্য কতটা উপাদান প্রয়োজন এবং সাধারণত কোনো অবশিষ্ট থাকে না। এই স্ক্যামাররা এমন একটি চুক্তির জন্য আপনার ড্রাইভওয়ে প্রশস্ত করার প্রস্তাব দিতে পারে, যা সত্য এবং খুব ভালো বলে মনে হয়। তারপর কাজ শেষ হয়ে গেলে বেশি দাম নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। অ্যাসফল্ট স্ক্যামাররা আপনার অজান্তে বা অনুমতি ছাড়াই আপনার পুরোনো ড্রাইভওয়েকে প্রশস্ত বা ভাঙা শুরু করতে পারে। তারপরে উচ্চ অর্থ প্রদানের দাবি করতে পারে। যদি এমন হয়, অবিলম্বে পুলিশকে কল করতে হবে।
ফেডারেল ট্রেড কমিশনের মতে, কিছু প্রতারক আপনার বাড়িতে নকল হোম সিকিউরিটি অফার করতে আসতে পারে। আপনি জানতে পারবেন এটি একটি স্ক্যাম, যদি তারা দাবি করে যে আপনার আশপাশে বেশ কয়েকটি ডাকাতি হয়েছে এবং তারা বিনামূল্যে নিরাপত্তা পরিদর্শন অফার করছে।
সব সময় অজানা কলারদের আইডি পরীক্ষা করতে হবে। তবে আইডি কার্ডের নম্বরে ফোন করবেন না, পরিবর্তে কোম্পানির অনলাইন ওয়েবসাইট চেক করে নিশ্চিত করতে হবে যে নম্বরটি বৈধ।
একজন বৈধ বিক্রয়কর্মী এবং একজন স্ক্যামারের মধ্যে পার্থক্য জানতে হবে। বৈধ বিক্রয়কর্মীরা অবিলম্বে নিজেদের শনাক্ত করবে এবং একটি ফটো আইডেন্টিফিকেশন দেখাবে। স্ক্যামার হলে তা করবে না। কোনো কিছু বিক্রয় করার জন্য উচ্চচাপ বিক্রয় কৌশল ব্যবহার করবে না।
সাধারণ নিরাপত্তা সতর্কতা অনুসরণ করার জন্য যেসব ব্যবস্থা নিতে হবে, এর মধ্যে মনে রাখতে হবে, সব সময় সামনে এবং পেছনের দরজা বন্ধ রাখতে হবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে কখনো নগদ অর্থ প্রদান করা যাবে না। চেক বা ক্রেডিট কার্ড পেমেন্ট দিলে অনলাইনে বা আপনার ব্যাংকের গ্রাহক পরিষেবা লাইনে কল করে বাতিল করার সুযোগ থাকবে। কোনো কিছু সন্দেহজনক মনে হলে অবিলম্বে পুলিশকে জানাতে হবে।