Thikana News
১৮ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪


 

বাংলাদেশকে কঠোর চাপে রাখতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশকে কঠোর চাপে রাখতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র


অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর কার্যকর চাপ রাখতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনের আগে যেমনি নির্বাচনের পরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানকে পুঁজি করে বিএনপি সরকারবিরোধী কঠোর অবস্থান নিতে শক্তি জোগাচ্ছে। মোদির সঙ্গে বাইডেনের আলোচনার পর পরিস্থিতির উন্নতি কিছু ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হতে পারে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশবিরোধী সম্ভাব্য যেসব পদক্ষেপ নেবে, তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে বাংলাদেশকে প্রত্যাহার করে নেওয়া। বাংলাদেশের সদস্যরা শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহসী ভূমিকা রাখলেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর কার্যকর চাপ রাখার কৌশল নিতে চাচ্ছে। তবে ভারত বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তারা এ পর্যায়ে তেমন কঠোর না হয়ে পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থাকতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ, প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার সুকঠিন কাজটি করে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মানুষের কাছে তাদের ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। সংখ্যার দিক দিয়েও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আরও কয়েক হাজার শান্তিরক্ষী নেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জাতিসংঘ অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে জানিয়েছে কয়েক মাস আগে। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের অপেক্ষায় রয়েছে। সেখানে হঠাৎ ভিন্নতর সুর-বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ফিরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট সব মহলকেই বিস্মিত, হতাশ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে অর্থনৈতিকভাবে অধিকতর কঠিন অবস্থায় ফেলতে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন শুল্ক সুবিধা প্রত্যাহার বা অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস করা, গার্মেন্টসামগ্রী রফতানি বন্ধ করা ও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন পণ্য রফতানি ও বাংলাদেশ থেকে আমদানি বন্ধ করে দিতে পারে। মার্কিন কঠোর সব পদক্ষেপ সরকারকে শুধু বিব্রতই নয়, অর্থনৈতিকভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলবে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ বিশেষ গুরুত্ব পায়। আঞ্চলিক বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশবিরোধী অবস্থানের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেনি ভারত। তবে বাংলাদেশকে চাপে রেখে নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে তারা দ্বিমত করেনি। এ পর্যায়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিপক্ষে তাদের অবস্থানের কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। দুই দেশের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠকেও ভারতের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থানের জোর তাগিদ দেওয়া হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ভারতের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলার বিষয়ও ভারতের দিক থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয় বলে কূটনৈতিক সূত্র জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের মূল্যায়ন ও মনোভাবকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। বিএনপির লন্ডনে অবস্থানরত শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র সরবরাহসহ তাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি ন্যূনতম হুমকি বা হুমকিস্বরূপ কোনো কার্যকলাপ বাংলাদেশ থেকে কোনো মহল কর্তৃক পরিচালনার সুযোগ না দেওয়ার পূর্ণ আশ্বাস দেওয়া হয়। ভারতের সঙ্গে উন্নত সম্পর্ক গড়ে তুলতে যা কিছু করা প্রয়োজন, বিএনপির দিক থেকে তা করার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিএনপি নেতার কথায় আশ্বস্ত হতে পারেনি।
এশিয়ায় ভারতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চীনের বিপক্ষে আঞ্চলিকভাবে সামরিক শক্তি হিসেবে ভারতকে প্রতিষ্ঠা করতে সব রকম সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় এবং বিভিন্ন স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তার পাশে চায়। এমনই অবস্থায় বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে। তবে বাংলাদেশে মধ্যরাতে ব্যালট বাক্স ভরা, ভোট ডাকাতি ও জালিয়াতির নির্বাচন বন্ধ করার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অবস্থান অভিন্ন। এ অবস্থায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে প্রচণ্ড চাপ থেকেই যাবে। প্রশ্নসাপেক্ষ নির্বাচন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। প্রকাশ্যেই তারা সে নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকারকে প্রত্যাখ্যান করবে।
সম্ভাব্য বিপজ্জনক অবস্থা, মারাত্মক সব নিষেধাজ্ঞার বিষয় আঁচ করতে পেরে সরকার আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ও তার সহযোগীদের আনার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি না এলেও ব্যাপক সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে সরকার।
সরকারি মহল বিএনপির বিপক্ষে শান্তিরক্ষী বাহিনী-বিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগ এনেছে। সংশ্লিষ্ট শক্তিগুলো ও দেশবাসীর মধ্যে তীব্র বৈরী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে বিএনপির ক্ষতি করাই এর উদ্দেশ্য। অবশ্য বিএনপির এতে প্রবল আপত্তি রয়েছে। জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোনো কার্যক্রমের কথা তারা ভাবেন না বলে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করেন। অন্যদিকে তারেক রহমানের সর্বাধিক বিশ্বস্ত বলে বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রকাশ্যে এ কথাও বলেছেন, এই সরকারের পতন ঘটানোর এক দফা বাস্তবায়নে তারা যেকোনো পথ বেছে নেবেন।

কমেন্ট বক্স