Thikana News
২৪ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
অঘটনের ষোলো কলা পূর্ণ

বিশ্ব বাঁকের পিক আওয়ারে বাংলাদেশ

বিশ্ব বাঁকের পিক আওয়ারে বাংলাদেশ গত ১১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়াকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন
 আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর ২০ ঘণ্টা প্লেন জার্নি করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত হয়ে উজরা জেয়া-ডোনাল্ড লুরা ঢাকায় আসার আগেই ঘটে গেছে বড় রকমের অঘটন। দেশের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ফাঁস হয়ে গেছে কয়েক লাখ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য। নিজেরা জানতেও পারল না। অন্য দেশ থেকে সতর্ক করার চেষ্টা হলেও সাড়া দেয়নি সরকারের বিভিন্ন অফিস। শেষ পর্যন্ত ঘটনার পর তথ্যটি নিশ্চিত হতে  হলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।
অনলাইন টেকক্রাঞ্চ সূত্রের বরাতে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত সব তথ্য ফাঁস হয়েছে সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে। ফাঁস করা তথ্যের মধ্যে আছে পূর্ণাঙ্গ নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের আইডি নম্বর। চোরের হাতে চলে যাওয়া এসব তথ্য দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, লেনদেন, কার্ড, ইমেইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই ঘটনায় নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বাড়তে পারে বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ। এই তথ্য ফাঁসের কারণে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়েই ঝুঁকিতে পড়বে, তথ্যপ্রযুক্তির ভাষায় যাকে বলে ‘আইডেন্টিটি থেফট’ বা পরিচয় চুরি হওয়া। এর সাইড ইফেক্ট বুঝতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
নির্বাচনের আগে এমন তথ্য চুরি নানান কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। তার ওপর নির্বাচন কমিশনের ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা বিসর্জন হয়ে গেছে। কোনো অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচনের ফলাফল বাতিলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশÑআরপিও সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা খর্ব করার আইন পাস সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিকূলে গেল কি না তা ভাবনার বিষয়। নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা হ্রাস করা সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ঝুঁকিতে ফেলল কি না এ প্রশ্নও ঘুরছে।
যেখানে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশিদের যাতায়াত, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নানা নসিহত; সেখানে এ ধরনের ঘটনা ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। খেলোয়াড়ও বেশি হয়ে যাচ্ছে। যে যার মতো পেয়ে বসেছে বাংলাদেশকে। চেপে ধরার বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। টপ মোস্ট সুপারপাওয়ার বিধায় যুক্তরাষ্ট্র বেশি চাপে। সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ। এর বিপরীতে চীন-রাশিয়া কয়েক দিন হালকা-ঝাঁপসা থাকলেও সম্প্রতি বেশ কোমর বেঁধে নেমেছে। প্রতিবেশী ভারত বরাবরই কৌশলী। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ নীতি নিয়ে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ বর্তমান এ বিশ্ব স্নায়ুতাপে ভুগছে। দৃশ্যত গোলমালটা নির্বাচন নিয়ে। সঙ্গে মানবাধিকারসহ আরও কিছু। ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসভবনে এক ডজন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা চা-চক্র করেন। আমাদের রাজনীতিকেরা সেখানে দাওয়াতে ধন্য। যুক্তরাষ্ট্রের হাইপ্রোফাইল প্রতিনিধিরাও আছেন ঢাকায়।
এ রকম সময়ে চটেছে রাশিয়া। বাংলাদেশে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপীয় রাজনীতিবিদদের উদ্বেগ প্রকাশকে নব ঔপনিবেশিকতা এবং একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা বলে মনে করছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলটি আসার আগে, ৬ জুলাই এক টুইটে এ তথ্য জানায় রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। টুইটে বলা হয়, “আমরা লক্ষ করছি, কিছু ইউরোপীয় এবং আমেরিকান রাজনীতিবিদ বাংলাদেশে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এটি হলো নব ঔপনিবেশিকতা এবং একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্পষ্ট হস্তক্ষেপের চেষ্টা।” বছরখানেক আগেও রাশিয়া এ রকম একটা প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল। বরাবর প্রতিক্রিয়ায় সাবধানী এবং শব্দ-মিতব্যয়ী চীনও ইদানীং বেশ সরব। র‌্যাব ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানকে সমর্থন করে চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর নিন্দা জানিয়েছে। সার্বিক অবস্থা যে জটিল রূপ নিচ্ছে, তার সমাধান শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের হাতে থাকবে কি না সংশয় দেখা দিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন করেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রতিবেদনটির ভাষা বেশ তীব্র। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভিতে ইংরেজি ভাষার আন্তর্জাতিক এই চ্যানেলটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘ইউএস মেডেলিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদনের শুরুতেই উপস্থাপক বলেন, ‘তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে নিজের স্বার্থে বিশ্বের দেশে দেশে সরকার পরিবর্তনের ইতিহাস রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, কিউবা, হাওয়াইসহ বেশ কিছু ক্যারিবীয় দেশের সরকার উৎখাতের ইতিহাস রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এ ক্ষেত্রে দেশটি তার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সহায়তা নেয়। অন্য দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এসব হস্তক্ষেপের নেপথ্যে বিভিন্ন বিষয় কাজ করে। দেশটি বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানবাধিকার রক্ষার নামে এসব করে থাকে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে দাবি করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটন নিজ স্বার্থে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত ও এগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে মূল্যবান সম্পদ, বাণিজ্য রুট, কৌশলগত অবস্থানকে ব্যবহার করতে চায়। দেশি-বিদেশি নানা পক্ষে বাংলাদেশকে ঘিরে চলমান রাজনীতি-কূটনীতি দেশটিকে কুরুক্ষেত্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সাদা চোখেই স্পষ্ট, যুদ্ধটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষের শক্তি আর বিপক্ষের শক্তির মধ্যে। রুশ-মার্কিন-ইউক্রেন-চীন-ভারত নানা ভুজে গুরুত্বপূর্ণ শরিক করে ফেলা হচ্ছে বাংলাদেশকে। সেই শরিকানাতেই সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে উজরা জেয়া বা ডোনাল্ড লুদের পদচারণ। তারা দুজনই তুখোড় পেশাদার কূটনীতিক। ফরেন সার্ভিসে একজনের ক্যারিয়ার ২৭ বছরের, আরেকজনের ৩০। রাজনীতিতেও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভিন্ন সমাধান, গণতন্ত্র, মানবিক সহায়তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা মেরামতে ভারত সফর শেষে মার্কিন এই দুই ‘বাজপাখি’ কূটনীতিক এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, শ্রম ইস্যু, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানব পাচার মোকাবিলাসহ অভিন্ন মানবিক উদ্বেগ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে করবেন আলোচনা। এর বিপরীতে চীন-রাশিয়ার এমন রুদ্রমূর্তি। ভারতের চানক্য নীতি। যোগ হয়েছে ইরানও। লাস্ট রাউন্ডে এসে বাংলাদেশ এখন চূড়ান্ত পরিণতিতে অপেক্ষমাণ। ঈদের পর থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতার পাশাপাশি ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর উঠেপড়ে লাগার মাঝে ভারত, চীন, রাশিয়া এমনকি ইরানের সরব হয়ে ওঠার মাঝে ভিন্ন সংকেত মিলছে।
 

কমেন্ট বক্স