Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

ঈদের জামাত এবং মুসল্লিদের ক্ষোভ

ঈদের জামাত এবং মুসল্লিদের ক্ষোভ
চলে গেলো বহুল প্রতিক্ষিত ঈদুল ফিতর। গত ১০ এপ্রিল যথাযোগ্য ধর্মীয় গাম্ভীর্য ও মর্যাদায় পালিত হয় সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে। বরাবরের মতো প্রবাসীরা অংশ নেন ঈদ জামাতগুলোতে। এসব জামাতে প্রচুর জনসমাগম ঘটে। তবে ঈদ জামাত নিয়ে আয়োজকদের ভূমিকায় অনেকের মনে ক্ষোভেরও সঞ্চার হয়।
নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের তত্ত্বাবধানে থমাস অ্যাডিসিন স্কুল মাঠে। এই জামাত নিয়ে অংশগ্রহণকারী অনেক মুসল্লির মাঝেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। নির্ধারিত সময়ে নামাজ শুরু না হওয়া, বক্তৃতার মঞ্চ বানানো, সামনের সারিতে বসা নিয়ে বাক-বিতন্ডায় জড়ানো, বিশেষ করে নামাজের পূর্বের ঘটনাবলী নিয়ে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। 
চলতি ঈদ জামাতের স্থান নির্ধারণে মসজিদ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও কমিউনিটিতে চলে নানা আলোচনা। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পরিচালক ইমাম শামসে আলী খুতবা শেষে মোনাজাতের সুযোগ, প্রধান ইমাম মৌলানা মির্জা আবু জাফর বেগকে না দিয়ে নিজেই সম্পন্ন করায় প্রায় অর্ধেক মুসল্লি উঠে পড়েন। পরবর্তীতে মৌলানা জাফর বেগ আবার মোনাজাত পরিচালনা করেন।
নিউইয়র্কের অন্য একটি মসজিদের ঈদ জামাতে অংশ নেন নিউইয়র্কের ব্যবসায়ী, লেখক ও সাংবাদিক হাবিব রহমান। কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যা বেশিরভাগ মসজিদের ঈদ জামাত আয়োজনে এই চিত্র ফুটে ওঠে।
হাবিব রহমান তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘আমি নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে যে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করি, তাদের উদ্যোগে খোলামাঠে নামাজের ঘোষিত সময় ছিলো প্রথম জামাত সকাল ৮টা এবং দ্বিতীয় জামাত ৮.৪৫ মিনিটে। প্রতিবছরের মতই প্রথম জামাতে অংশগ্রহণের জন্য মাঠে হাজির হই।
ইমাম সাহেব তার ওয়াজ থামালেন ৮.০১ মিনিটে। ভাবলাম এখন জামাত শুরু হবে। কিন্তু না, তারপর শুরু হলো মসজিদ কমিটি নেতৃবৃন্দের বক্তৃতাপর্ব। উপদেষ্টা, সভাপতি, কোষাধ্যক্ষসহ অন্যান্যরা।
সভাপতি বক্তব্য রাখলেন টানা ১০ মিনিট। তারপর চাঁদা তোলা পর্ব। পৃথক পৃথকভাবে বাক্স নিয়ে আসছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা। ইমাম, মুয়াজ্জিন, মসজিদ, ফিতরার বক্স ইত্যাদি...।
তারপরের সিরিয়াল- খাম। যারা কমিটমেন্ট করবেন ১ হাজার ডলার দিয়ে নামাজের একটা মাসাল্লা কিনবেন, তারা যেন তাদের নাম ঠিকানা লিখে দেন।
তারপর লাইফ মেম্বার বানানো।
নামাজ শুরু হলো ৮.৩০ মিনিটে। নামাজ, খুৎবা, দোয়া যখন শেষ হলো, তখন ৮টা বেজে ৫০ মিনিট।’
হাবিব রহমান আরো লিখেছেন- ‘দিনটি ছিলো বুধবার। ওয়ার্কিং ডে। কেউ কেউ নামাজ সেরে কাজে যাবেন। উসখুস ও বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন তারা। আমার পাশ থেকে দু’জন নামাজ না পরেই ট্রেন স্টেশনের দিকে ছুটলেন কাজ বাঁচানোর তাগিদে।’
তিনি প্রশ্ন রাখেন- ‘আপনারা ওয়াজ করেন, বক্তৃতা দেন, চাঁদা তুলেন সমস্যা নেই। কিন্তু তা অবশ্যই করতে হবে আপনাদের ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে। কারণ ঈদের দিনটা নিয়ে প্রত্যকেরই নিজস্ব কিছু প্ল্যান প্রোগ্রাম থাকে। কিন্তু ৭.৩০ মিনিটে ইমাম সাহেব তার ওয়াজ শেষ করলে এরপর আয়োজকদের বক্তৃতা, চাঁদা আদায় পর্ব শেষ করে চাইলে কী আপনাদের ঘোষিত ৮টায় নামাজ শুরু করতে পারতেন না! প্রথম জামাত আদায়ে বিলম্বের জন্য দ্বিতীয় জামাতও বিলম্বিত হলো, এটা কি দৃষ্টিকটু নয়? বিরক্তি উদ্রেগকারক নয়? এই যে সময় নিয়ে সাধারণ মুসুল্লিদের আপনারা জিম্মি করেন, নিয়মিত অনিয়ম করেন, তাদের বিরক্তির কারণ ঘটান, তা কি কখনো আপনাদের পীড়া দেয়? সময়ের এই অনিয়ম নিয়ে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কিছু ভাবে কিনা- তা কি কখনো আপনারা ভেবে দেখেছেন?
খোলা মাঠে যখন নামাজ হয়, তখন অনেক সময় ঠান্ডা হাওয়া বা রৌদ্রতাপ থাকে। এটা মুসুল্লিদের কষ্টের কারণ হয় কিনা- তা আপনাদের আগামীদিনে ভাবতে হবে। ঈদের নামাজ পরার জন্য অনেক অসুস্থ বা ডায়াবেটিক রোগীও আসেন। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করলে তাদের অজু ভঙ্গের আশংকা থাকে, ব্যাপারটা আপনাদের অনুধাবন করতে হবে। অনেক মুসল্লিকেই ব্যাপারটা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখেছি।’
হাবিব রহমান আরো লিখেন- ‘আয়োজকদের সময়জ্ঞান নিয়ে এই উদাসীনতা বিগত অনেক বছর থেকেই দেখে আসছি। তারপরও কোন পরিবর্তন নেই। পুরাতন কমিটি যায়। নতুন কমিটি আসে। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, সময়জ্ঞানের কোন পরিবর্তন হয় না। নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের একরাশ বিরক্তি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়।’

কমেন্ট বক্স