Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

এলাকায় এলাকায় মসজিদ হওয়ায় ডোনার ভাগ হচ্ছে

আয় বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে মসজিদ কমিটি
এলাকায় এলাকায় মসজিদ হওয়ায় ডোনার ভাগ হচ্ছে

দিন যত যাচ্ছে নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন এলাকায় মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে মসজিদ বাড়লেও সেভাবে ডোনার বাড়ছে না। ডোনার সংকট চলছে অনেক মসজিদে। এ কারণে চলতি বছর অনেক মসজিদের আয় কমেছে। এতে মসজিদগুলো ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও অর্থ তুলতে পারছে না। তাই প্রয়োজনীয় অর্থ তোলার জন্য তাদের বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে বলে জানায় একাধিক সূত্র। সূত্র জানায়, প্রতিবছর খ্যাতনামা একটি মসজিদের অনুষ্ঠানে দেড় লাখ ডলার থেকে দুই লাখ ডলার ডোনেশন আসে। এবার সেই মসজিদে ডোনেশনের পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত বছর পর্যন্ত যারা নিয়মিত ডোনেশন দিতেন, এবার তাদের অনেকেই ডোনেশন দেননি। কারণ তারা আগে দূরদূরান্ত থেকে হলেও ওই মসজিদে আসতেন এবং ডোনেশন দিতেন। কিন্তু এখন তাদের এলাকায় বিভিন্ন মসজিদ হয়েছে। একাধিক মসজিদ হওয়ার কারণে এখন আর তারা পুরোনো জায়গায় আসেন না। তারা এলাকার মসজিদেই যান এবং সেখানেই ডোনেশন দেন। ফলে আগে যে মসজিদটি তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার ডলার অনুদান পেত, এখন সেই অনুদান পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সূত্র আরও জানায়, নিউহাইড পার্ক এলাকায় ডাক্তারদের একটি বড় কমিউনিটি আছে। তারা আগে প্রতিবছর একটি বড় অঙ্কের অ্যামাউন্ট দিতেন খ্যাতনামা মসজিদটিতে। কিন্তু এবার তাদের এলাকায় একাধিক মসজিদ হওয়ায় তারা আর ডোনেশন দিচ্ছেন না। ফলে আগে যেখানে প্রতিটি মসজিদ পবিত্র রমজান মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ ডোনেশন হিসেবে তুলতে পারত, এবার তেমনটা পারেনি।
নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড় একটি মসজিদের পরিচালনা কমিটির এক নেতা জানান, প্রতিবছর তারা দেড় থেকে দুই লাখ ডলার ডোনেশন তোলেন। এই ডোনেশন থেকে মসজিদ পরিচালনাসহ যাবতীয় ব্যয় বহন করা হতো। এবার তা হয়নি। চলতি বছর তারা কেবল ইফতার বাবদ খরচ করেছেন ৮৯ হাজার ডলার। খরচের পুরো অর্থ তারা ইফতার খাতের ডোনেশন থেকে ওঠাতে পারেননি। এমনকি পানি ও খেজুরের খরচই হয়ে গেছে ৩৫ হাজার ডলারের মতো। তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছর ইফতারির ব্যবস্থা করে থকি। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ লাগে। কিন্তু এবার আমরা সেই অর্থ ওঠাতে পারিনি। কিন্তু আমরা তো ইফতারি প্রদান বন্ধ রাখতে পারি না।
তিনি বলেন, কেবল ইফতার খাতে নয়, মসজিদের সংস্কার খাতেও ডোনেশন কমেছে। এবার যে পরিমাণ অর্থ ডোনেশন প্রয়োজন, তা আমরা পাইনি। আগামী দিনে আমাদেরকে কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হতে পারে। নিউইয়র্কে এখন যেখানে-সেখানে মসজিদ গড়ে উঠছে। একটি বাড়ি কিনে কিংবা বাড়ি ভাড়া নিয়েই মসজিদ তৈরি করে ফেলছে অনেকে। মসজিদের জন্য একজন ভালো ইমাম দরকার হলেও তাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আবার ইয়ুথদের জন্য মসজিদে প্রোগ্রাম থাকা দরকার, সেটিও রাখা হচ্ছে না। আসলে আমরা যখন মসজিদ করেছিলাম, তখন একটি মসজিদেও জন্য কী কী প্রয়োজন, তা বিবেচনা করেই করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেটি অনেক ক্ষেত্রেই হচ্ছে না। মসজিদ বাড়ার কারণে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও ডোনার বাড়ছে না। অনেক মসজিদের পরিচালনা পরিষদেও দ্বন্দ্ব দেখা যায়। এতে মুসলমানদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, লং আইল্যান্ডে অনেক ডোনার বাস করেন। তারাও আগের মতো আসেন না। জ্যামাইকায় আগে অনেক ডোনার ছিল। এসব ডোনার না আসায় আমাদের আয় কমেছে। আমাদের এমনিতে আড়াই হাজারের মতো রয়েছেন লাইফ মেম্বার। এর বাইরেও রয়েছেন সাধারণ মেম্বার। তাদের অনেকে মাঝে মাঝে আসেন। ডোনারের সংখ্যাও শতাধিক, যারা বড় বড় অঙ্ক ডোনেশন দেন। কিন্তু এবারের মতো আর কোনো বার হয়নি। তা ছাড়া এবার যেটি সমস্যা হয়েছে, তা হলো বেশির ভাগ দিন ইফতারের সময় বৃষ্টি ছিল। এ কারণে অনেক মানুষই মসজিদে আসেননি। তারা বাসায়ই ইফতার করেছেন। সেই সঙ্গে তারা ডোনেশনের অর্থও দিতে দূরে যেতে চাননি। ফলে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।
তিনি জানান, মসজিদের অর্থসংকট দূর করতে ইনকাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য তারা বিকল্প উপায় খুঁজছেন। এরই অংশ হিসেবে তারা বড় বড় ডোনারদের মধ্যে যারা বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতে নিয়ে বসে আছেন বা ব্যাংকে রেখেছেন, তাদের অর্থ মসজিদের এনডোমেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে নিতে চান। ওই ডোনারদের অর্থ তারা বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগ থেকে যে পরিমাণ অর্থ আসবে, সেটি তারা মসজিদের খাতে ব্যয়ের জন্য নেবেন।
এটি কোন খাতে বিনিয়োগ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি বিনিয়োগ করা হবে মূলত রিয়েল এস্টেট খাতে। এই খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন বাড়ি কেনা হবে। বাড়ি কেনার পর ভাড়া থেকে যে আয় হবে, সেটি মসজিদের খরচে ব্যবহার করা হবে। ডোনাররাও সেখান থেকে কিছু অর্থ পাবেন। আর তাদের মূল অর্থ সম্পদ হিসেবেই থাকবে।
তিনি বলেন, এখন থেকেই যদি আমরা এনডোমেন্টের মাধ্যমে অর্থ জোগাড় না করি, তাহলে ভবিষ্যতে চরম বিপদ হবে। পাশাপাশি আর কোন কোন খাতে আয় বাড়ানো যায়, সেসব বিষয়েও আমরা চিন্তা করছি।

কমেন্ট বক্স