Thikana News
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

মধ্যবিত্তের টানাপোড়েনের ঈদ

মধ্যবিত্তের টানাপোড়েনের ঈদ
পবিত্র রমজানের রোজার শেষে আসে খুশীর ঈদ। আর ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদে চাই নতুন জামাকাপড়। সবাইকে নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার মজাই আলাদা। কিন্তু দেশ ও প্রবাসে মধ্যবিত্তের ঈদ মানেই টানাপোড়েন। বাড়ি ভাড়া, সন্তানের লেখাপড়া ও মাসের খরচ চালাতে যেখানে নাভিশ্বাস উঠছে, সেখানে ঈদে বাড়তি কেনাকাটা এখন দুঃস্বপ্নের মত অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে। তাদের এখন নুন (লবণ) আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। 
শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ এপ্রিল বুধবার এবং বাংলাদেশে ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসাবে ঈদের বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের ‘হাব’ নিউইয়র্কের ঈদের বাজার এখনো জমেনি। মধ্যবিত্তরা যেখানে ঈদের কেনাকাটা করেন, সেসব এলাকার স্টোরগুলোতে তেমন কোনো ভিড় নেই। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো স্টোরে আসছেন। তারা জামাকাপড় দেখছেন, কিন্তু কিনছেন না। অন্যদিকে স্টোরের বাইরে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে। ফুটপাতের দোকানগুলোতে গুণগত মানের পণ্য তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। 
নিউইয়র্কের ওজোনপার্কের বাসিন্দা আতাউর রহমান কায়সার সপরিবারে জ্যাকসন হাইটসে এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। ৭৩ ও ৭৪ স্ট্রিটে বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরেছেন। কিন্তু দাম বেশী বলে পছন্দের জামাকাপড় এখনো কিনতে পারেননি। তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য। ঈদে সবার পছন্দের কেনাকাটা করতে গেলে কমপক্ষে এক হাজার ডলার প্রয়োজন। কিন্তু এই মুহূর্তে এক হাজার ডলার খরচ করা সম্ভব নয়। 
তিনি বলেন, মাসিক আয় বাসা ভাড়ায় চলে যায়। প্রতি বছর ট্যাক্স ফাইল করে যে অর্থ রিটার্ন পাই তা দিয়ে সারা বছর খরচের সমন্বয় করেন। টানাপোড়েন চললেও পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটুক, এটাই চাই। 
এস্টোরিয়ার ৩৬ অ্যাভিনিউর বাসিন্দা আসিফ লস্কর বলেন, ভেবেছিলাম সপরিবারে দেশে গিয়ে ঈদ করবো। কিন্তু এয়ার টিকেটের যে দাম তাতে আর সাহস করে উঠতে পারলাম না। তিনি জানান, খরচ কমাতে স্ত্রীর জন্য দেশ থেকে শাড়ি এনেছেন। কিন্তু সন্তানরা এদেশের দোকান থেকে পছন্দের জামাকাপড় কিনতে চান। তাদের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে নিউইয়র্ক শহর। নিউইয়র্ক রাজ্যে নানান সুযোগ-সুবিধার কারণে অভিবাসীদের পছন্দ নিউইয়র্ক সিটি। বাংলাদেশিদের গোড়াপত্তন সত্তরের দশকে। এখন এই শহরে বাস করেন প্রায় এক মিলিয়ন বাংলাদেশি। তাদের বেশীরভাগই মধ্যবিত্ত। কঠোর পরিশ্রম করে তারা জীবনযাত্রার ব্যয় মেটান। কিন্তু করোনা মহামারীর পর এই নিউইয়র্ক সিটি ছেড়ে গেছেন বহু বাংলাদেশি পরিবার, যাদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত। 
একসময় কুইন্সের বাসিন্দা সুলতান আহমেদ দেড় বছর আগে নিউইয়র্কের আলবেনিতে চলে গেছেন। যাবার পর এই প্রথম কুইন্সে এসেছেন বেড়াতে এবং ঈদের কেনাকাটা করতে। জ্যাকসন হাইটসে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সুলতান আহমেদের। 
আলবেনি কেন গেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুইন্সে চেষ্টা করেও একটা বাড়ির মালিক হতে পারেননি। জিনিপত্রের দাম আকাশচুম্বি। গণপরিবহন ভাড়া বেড়েছে। এমনকী ব্যক্তিগত গাড়ির ইন্সুরেন্স বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এসব কারণে সিটি ছেড়েছিলাম। তিনি বলেন, কষ্ট করে হলেও আলবেনিতে একটি বাড়ি কিনেছি। তবে বাচ্চারা আলবেনির বাড়িতে থাকতে চান না। উপায়ও নেই। তাদের এখন মানিয়ে চলতে হচ্ছে। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ঈদের কেনাকাটা করে আবার আলবেনি ফিরবো, জানালেন তিনি। 
ঢাকা অফিসের মাধ্যমে পাওয়া খবরে জানা গেছে, দেশে আয় যেভাবে বাড়ছে, তার তুলনায় ব্যয় বাড়ছে তীব্রগতিতে। নিম্নবিত্তের মানুষ সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পেলেও বাড়তি ব্যয়ের চাপে পিষ্ট মধ্যবিত্ত শ্রেণি। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিত্যপণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। 
শাকসবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীন। একইভাবে বাড়ি ভাড়া, জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ও চিকিৎসা ব্যয়ও বেড়েছে। কিন্তু ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আয় বাড়ছে না। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান কমছে। অনেককে সঞ্চয় ভেঙে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম কমার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। 
সরকারি-বেসরকারি সংস্থার জরিপ ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে দেখা গেছে, এক বছরে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বিপরীতে আয় বেড়েছে মাত্র ১০ থেকে ১৬ শতাংশ। ফলে তাদের আয় ও ব্যয়ের মধ্যকার ব্যবধান বেড়েছে গড়ে ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ। 
চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস, নিত্যপণ্য, বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ব্যয় বেশি মাত্রায় বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার বাড়তি ব্যয়। এসব ব্যয় মেটাতে কমে যাচ্ছে সঞ্চয়। নিম্ন আয়ের মানুষ বড় কোনো অসুখ না হলে চিকিৎসা নিচ্ছে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সামনে আরও দুর্দিন আসছে। কারণ প্রতিবার বাজেটের পর বিভিন্ন জিনিসের দাম এমনিতেই বেড়ে যায়। 
অর্থনীবিদরা বলছেন, দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এতে শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, শ্রমিকদের মজুরি হার বাড়ছে। কিন্তু প্রকৃত মজুরি কতটা বাড়ছে তা বিবেচনার বিষয়। অর্থাৎ যেহারে আয় বেড়েছে বাজারে জিনিসপত্রের দাম তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু এর সুফল সবার মধ্যে যতটা পৌঁছানোর কথা ততটা পৌঁছানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দারিদ্র্য বিমোচন, মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) যে লক্ষ্য সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন, সেটি অর্জন সম্ভব হবে কিনা সেক্ষেত্রে একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায়।
 

কমেন্ট বক্স