দালাল চক্রের সদস্যরা আগ্রহী বাংলাদেশি যুবকদের লিবিয়ায় উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায়। পরে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিয়ে লিবিয়ায় তুলে দেওয়া হয় সংঘবদ্ধ মাফিয়াদের হাতে। এরপর স্বজনদের কাছ থেকে আরও টাকা আদায়ের জন্য চলে নির্যাতন। নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা। পরিবার মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে ওই যুবকদের কারও কারও প্রাণ হারাতে হয় মাফিয়াদের হাতে। এমনই ঘটনার শিকার চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যম গহিরা এলাকার চার যুবক।
তারা হলেন রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যম গহিরা বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো. ওয়াসিম (২২), একই এলাকার মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন (১৯), আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম (১৯) ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন (২০)।
তারা এখন লিবিয়ায় দালালদের হাতে বন্দী। দালালকে লাখ লাখ টাকা দিয়ে পরিবারগুলো এখন সর্বস্বান্ত। বন্দীদের পরিবারের কাছ থেকে আরও মুক্তিপণ দাবি করে চালানো নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ পাঠানো হচ্ছে স্বজনদের কাছে।
এসব ঘটনায় বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে অপহৃতদের স্বজনেরা তাদের সন্তানদের ফিরে আনতে সহযোগিতা চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল আহমেদের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
অপহৃতদের স্বজনেরা বুধবার দুপুরে আনোয়ারা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের জানান, রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের পুত্র জহিরুল ইসলাম গত দুই মাস আগে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে চার যুবককে লিবিয়ায় নিয়ে যান। তারা হলেন ওয়াসিম, বোরহান, জাবেদুর রহিম ও নাঈম উদ্দিন। জনপ্রতি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা করে জহিরুল ইসলামকে ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বের হন যুবকেরা।
জহিরুল তাদেরকে ট্যুরিস্ট ভিসায় প্রথমে দুবাই নিয়ে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার বাসিন্দা মো. মিজান নামের এক লোকের হাতে তুলে দেন। মিজান তিন দিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিয়ে নেন। সাত দিন পর দুবাই থেকে মিসর হয়ে লিবিয়া নিয়ে গিয়ে মিজান অন্য দালালের হাতে বিক্রি করে দেন ওই চারজনকে। লিবিয়ায় তাদের মাসখানেক কিছু কাজ দেওয়ার পর সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ থেকে বন্দী করে রাখে। ২৬ মার্চ পরিবার ও স্বজনদের কাছে কয়েকটি নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ও অডিও বার্তা পাঠায় দালাল চক্রের সদস্যরা। ভিডিও বার্তায় জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে এবং এসব টাকা প্রদানের জন্য ইসলামী ব্যাংকের চকরিয়া শাখার একটি হিসাব নম্বরও দেয় তারা।
মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হবে বন্দী চারজনকে। এ জন্য সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। বুধবার বিকেল তিনটার মধ্যে যত পারে তত টাকা দিতেও বলা হয়। টাকা না দিলে একজন-একজন করে লাশ পাঠাবে বলে অপহরণকারীরা স্বজনদের জানিয়েছে।
অপহৃত ওয়াসিমের মামা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘বুধবার তিনটার মধ্যে চারজনের জন্য চার লাখ টাকা পাঠাতে বলেছে। বিকেল থেকে মুঠোফোন ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন করছে টাকার জন্য। তাদের নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজও পাঠাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
জাবেদুর রহিমের বাবা আবদুর রহিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার যা ছিল সব বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছি। সেখানে ছেলে প্রতারণার শিকার হয়েছে। এখন ১০ লাখ টাকা দিলে ছেলেকে ফেরত দেবে বলছে অপরণকারীরা। এই মুহূর্তে এত টাকা কই পাব আমি।’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন বলেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঠিকানা/এনআই