যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গত ২৮ জুন বুধবার নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হয়েছে। বিভিন্ন মসজিদের
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঈদের জামাতে অংশ নেন। নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ইস্ট এলমহার্স্ট জামে মসজিদ : এই মসজিদের উদ্যোগে পিএস ১২৭ এর মাঠে সকাল সাড়ে আটটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিপুল প্রবাসী বাংলাদেশি ঈদের জামাতে অংশ নেন।
আমেরিকান মুসলিম সেন্টার (এএমসি) : আমেরিকান মুসলিম সেন্টারের (এএমসি) উদ্যোগে পবিত্র ঈদুল আজহার পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদ ভবনে যথাক্রমে সকাল ৬টা, ৭টা ও ৮টায়। এরপর চতুর্থ ও পঞ্চম জামাত অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকার রুফস কিং পার্কে যথাক্রমে সকাল ৯টা এবং সকাল ১০টায়।
মসজিদ মিশন : জ্যামাইকার ‘হাজী ক্যাম্প মসজিদ’ নামে পরিচিত মসজিদ মিশনে ঈদুল আজহার চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল সাড়ে ৬টায়, সকাল সাড়ে ৭টায়, সকাল সাড়ে ৮টায় ও সকাল সাড়ে ৯টায়। জামাতগুলোতে ইমামতি করেন যথাক্রমে হাফেজ রফিকুল ইসলাম, হাফেজ তানভিরুল ইসলাম, মওলানা মঞ্জুরুল করীম ও হাফেজ মারওয়ান।
বাংলাবাজার জামে মসজিদ : ব্রঙ্কসে বাংলাবাজার জামে মসজিদের উদ্যোগে খোলা মাঠে সকাল সাড়ে আটটায় পবিত্র ঈদুল আজহার বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদের নিকটবর্তী খোলা মাঠে (পিএস ১০৬, ২১২০ সেইন্ট রেমন্ডস অ্যাভিনিউ, ব্রঙ্কস, নিউইয়র্ক-১০৪৬২)। কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ বিপুলসংখ্যক মুসল্লি এই ঈদ জামাতে অংশ নেন। ঈদ জামাতে ইমামতি করেন বাংলাবাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ইয়াহইয়া। মসজিদের সভাপতি ডা. আবদুস সবুরের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লালন আহমেদের পরিচালনায় জামাতের পূর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর ন্যাথালিয়া ফার্নান্দেজ এবং উপদেষ্টা মোহাম্মদ এন মজুমদার।
পার্কচেস্টার জামে মসজিদ : এই মসজিদে ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে মহিলাদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবাইর রাশিদ। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন মৌলভী নূরুল ইসলাম।
নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার ও জামে মসজিদ : এই মসজিদের উদ্যোগে সকাল নয়টায় মসজিদের নিকটবর্তী ওভাল পার্কের খোলা মাঠে বিশাল ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিপুলসংখ্যক মুসল্লি এই ঈদ জামাতে অংশ নেন। নামাজে ইমামতি এবং ঈদুল আজহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য দেন মসজিদের খতিব, আইএসএনবিআইসির ডাইরেক্টর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামিক স্কলার শায়েখ আল্লামা মুহাম্মদ সাইফুল আজম বাবর আল আজহারী। নামাজ শেষে মিলাদ ও মুসলিম বিশ্বসহ সমগ্র মানবতার কল্যাণ কামনায় বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন শায়েখ আল্লামা মুহাম্মদ সাইফুল আজম বাবর আল আজহারী।
মদিনা মসজিদ : ম্যানহাটনের মদিনা মসজিদের উদ্যোগে মসজিদ ভবনে ঈদের দুটি জামাত যথাক্রমে সকাল সাড়ে ৮টায় ও সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়।
আল ফোরকান মসজিদ : ওজনপার্কের আল ফোরকান মসজিদে (৭৭ অ্যান্ড গ্ল্যানেমার অ্যাভিনিউ) ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত হয় সকাল আটটায় আর দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল নয়টায়। মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বদরুল হোসেন খান বলেন, আমরা এবার করোনামুক্ত পরিবেশে ঈদুল আজহা উদ্্যাপন করছি। প্রতিটি জামাতে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মানুষ অংশ নেন।
আল আমান মসজিদ : ওজন পার্কের আল আমান মসজিদে ঈদুল আজহার বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিপুলসংখ্যক মানুষ জামাতে অংশ নেন। এ ছাড়া ওজনপার্কের ফুলতলী জামে মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
বায়তুল জান্নাহ জামে মসজিদ : এই মসজিদ ও কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে ব্রুকলিনের ৫৬৯ মাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউ সিটিতে খোলা রাস্তায় ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। এখানে ঈদের দুটি জামাত হয়। একটি মসজিদের ভেতরে, যারা কোরবানি দেন তাদের জন্য এই জামাতের ব্যবস্থা করা হয়। অন্য জামাতটি হয় খোলা স্থানে। পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ ঈদের নামাজে শরিক হন।
বায়তুল ইসলাম মসজিদ : ব্রঙ্কসে বায়তুল ইসলাম মসজিদ অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত সকাল সাড়ে আটটায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল সাড়ে নয়টায় অনুষ্ঠিত হয়।
রিয়াজুল জান্নাহ ইসলামিক সেন্টার : জ্যামাইকায় রিয়াজুল জান্নাহ ইসলামিক সেন্টার ইনকের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া নিউইয়র্কের জ্যামাইকার ইকনা মসজিদ, ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার, জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টার, সানিসাইড মসজিদ, এস্টোরিয়ার গাউসিয়া মসজিদ, ব্রুকলিনের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারসহ অন্যান্য মসজিদের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
আটলান্টিক সিটি : নিউজার্সির আটলান্টিক সিটির আল হেরা মসজিদে ঈদের জামাতে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি মুসলিমসহ অন্যান্য কমিউনিটির মুসলিমরাও অংশ নেন। ঈদের নামাজ আদায় শেষে খুতবা পাঠ করা হয়। দেশবাসী ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সুখ-সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়। এখানে ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মসজিদ আল হেরার খতিব আবু সুফিয়ান ও হাফেজ নজরুল ইসলাম। এখানে ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে আটলান্টিক সিটির আলবেনি অ্যাভিনিউতে অবস্থিত স্যান্ড ক্যাসেল স্টেডিয়ামে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিপুল আমেরিকান মুসলিম সকালে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য সমবেত হন। পুরুষদের পাশাপাশি নামাজের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা থাকায় বিপুলসংখ্যক নারী এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। ঈদ জামাতে ইমামতি করেন ইমাম কামাল আল সায়েগ। নামাজ শেষে মানবজাতির কল্যাণ কামনার পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। আটলান্টিক সিটির মসজিদ আল তাকওয়া, ইসলামিক সেন্টার অব আটলান্টিক সিটি, গ্যালাওয়ে টাউনশিপের দারুস সালাম একাডেমি, প্লিজেনটভিলের মসজিদ বায়তুল নসরের যৌথ উদ্যোগে এই বিশাল ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
নিউজার্সি রাজ্যের পেটারসনে অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন অব নিউজার্সির জালালাবাদ মসজিদের উদ্যোগে স্থানীয় হিলচাল ফি স্টেডিয়ামে ঈদের জামাত হয় সকাল সাড়ে আটটায়।
মিশিগানে ঈদ জামাত : যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের মতো মিশিগানেও উদ্্যাপিত হলো ঈদুল আজহা। গত ২৮ জুন বুধবার ঈদের জামাতস্থলে দল বেঁধে আসতে দেখা যায় বাংলাদেশি-আমেরিকানদের। সকাল আটটায় বাংলাদেশি-আমেরিকানদের পরিচালনায় ডেট্রয়েট সিটির জেইন ফিল্ডে ঈদের নামাজ শুরু হয়। দৃষ্টিনন্দন এই মাঠে কয়েক হাজার বাংলাদেশি- আমেরিকান, অ্যারাবিয়ান ও আফ্রিকানের উপস্থিতি ছিল।
ঈদের জামাতে কোরবানি দেওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে বয়ান করেন ডেট্রয়েট সিটির বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আহমেদ কাশেম এবং নামাজ ও দোয়া পরিচালনা করেন মসজিদ্দুন নুরের ইমাম মাওলানা আবু সিদ্দীক। খুতবা পরবর্তী দোয়ায় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনসহ দেশ ও বিশ্ব শান্তির মঙ্গল কামনার্থে মোনাজাত করা হয়।
মিশিগানে বাংলাদেশিদের আগমন বহুকাল আগে হলেও তারা সাধারণত বসবাস করতেন ডেট্রয়েট, হ্যামট্রামেক শহরে। কালের পরিক্রমায় বাংলাদেশিদের আগমন বেড়েছে। এখন তারা দুই পরিচিত শহর ছাড়াও ওয়ারেন, ট্রয়, স্টারলিং হাইটস, শেলবি টাউনশিপ, ম্যাকম্ব, ক্যান্টন, এনআরবার শহরেও বসবাস করছেন। গড়ে তুলেছেন অর্ধশতাধিক মসজিদ-মাদ্রাসা। এবার ওয়ারেন সিটির হলমিছ পার্ক, আল ফালাহ, আল ইসলাহ, বায়তুল মামুর, দারুল উলুম মিশিগানসহ অন্যান্য শহরে বাংলাদেশিদের পরিচালনায় ২০টির বেশি মসজিদে কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে এই ঈদুল আজহা থেকে মিশিগানের হ্যামট্রামেক সিটিতে এবারই প্রথম প্রকাশ্যে কোরবানি দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে খুশি সেখানকার মুসলিম জনগোষ্ঠী। এমনকি হ্যামট্রামেক ও ডিয়ারবন সিটিতে মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবের জন্য সিটিতে কর্মরত চাকরিজীবীরা সরকারি ছুটিও পান।
কানেকটিকাট, ম্যারিল্যান্ড, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া, ওহাইও, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়।