শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাঋণ মওকুফের সিদ্ধান্ত আটকে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। গত ৩০ জুন সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিয়েছেন। এই শিক্ষাঋণ মওকুফের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শিক্ষার্থীপ্রতি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার ডলারের ঋণ মওকুফ করতে চেয়েছিলেন বাইডেন। তার এই প্রস্তাবের সঙ্গে চার কোটিরও বেশি নাগরিকের জীবন জড়িত। তবে সুপ্রিম কোর্ট বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বাইডেন প্রশাসনের নেই। গত ৩০ জুন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ৬-৩ ব্যবধানে সংগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই স্থগিতাদেশ দেন।
বাইডেনের নির্বাচনী অঙ্গীকারের অংশ ছিল শিক্ষাঋণের বোঝা কমানো। গত ১৫ বছরে দেশে শিক্ষাঋণের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। ২০০৭ সালে শিক্ষার্থীদের ওপর ঋণের বোঝা ছিল প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার, যা এখন (২০২৩ সালে) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন (১ লাখ ৬০ হাজার কোটি) ডলারে।
গত বছর (২০২২ সাল) যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ ৪৩০ বিলিয়ন ঋণ মওকুফের এক কর্মসূচি হাতে নেয়। ঋণগ্রহণকারী ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী এর দ্বারা উপকৃত হবেন বলে মনে করেছিল বাইডেন প্রশাসন। তবে রিপাবলিকান পার্টির নেতৃত্ব রয়েছে এমন কয়েকটি রাজ্য (নেব্রাস্কা, মিসৌরি, আরকানসা, আইওয়া, ক্যানসাস ও সাউথ ক্যারোলিনা) শিক্ষাঋণ মওকুফের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মামলা করে। বাইডেন অতিমাত্রায় ক্ষমতা ব্যবহার করছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলে অভিযোগ ছিল এই রাজ্য সরকারগুলোর। সুপ্রিম কোর্ট এসব রাজ্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে এসব মামলার ওপর শুনানিতে অংশ নিয়ে বাইডেন প্রশাসন দাবি করে, ২০০৩ সালে প্রণীত হায়ার এডুকেশন রিলিফ অপরচুনিটি ফর স্টুডেন্টস অ্যাক্ট অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষাঋণ কর্তন বা মওকুফের ক্ষমতা রাখে। কোভিডের মতো বিশেষ পরিস্থিতিতে তারা এই পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষ শিক্ষাঋণের জালে জর্জরিত। যেসব শিক্ষার্থীর আর্থিক অবস্থা দুর্বল, তারা শিক্ষাঋণ নেওয়ার সুযোগ পায়। মূলত উচ্চমাধ্যমিকের পরের ধাপের লেখাপড়ার জন্য এই ঋণ নেওয়া হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজনেরই মাথায় এই ঋণ রয়েছে। অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এই ঋণগ্রস্তদের মধ্যে ৭ শতাংশের ঋণ এক লাখ ডলারের ওপরে, আর ১৭ শতাংশের ঋণ ১০ হাজার ডলারের নিচে। ঋণের গড় ১৭ হাজার ডলারের মতো।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কড়া নিন্দা করেছেন জো বাইডেন। এই রায় হতাশাজনক বলে দাবি করেন তিনি। সেই সঙ্গে এতে ঋণগ্রহণকারীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হবে বলেও স্বীকার করে নেন। এর পরই শিক্ষার্থীদের পাশে বার্তা দিয়ে নতুন ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেন বাইডেন।
হোয়াইট হাউসে এডুকেশন সেক্রেটারি মিগুয়েল কার্ডোনার উপস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন নতুন ঘোষিত ছাত্রঋণ মওকুফ পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করেন। বাইডেন দাবি করেন, পূর্ববর্তী পরিকল্পনার তুলনায় নতুন পরিকল্পনাটি আইনসিদ্ধ এবং অধিকতর অর্থবহ। বহুসংখ্যক ঋণগ্রহীতাকে তড়িঘড়ি ঋণ মওকুফে কার্যকর সহায়তা প্রদানে নতুন পরিকল্পনাটি সর্বোত্তম প্রক্রিয়া বলেও বাইডেন দাবি করেন। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বকেয়া ছাত্রঋণের সমঝোতা, মওকুফ বা ঋণ থেকে মুক্তিদানের ক্ষমতা সেক্রেটারি কার্ডনাকে প্রদানের লক্ষ্যে নতুন বিকল্প পরিকল্পনার আওতায় প্রশাসন ১৯৬৫ হায়ার এডুকেশন অ্যাক্ট বাতিল করবে। বাইডেন আরও বলেন, তিন বছর ছাত্রঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ থাকার পর চলতি অক্টোবর থেকে নতুনভাবে কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা কার্যকর হতে যাচ্ছে। তাই পরিস্থিতির বাস্তবতা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেই আর্থিক চাপ প্রশমনে সহায়তার নিমিত্তে প্রশাসন অন-র্যাম্প রিপেমেন্ট প্রোগ্রাম (অতিশয় ক্ষিপ্ত পুনঃপরিশোধ কর্মসূচি) শিরোনামে ১২ মাসের জন্য একটি অস্থায়ী কর্মসূচি চালু করবে। ওই কর্মসূচির আনুকূল্যে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে খেলাপি হওয়ার সংশয়যুক্ত ঋণগ্রহীতারা যাবতীয় দুশ্চিন্তা ও শঙ্কামুক্ত থাকবেন। কারণ ক্রেডিট এজেন্সিগুলোর কিস্তি পরিশোধে অক্ষম ছাত্রঋণগ্রহীতারা কিস্তি পরিশোধের জন্য রিঅ্যাডজাস্ট বা পুনঃসমন্বয় সাধন করবেন বিধায় শিক্ষা বিভাগ এক বছরের জন্য তাদের বিষয়টি এজেন্সিগুলোকে প্রেরণ করবে না।
ঋণগ্রহীতাদের উদ্দেশে বাইডেন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একটি পথ অবরুদ্ধ হওয়ায় প্রশাসন ঋণগ্রহীতাদের সাহায্যার্থে নতুন পন্থা উদ্ভাবন করছে। ঋণগ্রহীতাদের রক্ষায় প্রশাসন সর্বাত্মক সংগ্রাম চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। ঋণগ্রহীতাদের প্রয়োজনীয় ডেট রিলিফ প্রদানের জন্য প্রশাসন স্বর্গ-মর্ত্যে বিচরণ করবে এবং সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এটি জাতীয় অর্থনীতি, দেশ এবং ঋণগ্রহীতা সবার জন্য কল্যাণকর হবে। এ ছাড়া ঋণগ্রহীতাদের মাসিক কিস্তি নিজস্ব আয়ের ১০% থেকে ৫%-এ অর্থাৎ ৫০% কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইনকাম-ড্রাইভেন রিপেমেন্ট প্ল্যানের (ব্যক্তিগত আয়ভিত্তিক পুনঃকিস্তি পরিশোধ পরিকল্পনা) মডিফিকেশন বা পুনঃসংস্কারসহ অন্যান্য ধরনের রিলিফ প্রদানেরও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। বাইডেন বলেন, ওই পরিকল্পনার আওতায় প্রত্যেক কিস্তি পরিশোধকারীর বছরে গড়ে ন্যূনতম এক হাজার ডলার সাশ্রয় হবে।