Thikana News
০৬ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪
দেবর-ভাবি বিচ্ছেদ

জাপায় এবার লড়াই লাঙ্গলের

জাপায় এবার লড়াই লাঙ্গলের
এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে গেল জাতীয় পার্টি (জাপা)। ৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে রওশন এরশাদপন্থীরা কাউন্সিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন। এতে তিন বছরের জন্য এরশাদপত্নী বেগম রওশন এরশাদ চেয়ারম্যান এবং কাজী মামুনুর রশীদ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের আগে-পরের নানান ঘটনায় দ্বন্দ্ব-সংকটে বিপর্যস্ত জাতীয় পার্টি আরেক দফা ব্র্যাকেটবন্দী হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। যদিও উভয় পক্ষই নিজেদের জাপার মূল নেতৃত্বের অংশ দাবি করে।
এদিকে এই সম্মেলনেই সংকট শেষ হচ্ছে না জাতীয় পার্টির। দেবর-ভাবির আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ হলেও এবার শুরু হয়েছে লাঙ্গল কবজায় নেওয়ার লড়াই। জাতীয় পার্টি ব্র্যাকেটবন্দী হলেও এখনো লাঙ্গলের কর্তৃত্ব আরেক অংশের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের হাতেই আছে। এ ছাড়া দলীয় কার্যালয়ও আছে জি এম কাদেরপন্থীদের কবজায়। এটি নিয়ে নতুন করে কোনো নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয় কি না, এখন তা দেখার বিষয়।
জানা যায়, দলের জাতীয় সম্মেলন শেষে জি এম কাদেরের হাত থেকে ‘লাঙ্গল’ প্রতীক ছিনিয়ে নিতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন রওশনপন্থীরা। সম্মেলনের পরই রওশন এরশাদ ঘোষণা করেন, আদালতের রায় অনুযায়ী দলীয় প্রতীক লাঙ্গল আমার। ফলে শঙ্কায় পড়েছে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ এবং প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত দল তাহলে কোনটি? তবে এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দিয়েছেন জাপার একাংশের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, আইনগতভাবে লাঙ্গল পাওয়ার সুযোগ নেই রওশন এরশাদের।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে জাপার নবম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের রেজিস্ট্রেশন জি এম কাদেরের নামে। প্রতীকের মালিকও তিনি। রওশনপন্থীদের পৃথক দল কিংবা কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে জাপার নামের চেয়ে ‘লাঙ্গল’ প্রতীক সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। মূলত দেশের উত্তরাঞ্চলসহ সবখানে লাঙ্গলের সমর্থকদের একই ছাতার নিচে আনতে বিশেষ এ গুরুত্ব দেওয়া। এ ছাড়া এর আগে জাপা পাঁচ ভাগে বিভক্ত হলেও তাদের কেউ লাঙ্গল প্রতীক পায়নি। ভিন্ন ভিন্ন প্রতীকে দল ভাগ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহারে কোনো জটিলতা হয়নি। তবে লাঙ্গল প্রতীককেই জাপার মূলধারা হিসেবে রাজনীতিতে বিবেচনা করা হয়। কারণ, দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত ধরেই একসময় লাঙ্গলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল। এই প্রতীক ধরেই জাতীয় পার্টি অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে এখনো নামমাত্র টিকে আছে।
রওশন অংশের নেতারা মনে করেন, জাতীয় পার্টি নামে কোনো দল রাজনীতিতে টিকিয়ে রাখতে হলে লাঙ্গল প্রতীকের কোনো বিকল্প নেই। তাই পৃথক জাতীয় পার্টি গঠনের চেয়ে লাঙ্গল প্রতীক পাওয়ার গুরুত্ব অনেক। এই প্রতীক পেতে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত লড়তে চান তারা। এ ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সম্মেলন শেষ করে নিজেদের প্রাথমিকভাবে সফল বলে দাবি রওশনপন্থীদের। তবে দলের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে টানাপোড়েনের বিষয়ে জি এম কাদেরের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি ও লাঙ্গল নিয়ে সবকিছু নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। এখন অন্য কেউ গিয়ে বললেই তারা লাঙ্গলের মালিক হতে পারবে না।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থায় প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দলে সংকট তৈরি হয়েছে। ভেঙেছেও বেশ কয়েকবার। এখন নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অংশের নামে চারটি দল নিবন্ধিত রয়েছে। ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর আগে জাতীয় পার্টি বারবার ভাঙলেও লাঙ্গলের নিয়ন্ত্রণ ছিল এরশাদের হাতেই। তবে এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদের ও রওশনপন্থীদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছেই। জি এম কাদেরের হাতে দলীয় নেতৃত্ব থাকলেও গত চার বছরে বেশ কিছু নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিলেন এরশাদপত্নী রওশন এরশাদ। কিন্তু তা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী না হওয়ায় সেসব মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, দলীয় প্রতীক বরাদ্দ কিংবা যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে গঠনতন্ত্রে যে কজন প্রেসিডিয়াম মেম্বারের সাপোর্ট লাগে, সেই অনুযায়ী যদি রওশনপন্থীরা তথ্য জমা দেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন তার আইন অনুযায়ী বিবেচনা করবে।

কমেন্ট বক্স